West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ভগ্ন হৃদয়, শূন্য ঘর রাজকুমারের

ভোটের বাদ্যি বেজে উঠেছে। সরগরম ঘর, বসত। তার মধ্যে কী করছেন ওঁরা?

Advertisement

নীতেশ বর্মণ, গৌর আচার্য 

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১ ০৬:৩০
Share:

স্মৃতি: বাড়ির চত্বরেই রাজকুমারের সমাধি। নিজস্ব চিত্র।

ভোটের বাদ্যি বেজে উঠেছে। সরগরম ঘর, বসত। তার মধ্যে কী করছেন ওঁরা?

Advertisement

বাড়ির পাশে একদিকে ছোট মন্দিরটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ওটাই ছেলের সমাধি।’’ ছেলের কথা মনে পড়লে ওই সমাধির কাছে যান। মনকে সান্ত্বনা দিলেও মেনে নিতে পারেন না। ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘যদি নিরাপত্তা ঠিক থাকত, ছেলেটাকে কি আর ও-ভাবে মরতে হত?’’ উঠোনে চেয়ার পাতা। ক্লান্ত শরীর তাতে এলিয়ে দেন প্রিয়নাথ রায়।

Advertisement

তিন বছর আগে রহস্যজনক ভাবে মারা যান প্রিয়নাথবাবুর বড় ছেলে, পেশায় শিক্ষক রাজকুমার রায়। ২০১৮ সালের সেই পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল রাজ্য পুলিশের পাহারায়। এ বার প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে এসেছে। ফাঁসিদেওয়াতেও বাহিনী টহল দিয়েছে। রাজ্যে মারপিট, গুলি, বোমা কি বন্ধ হয়েছে— প্রশ্ন প্রিয়নাথবাবুর। তিনি এর জন্য সরকারকেই দায়ী করেন। বলেন, ‘‘এই যে এত বাহিনী, পুলিশ, সবই কি লোক দেখানো? নির্বাচনকে খুন, জখমহীন করা যায় না কেন?’’

ভোটের আবহে রাস্তার মোড়, বাজারে বিভিন্ন দলের পতাকায় ছয়লাপ। কিন্তু শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের করণগছ এলাকার রায়বাড়িতে সে সব ঢুকতে পারে না এখনও। রাজকুমারের বৃদ্ধ বাবা-মা এখনও রয়েছেন এই বাড়িতে। আছেন তাঁর ছোট ভাই ও তাঁদের পরিবার। পড়শিদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘রাজকুমারের ঘটনার পর থেকে ভোট এলেই এই বাড়িতে আঁধার নেমে আসে।’’

২০১৮ সালের ১৪ মে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ভোট চলাকালীন ইটাহার ব্লকের সোনারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়। তিনি ছিলেন করণদিঘির রহটপুর হাই মাদ্রাসার শিক্ষক। স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে থাকতেন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকায়। ঘটনার পরদিন রাতে রায়গঞ্জের সোনাডাঙ্গি এলাকার রেললাইন থেকে তাঁর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। রাজকুমারকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ তুলে ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার ও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে ‘রাজকুমার রায় হত্যার বিচার চাই’ মঞ্চ গড়ে তুলে আন্দোলনে নামেন জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। পাশাপাশি, রাজকুমারের পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরবর্তী তদন্তে যদি কাজে লাগে, তাই দেহ তাঁদের ফাঁসিদেওয়ার বাড়িতে সমাহিত করে রাখা হয়।

এখন সেই সিবিআই তদন্তে দাবি আর আশাও যেন প্রিয়নাথবাবুর বাড়িতে নিভু নিভু। তাঁর বয়স হয়েছে। এখন আর এই নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে মন চায় না তাঁর। নীরব উঠোনে বসে এ সব কথা শুনতে শুনতে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে শূন্যে তাকিয়ে থাকেন প্রিয়নাথ।

রাজকুমারের স্ত্রী অর্পিতা চাকরি পেয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের দফতরে। রাজ্যের তরফে ৫ লক্ষ টাকা এবং রাজ্যের সুপারিশ মেনে গত বছরের নভেম্বরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন অর্পিতাকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়।

কিন্তু এই ক্ষতিপূরণই কি শেষ কথা? অর্পিতা বলেন, “আমি দীর্ঘদিন আগেই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” প্রিয়নাথবাবুর বলেন, ‘‘ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে কোনও বাবার কোল যেন আর খালি না হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement