West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ভয় তাড়িয়ে ভোটের লাইনে

মেছোভেড়ি, কৃষিজমি ঘেরা গ্রামে সকাল থেকেই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৩৫
Share:

বুথমুখী: দেগঙ্গার একটি বুথে মাস্ক পরে ভোট দিচ্ছেন মহিলারা। সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

বছর তিনেক আগে পঞ্চায়েত ভোটের দিন প্রবল গোলমাল বেধেছিল গ্রামে। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হন দুখেরাম পাড়ুই। প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই আতঙ্কের স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় দেগঙ্গার ঘোষালের আবাদ গ্রামের বাসিন্দা দুখেরামকে।

Advertisement

তবে এ বার ভোট দিয়ে খুশি তিনি। শনিবার দুখে জানালেন, এ বার পরিবেশ একেবারে আলাদা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারিতে শান্তিতে ভোট হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে এই নিরাপত্তা থাকলে শরীরে গুলির ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকতে হত না!’’

২০১৮ সালের ১৪ মে এই এলাকায় পঞ্চায়েত ভোট ছিল। দুখের বাড়ির কাছেই ভোটকেন্দ্র। দিনমজুর দুখে সকালে ঘুম থেকে উঠে সবে বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। আচমকা গ্রামে গুরু হয় বোমা-গুলির লড়াই। গুলি এসে লাগে দুখের পেটে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। প্রাণে বেঁচে যান। তবে গুলির ক্ষত আছে শরীরে।

Advertisement

এ দিন সকাল সকাল ঘোষালের আবাদ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভোট দিয়েছেন বছর ষাটের দুখেরাম। সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘প্রাণে বেঁচে ফিরব সেই আশা ছিল না। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়েছিলাম। বহিরাগত দুষ্কৃতীরা গ্রামে বোমা-গুলি ছুড়ছিল। পেটে কয়েকটি গুলি এসে লেগেছিল। তারপরে আর কিছু মনে ছিল না। তবে এ বার শান্তিতে ভোট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে গ্রামে উৎসবের পরিবেশ। যে কোনও ভোটেই এ রকম নিরাপত্তাই থাকা উচিত।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন দেগঙ্গা থানার ঘোষালের আবাদ এলাকায় বুথের সামনে নির্দল, সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে বোমাবাজি ও গুলির লড়াই হয়। জখম হন অনেকেই। অভিযোগ, সব পক্ষই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসেছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, জখমদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। গোপনে নদীপথে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে তাদের চিকিৎসা করানো হয়। সেই তাণ্ডবে বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। পরে ফের ভোট নেওয়া হয়। সেই ভোটগ্রহণের দিন দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এলাকা। বিধানসভা ভোট আসতেই তাই চাপা আতঙ্ক ছিল মানুষের মনে। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, একদা ‘সিপিএমের দুর্গ’ বলে পরিচিত এই অঞ্চলে চারদিকে উড়ছে তৃণমূল এবং বিজেপির পতাকা। মেছোভেড়ি, কৃষিজমি ঘেরা এই গ্রামে সকাল থেকেই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন গ্রামবাসীরা। শঙ্কর পাড়ুই নামে যুবক বলেন, “ভোটের আগে এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিয়েছে। তখন থেকে ভরসা পেয়েছি। আশঙ্কা থাকলেও এ দিন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছি।’’ বৃদ্ধা জোহরা বিবি তিন বছরের নাতনিকে নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারিনি। কিন্তু এ বার ছবিটা একেবারে আলাদা।’’ পরিতোষ পাড়ুই, বিষ্টু পাড়ুইরাও জানান, এ বার ভোটে উৎসবের পরিবেশ। এটাই তো এত দিন ধরে চেয়েছিলেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement