কামারহাটির ভোট শেষ। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকা ভবানীপুরে নিজের প্রভাব খাটাতে চাইছেন বলে অভিযোগ তুলল বিরোধী শিবির। তাদের বক্তব্য, নেত্রীর কেন্দ্রের ভোটে প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্য নিয়েই মদনবাবু ওই এলাকার হাসপাতাল এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছেন।
শুধু অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হননি বিরোধীরা। সিপিএম এবং কংগ্রেসের দাবি, এসএসকেএমে মদনবাবুর কেবিনে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করুক নির্বাচন কমিশন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিরোধী শিবিরের অভিযোগের পরেই কমিশনের নির্দেশে মদনবাবুর কেবিনে ক্লোজ্ড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদিও কমিশনের তরফে এ ব্যাপারে কোনও কর্তাই মুখ খুলতে চাননি। মন্তব্যে নারাজ এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষও।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে মদনবাবু এসএসকেএম-কে কার্যত ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন বলে বিরোধীদের কটাক্ষ করে আসছেন। বন্দিদশায় অনেকটা সময়ই তিনি কাটিয়েছেন পিজি-র উডবার্ন ওয়ার্ডে। এ বার নিজের কেন্দ্র কামারহাটিতে ভোটের (গত সোমবার) আগের দিন, রবিবারেও তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানোর বন্দোবস্ত পাকা হয়ে গিয়েছিল। বিরোধী শিবির কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পরে সে-যাত্রা তাঁকে আর পিজিতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বিরোধীদের দাবি ছিল, মদন মিত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে তাঁর নাগালে যাতে কোনও ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ না-থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হোক। আর তাঁকে ভর্তি করানো হোক আধাসেনার প্রহরায়।
ভোটের আগের দিন মদনবাবুকে আর পিজিতে ভর্তি করানো হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি ভর্তি হন ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে। ভবানীপুরে মমতার বিরুদ্ধে জোট-প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন, মদন মিত্র আদতে ভবানীপুরেরই বাসিন্দা। জেলের থেকে হাসপাতালে বসে তাঁর পক্ষে ভোট নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। সেই জন্যই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রভাব খাটাতে এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছেন তিনি। একই অভিযোগ সিপিএমেরও। ওই দলের নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘আমরা আগেই মদন মিত্রের কেবিনে সিসি ক্যামেরার নজরদারির দাবি জানিয়েছি। কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’’
বুধবার রাতেই এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগে মদনবাবুর এসি-১ নম্বর কেবিনে কড়া পুলিশি নজরদারির বন্দোবস্ত হয়েছে। পুলিশ আছে কার্ডিওলডি বিল্ডিংয়ে ঢোকার মুখেও। এ দিনও সকাল হাসপাতাল-চত্বরে মদনবাবুর বাড়ির লোকজন ও অনুগামীর ভিড় ছিল। তবে হাসপাতাল সূত্রের দাবি, প্রাক্তন মন্ত্রীর পারিবারিক সদস্য ছাড়া কাউকেই ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, বুধবার রাতে আচমকাই বুকে ব্যথা বাড়তে থাকে মদনবাবুর। তড়িঘড়ি ডাক্তারেরা আসেন। ফের ইসিজি হয়। মাঝরাতের পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। বৃহস্পতিবার সকালেও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা তাঁকে পরীক্ষা করেছেন। এ দিন এক জন মনোরোগ চিকিৎসকও তাঁকে পরীক্ষা করেন। টানা কয়েক দিনের অনিদ্রা এবং উদ্বেগ তাঁকে আরও কাহিল করে ফেলেছে বলে ডাক্তারদের অভিমত।