Mithun Chakraborty

Narendra Modi’s Brigade Rally: নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকা জীবনের স্বপ্নের দিন, ব্রিগেডে বললেন মিঠুন

মিঠুনকে ‘যুবহৃদয়সম্রাট’ আখ্যা দেন শমীক ভট্টাচার্য। তৃণমূলে থাকাকালীন নানা স্মৃতি তুলে ধরেন শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১ ১৪:৩১
Share:

ব্রিগেডের মঞ্চে মিঠুন চক্রবর্তী ও নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ। নিজস্ব চিত্র

শনিবার পর্যন্ত ছিলেন ‘গ্রিনরুম’-এ। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড মঞ্চে ধুতি-পাঞ্জাবিতে ‘বাঙালিবাবু’ হয়েই আবির্ভূত হলেন মিঠুন চক্রবর্তী। মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ করে নেওয়াকে ‘জীবনের স্বপ্নের দিন’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন মিঠুন। সেইসঙ্গে ওই মঞ্চ থেকেই নিজের ছায়াছবির নাটকীয় সংলাপকে বিজেপি-র নতুন স্লোগান হিসাবেও তুলে ধরেছেন তিনি। মিঠুন বলেন, ‘‘আমি জলঢোঁড়াও নই, বেলেবোড়াও নই। আমি জাত গোখরো, এক ছোবলে ছবি।’ মিঠুন যখন বলছেন তখনও মঞ্চে উপস্থিত হননি মোদী। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ এখানে বাংলার ছেলে মিঠুন চক্রবর্তী আছেন। ওঁর জীবনকাহিনি, সংঘর্ষ এবং সাফল্য চমকপ্রদ।’’

Advertisement

রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে মিঠুনের ভাষণের আগাগোড়া ছিল নাটকীয়। তাঁকে দেখে চিৎকার করতে শুরু করেন উচ্ছ্বসিত বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তা শুনে মিঠুন বলেন, ‘‘থোড়া খামোশ হো যাও, বোলনে তো দো।’’ অর্থাৎ, একটু চুপ করুন, আমাকে বলতে দিন। মিঠুনের বার্তায় শ্রোতারা চুপ করে যান। এর পর নিজের উত্থানের ইতিহাস টেনে এনে আবেগে ঘা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বলেন, ‘‘আজকের দিনটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। আমি আসছি, এমন একটা জায়গা থেকে যার দু’দিকটাই অন্ধ। আমি যেখানে থাকতাম, সেই জায়গার ঠিকানা লিখতে হতো— জোড়াবাগান থানার পিছনে। কিন্তু সে দিন স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমি জীবনে কিছু করব। কিন্তু এই স্বপ্নটা দেখিনি যে, এই মঞ্চে, যেখানে দেশের বড়বড় নেতা রয়েছেন, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আসছেন, সেখানে আমি উপস্থিত থাকব। এটা স্বপ্ন নয়তো কী?’’

রাজনাীতিতে প্রত্যাবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মিঠুন বলেন, ‘‘আরও একটা স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম যে, আমি গরিবদের জন্য কিছু করব। আজ মনে হচ্ছে, কোথাও যেন সেই স্বপ্নটা দেখতে পাচ্ছি। এটা হবেই। কারণ স্বপ্ন শুধু দেখার জন্য নয়। তা সফল হওয়ার জন্যই আসে। কেউ যদি হৃদয় দিয়ে স্বপ্ন দেখে তবে তা সফল হবেই।’’ নিজেকে ‘গর্বিত বাঙালি’ হিসাবে তুলে ধরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাংলায় যাঁরা থাকেন তাঁদের সকলকেই আমি বাঙালি বলে মনে করি।’’ এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, রানি রাসমণি আসল বাঙালি। যারা মানুষের হক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে, সেখানে আমাদের মতো কিছু লোক বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।’’ মিঠুনকে কাছে পেয়ে তাঁর ছবির বিখ্যাত সংলাপ শুনতে চান অনেকেই। তা বুঝতে পেরে তিনি বলেন, ‘‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে, এই ডায়লগটা চলবে। কিন্তু আমার প্রচার শুরু করার আগে, একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। সকলের ভাষণ এক জায়গায় করলে যা দাঁড়ায় তা হল, ‘আমি জলঢোঁড়াও নই, বেলেবোড়াও নই। আমি জাত গোখরো। এক ছোবলে ছবি।’ এ বার এটাই হবে।’’

Advertisement

‘মহাগুরু’কে ঘিরে বিজেপি-র রবিবাসরীয় ব্রিগেড মঞ্চ হয়ে উঠেছিল আক্ষরিক অর্থেই তারকাখচিত এবং নজরকাড়া। রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে মিঠুনের উপস্থিতি গেরুয়াশিবিরের বক্তাদেরও ‘উৎসাহ’ জোগায়। তাঁকে ‘যুবহৃদয়সম্রাট’ আখ্যা দেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। আবার তৃণমূলে থাকাকালীন কী ভাবে প্রচার চালাতেন, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সামনে সেই ‘স্মৃতি’তেও টান দেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

গত কয়েক দিন ধরেই জল্পনা শুরু হয়েছিল বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন মিঠুন। শনিবার জল্পনার সেই ছায়া পাকাপাকি ভাবে অবয়ব ধারণ করে। শনিবার রাতে কলকাতার বেলগাছিয়ার বাড়িতে পৌঁছন মিঠুন। রাতেই তাঁর বাড়িতে যান বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধরে আলাপচারিতাও হয়। দু’জনের সাক্ষাতের সেই ছবি টুইট করেন কৈলাস। এর পর ‘ডিস্কো ড্যান্সার’-এর ব্রিগেডের মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার বার্তা শনিবার মধ্যরাতেই দিকে দিকে ‘রটে’ যায়।

রবিবার বেলা ১১টা ৫০ নাগাদ বেলগাছিয়ার বাড়িতে থেকে ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা দেন মিঠুন। কিন্তু সমাবেশে পৌঁছনর পথে ব্রিগেডমুখী জনতা এবং ভক্তরা একাধিক বার মিঠুনের গাড়ি ঘিরে ধরেন। তাঁর গাড়ি থমকে যায় বৌবাজারে। অনেকে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মিনিট দশেক আটকে যায় মিঠুনের গাড়ি। ভক্তদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনেতা বলেন, তাঁর গাড়ি ছেড়ে দিতে। কিন্তু জনতা তখন সে কথা শুনতে নারাজ। মিনিট দশেক আটকে যায় তাঁর গাড়ি। অগত্যা মিঠুনের গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১২টা ২৫-এ ব্রিগেডের মঞ্চে পৌঁছন তিনি। মিঠুনকে মঞ্চে স্বাগত জানান কৈলাস। ওই মঞ্চেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দেন তিনি। এর পর দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মিঠুনের হাতে তুলে দেন দলীয় পতাকা। দিলীপ এবং কৈলাস তাঁকে পরিয়ে দেন উত্তরীয়। একদা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদের গেরুয়া শিবিরে যোগদান আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন হয়। সেই সূত্রে সক্রিয় রাজনীতিতে মিঠুনের ‘প্রত্যাবর্তন’ও ঘটল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন