BJP

Bengal polls: ধ্বস্ত অর্থনীতি সামাল দিতেই কি অর্থনীতিবিদ অশোককে ভোটপ্রার্থী করে আনল বিজেপি

প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী অশোক রাজনৈতিক মহলে খুব একটা পরিচিত নাম নন। এমনকি, তাঁকে কেমন দেখতে, ,তা-ও খুব একটা কেউ জানেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৫
Share:

অশোক লাহিড়ি

উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে বিজেপি-র প্রার্থী অশোক লাহিড়ি কে? এবং কেন? রবিবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর থেকে এমন প্রশ্ন ঘুরছে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরমহলে। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলেও বটে। কারণ, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী অশোক রাজনৈতিক মহলে খুব একটা পরিচিত নাম নন। এমনকি, তাঁকে কেমন দেখতে, তা-ও খুব একটা কেউ জানেন না।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার আসনে অশোকের নাম প্রার্থী হিসেবে করার পর এলাকায় স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের মৃদু বিক্ষোভও হয়েছে। অশোকের পেশাগত পরিচয় জানলে তাঁরা সম্ভবত সেই বিক্ষোভ করতেন না। কারণ, অশোকের কর্মজীবন বলছে, তিনি ভারত সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ছিলেন বন্ধন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (যা পদমর্যাদায় কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রীর সমতুল)। তা ছাড়াও অশোক ছিলেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্‌থ অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর। একসময়ে ছিলেন দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের ‘রিডার’। ছিলেন বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শদাতা এবং আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)-এর সিনিয়র ইকনমিস্ট। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান।

অর্থাৎ, দায়িত্ব পালনের নিরিখে অশোক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বা অর্থনীতিবিদ এম কে জালানের সমকক্ষ। যে আলিপুরদুয়ার আসনে অশোককে প্রার্থী করেছে বিজেপি, সেটিতে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে ৩৭,০০০ ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ভোট পেয়েছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। যদিও ওই আসনে ২০১৬ সালে বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে। জিতেছিল তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। জয়ী তৃণমূলের থেকে বিজেপি-র ব্যবধান ছিল ৬৯,০০০ ভোটের। ২০১৬ সালে ওই আসনে বিজেপি ভোট পেয়েছিল টেনেটুনে ১০ শতাংশ। সেই নিরিখে আলিপুরদুয়ার বিজেপি-র কাছে ‘খারাপ’। কিন্তু ২০১৯ সালের নিরিখে ওই আসন বিজেপি-র স্থানীয় নেতাদের কথায় ‘মাখন সিট’। অর্থাৎ, মাখনের মতো মসৃণ। সম্ভবত সেই কারণেই রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষনেতা বলেছেন, ‘‘এ তো বিরাট কোহলীকে পাড়ার ক্রিকেটে ব্যাট করতে পাঠানো!’’ কিন্তু পাশাপাশিই তিনি বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে কোহলী ছাড়া উপায়ও নেই।’’

Advertisement

বাংলার অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। তার দায় বাম এবং তৃণমূল আমলের শাসকদের একের পর এক ‘দুর্বল’ অর্থনীতিককে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী করা বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। রাজ্যে ক্ষমতাদখল করে বিজেপি নেতৃত্ব যে বাংলার অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে চান, তা একাধিকবার প্রকাশ্যে এবং দলের অন্দরে আলোচনায় জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা মনে করেন, দেশের পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যের অর্থনীতিকে যথেষ্ট মজবুত না করা গেলে ভবিষ্যতে তার প্রভাব গোটা দেশের অর্থনীতির উপর পড়বে। বিজেপি দেশের শাসনক্ষমতায় এসে যে ‘লুক ইস্ট পলিসি’ (পুবে তাকাও নীতি) নিয়েছে, তার ভরকেন্দ্রই হল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু তারা মনে করে, দশকের পর দশক ধরে রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কোনও চেষ্টাই বিভিন্ন সরকারের তরফে নেওয়া হয়নি। অশোক মিত্র, অসীম দাশগুপ্ত বা অমিত মিত্র— কেউই সে ভাবে রাজ্যের অর্থনীতিকে মজতুব না করে ‘জনমোহিনী’ রাজনীতির কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন। যার ফলে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রাজ্যের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের অর্থনীতি। রাজ্যে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। সে ভাবে কোনও ভারী শিল্প গড়ে ওঠেনি। রাজ্যে কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়েছে। বেকার বেড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানও সে ভাবে তৈরি হয়নি।

বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব মনে করেন, সেই পরিস্থিতি থেকে রাজ্যকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে গেলে জোরাল অর্থমন্ত্রীর প্রয়োজন। যাঁর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক স্তরে কাজ করার মূলধনও। সেই সব গুণগুলিই অর্থনীতিবিদ অশোকের মধ্যে বিদ্যমান। সে কারণেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, অশোককে কি রাজ্যের হবু অর্থমন্ত্রী হিসেবেই ভোটের লড়াইয়ে নিয়ে এল বিজেপি? নীলবাড়ির ক্ষমতা দখল করতে পারলে যাঁর হাতে দেওয়া হবে রাজ্যের ধ্বস্ত অর্থনীতিকে সামলে তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর গুরুদায়িত্ব। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপি-র কেউই এই বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ। কিন্তু ঠারেঠওরে তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, এত বড়মাপের অর্থনীতিবিদকে কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছাড়া ভোটের ময়দানে প্রার্থী করে নিয়ে আসা হয়নি। দলের এক রাজ্যনেতার কথায়, ‘‘আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের কিছুই বলা হয়নি। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে, রবিবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণার সময় অশোকের নামটিই সর্বাগ্রে ঘোষণা করেছিল বিজেপি। ঘোষণার সময় বারবার বলা হয়েছে, তিনি খুব ব়ড়মাপের অর্থনীতিবিদ। যা থেকেও স্পষ্ট যে, এই প্রথম ভোটের লড়াইয়ের সম্মুখীন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন ছাত্রকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। এখন দেখার, আলিপুরদুয়ারে ‘অশোক-চক্র’ কাজ করে কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন