প্রেক্ষাপট পেশোয়ার, জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দেশজুড়ে সতর্কতা

পেশোয়ারে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে সংসদে দু’মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করা হল। অধিবেশনের শুরুতেই বুধবার শোকপ্রস্তাব পেশ করেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। এর পরে উঠে দাঁড়িয়ে ওই জঙ্গিহানায় হত পড়ুয়া শিশু-সহ নিরীহ নাগরিকদের আত্মার শান্তি কামনায় এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান সাংসদেরা। এ দিন লোকসভায় হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:১৩
Share:

শেষকৃত্যের আগে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করছেন পরিজনেরা। ছবি: গেটি ইমেজেস।

পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গি হামলার পরেই বুধবার দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সামনে বড়দিন। তার পরেই ইংরেজি নববর্ষ। বছর শেষে উৎসবের এই মরসুমে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দেশের সব ক’টি রাজ্যকে এই সতর্কতা বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া, আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এ দেশে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সব মিলিয়ে পেশোয়ারের ঘটনার পরে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ কেন্দ্র।

Advertisement

পাশাপাশি, সজাগ পাকিস্তানও। এ দিন তালিবানদের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়া করেছে তারা। পেশোয়ারের ঘটনার পরই পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছিল, তালিবানদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান বন্ধ করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সেই বার্তাই এ দিন ফের এক বার শুনিয়েছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। এ দিন এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই পিছু হঠবে না সেনা। ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযান চলবেই। আসিফ এ দিন দাবি করেন, শুধু উপমহাদেশের নয়, বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুড় ওয়াজিরিস্তান।

পেশোয়ারে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে এ দিন সংসদে দু’মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করা হয়। অধিবেশনের শুরুতেই এ বিষয়ে শোকপ্রস্তাব পেশ করেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। এর পরে উঠে দাঁড়িয়ে নীরবতার সঙ্গে ওই জঙ্গিহানায় নিহত পড়ুয়া শিশু-সহ নিরীহ নাগরিকদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান সাংসদেরা। এ দিন লোকসভায় হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।

Advertisement

মঙ্গলবারই পেশোয়ারের ওই হামলার তীব্র নিন্দা করেন মোদী। ওই দিন রাতে তিনি পাক প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জঙ্গি দমনে পাশে থাকার বার্তাও দেন। এ দিন সংসদে জঙ্গি হামলা বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাঠ করা হয়। শুধু পেশোয়ার নয়, সেখানে উঠে আসে সিডনির প্রসঙ্গও। কী ভাবে গোটা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী হামলায় বিধ্বস্ত, সে কথাই বলা হয় ওই নিন্দা প্রস্তাবে। ভারত যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাকিদের সঙ্গে আছে, এ দিন সে বার্তাও দেওয়া হয়। সংসদে সন্ত্রাস বিরোধী প্রস্তাব আনা হবে বলে জানান স্পিকার।

সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান প্রথম সারিতেই রয়েছে বলে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ দিন দাবি করেন। তিনি জানান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর, তার বদলা নিতে যে ভাবে নিরীহ শিশুদের প্রাণ নেওয়া হল তাতে আর পিছু হঠার প্রশ্ন নেই। তিনি বলেন, “তালিবানরা চরমপন্থী। তারা সন্ত্রাসবাদী। এই উপমহাদেশের শান্তির পক্ষে, পাকিস্তানের শান্তি এবং অস্তিত্বের পক্ষে সবচেয়ে বড় বাধা তারাই।” তালিবানি সংগঠনগুলির অনেক রকম ভাগ আছে। কোনওটিকে আলাদা না করে আসিফ সব ক’টি সংগঠনের বিরুদ্ধেই এ দিন মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, “ভাল তালিবান বা খারাপ তালিবান বলে কিছু হয় না। সব তালিবানি সংগঠনই খারাপ।”

যে স্কুলে ওই দিন এমন নারকীয় হামলা চালায় জঙ্গিরা, সেখানে সরকারি অফিসার, সেনাবাহিনীর সদস্যের ছেলেমেয়েরা ছাড়া সাধারণ নাগরিকদের ছেলেমেয়েরাও পড়ত। জঙ্গি হামলায় তাদেরও অনেকের প্রাণ গিয়েছে। আসিফ জানিয়েছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাসুল হিসেবে যে ভাবে ওই শিশুদের প্রাণ দিতে হল, তাতে গোটা দুনিয়ার বোঝা উচিত, সন্ত্রাস বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থানটা ঠিক কী! তাঁর মতে, বিশেষ করে পশ্চিমি দেশগুলির এটা বোঝার প্রয়োজন আছে।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই, বিশেষ করে তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাক সরকার এবং সে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যে কোনও বিরোধ নেই সে কথাও ওই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে সত্যিই কোনও মতপার্থক্য নেই।” আসিফের দাবি, বছর দশেক আগে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের বেশির ভাগই তালিবানদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিশেষ করে বছর তিন-চারেক ধরে সেই সহানুভূতি তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমনকী, তালিবানদের প্রতি সমর্থনও কমেছে তরতর করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন