Entertainment News

‘কৃষ্ণকলি’ নাকি ‘রাসমণি’, টিআরপিতে এগিয়ে কে?

‘কৃষ্ণকলি’ এবং ‘করুণাময়ী রানী রাসমণি’ এই দুই ধারাবাহিক টিআরপি তালিকার শীর্ষে থাকার কারণ কী? দর্শক কেনই বা পছন্দ করেন ধারাবাহিক দুটি? খোঁজ নিলেন মৌসুমি বিলকিস শেষ সপ্তাহের টিআরপি তালিকায় ‘কৃষ্ণকলি’ ছিল প্রথম স্থানে। ধারাবাহিকের নায়িকা শ্যামা ওরফে তিয়াশা কী বলছেন? ‘‘ক্লাসে যেমন একশোয় একশো পেলে ভাল লাগে, এখানেও আমি খুশি।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ১৮:১২
Share:

শ্যামা এবং রাসমণি।

প্রতি সপ্তাহে ধারাবাহিকগুলির মধ্যে দর্শক-প্রিয় হওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। টিআরপি রেটিং বুঝিয়ে দেয় দর্শকদের পছন্দের তালিকায় কোন ধারাবাহিক এগিয়ে, কোনটাই বা পিছিয়ে। রেটিং নির্ভর করে ঠিক হয় ধারাবাহিকগুলির আগামী দিনের অস্তিত্ব। কোনওটা টিকে থাকে, কোনওটা যায় হারিয়ে, কোনওটা হারিয়ে যেতে যেতেও ঘুরে দাঁড়ায়। ‘কৃষ্ণকলি’ এবং ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ অনেকদিন ধরেই টিআরপি তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিচ্ছে।

Advertisement

শেষ সপ্তাহের টিআরপি তালিকায় ‘কৃষ্ণকলি’ ছিল প্রথম স্থানে। ধারাবাহিকের নায়িকা শ্যামা ওরফে তিয়াশা কী বলছেন? ‘‘ক্লাসে যেমন একশোয় একশো পেলে ভাল লাগে, এখানেও আমি খুশি।’’

‘রানি রাসমণি’ ওরফে দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে আপনার দেখা হয়? ‘‘একসঙ্গে কোনও শো থাকলে দেখা হয়। তখন হয়তো সারা রাত একসঙ্গে থাকলাম... প্রচুর গল্প করি, মজা করি... ।’’ প্রতিযোগিতা আছে? তিনি বললেন, ‘‘প্রতিযোগিতা বলতে...(একটু ভেবে) সবারই তো মনে হয় আমি ফার্স্ট হব... সেটা আছে। সেটা থাকলেও দিতিপ্রিয়াকে টপকে যাব, এমন ঠিক ভাবি না। ভাল কাজ করবো সেটাই মাথায় থাকে।’’

Advertisement

আরও দেখুন, টেলিভিশনে রানি রাসমনি

দিতিপ্রিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হল, তিয়াশার সঙ্গে প্রতিযোগিতা আছে? তিনি সাফ বললেন, ‘‘ওরকমভাবে প্রতিযোগিতা তো হয় না। আমরা সবাই সবার জায়গায় দাঁড়িয়ে যতটা বেস্ট দেব সেটাই টিআরপি রেটিং-এ রিফ্লেক্ট করবে। তিয়াশার সঙ্গে চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়, কথা হয়। আমাদের খুব ভাল সম্পর্ক।’’

‘করুণাময়ী রানী রাসমণি’ এত সফল কেন? দিতিপ্রিয়া বললেন, ‘‘দর্শক ‘রাসমণি’ পছন্দ করছেন তার প্রধাণ কারণ হল গল্প। শিবাশিস আঙ্কল (গবেষক), রাখি আন্টি (লেখক), অঞ্জন আঙ্কল (লেখক) এবং আমাদের পরিচালক- এই চারজনের অবদানকে আমি প্রথমে রাখব।’’


শেষ সপ্তাহের টিআরপি তালিকায় ‘কৃষ্ণকলি’ ছিল প্রথম স্থানে।

‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের অন্যতম অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘এটা একটা অন্যরকম গল্প। এক সময় শাশুড়ি-বউ এর ঝগড়া ধারাবাহিকে খুব চলেছে। এখন অলৌকিক সিরিয়াল চলছে। এর মাঝখানে এই গল্পটা কিন্তু অন্যরকম। এটা টিআরপি রেটিং-এর প্রথম দিকে থাকার প্রধাণ কারণ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে কীর্তন গান। একটু বেশি বয়স যাঁদের তাঁরাই মূলত টেলিভিশন দেখেন। তাঁরা কীর্তন পছন্দ করছেন। তৃতীয় কারণ, তিয়াশা প্রথম অভিনয় করছে, কিন্তু ওর চরিত্রটা খুব ভালো লেগে গেছে দর্শকদের। আমার চরিত্রটাও এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ, যে সারাক্ষণ শ্যামাকে সাপোর্ট করে। এই বিষয়গুলোই ‘কৃষ্ণকলি’-কে জনপ্রিয় করেছে।’’

আরও পড়ুন, অস্কার জিতল মেনস্ট্রুয়েশন নিয়ে তৈরি ভারতীয় তথ্যচিত্র

‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের প্রযোজক ও গল্পকার সুশান্ত দাস জানালেন, ‘‘গায়ের রঙ কালো ও ফরসা- এটা নিয়ে এখনও আমাদের সোসাইটিতে ইস্যু হয়। কালো বউকে পুড়িয়ে মেরে দেওয়া হয়েছে এরকম ঘটনা কিছুদিন আগেও ঘটেছে। টেকনোলজির এত রমরমার যুগেও কালো মেয়েদের হ্যারাস করা সমানে চলছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘কৃষ্ণকলি’-র কালো মেয়ের জার্নি, যার বিয়ে হচ্ছিল না গায়ের রঙের জন্য, ঘটনাচক্রে বিয়ে হয়- সে সমস্ত কালো মেয়েদের হয়ে নিজের লড়াই লড়ে নিচ্ছে। মানুষ হয়তো এই লড়াইটা দেখতে চেয়েছে, তার সঙ্গে রিলেট করতে পেরেছে। এটাই ‘কৃষ্ণকলি’-র বড় সাফল্যের জায়গা।’’

আরও পড়ুন, আলি ফজলের নগ্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস!

‘করুণাময়ী রানী রাসমণি’-র গবেষক শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবাহিকের সাফল্যের কারণ খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করলেন। তিনি বললেন, ‘‘রাসমণির মতো ফিমেল প্রোটাগনিস্টকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও সিরিয়াল হয়নি। অসামান্য নারী চরিত্র নিয়ে সিরিয়াল হয়েছে, যেমন সুবর্ণলতা। কিন্তু আমাদেরই সমাজ থেকে উঠে আসা এক মহিলা যিনি আসলে অন্তজ শ্রেণির, গ্রামের প্রায় অশিক্ষিত এক পরিবার থেকে উঠে আসা বালিকা বধূ, তাঁর জীবনের স্ট্রাগলের গল্প, প্লাস একটা স্বপ্ন পূরণের গল্প। এক চাষির মেয়ে, ঘরামির মেয়ে রাজরানি হল। রাসমণির এই গল্পটা কিন্তু কেউ জানত না। গল্পটা কমপ্লিটলি ঐতিহাসিক, এতটুকু তথ্য বিকৃতি নেই। গল্পটা মানুষের কাছে নতুন। দিতিপ্রিয়ার অবদান এই সিরিয়ালে ভোলার নয়।’’


‘করুণাময়ী রানী রাসমণি’র দৃশ্য।

মুর্শিদাবাদ জেলার এক দর্শক রাবিয়া খাতুন (৫৫) ‘করুণাময়ী রানী রাসমণি’ ধারাবাহিক দেখেন নিয়মিত। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হল, কেন দেখেন এই ধারাবাহিক? তিনি বললেন, ‘‘রাসমণি এইটুকু এক মেয়ে, অথচ তাঁর কাজকর্ম দেখলে চমকে যেতে হয়। ওর কাজকর্ম দেখে নিজেদের জীবনেও প্রেরণা পাওয়া যায়।’’

কলকাতার গৃহবধূ ঝর্না দাস (৫০) দুটি ধারাবাহিকই দেখেন নিয়মিত। একই প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ‘‘রাসমণি দেখে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারি। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অনেক কিছু জানা যায়। আর ‘কৃষ্ণকলি’-র শ্যামার মতো আমিও তো কালো। ওর মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই। এইজন্যই দেখি।’’

এই দুই ধারাবাহিক জনপ্রিয়তা সঙ্গে নিয়ে আরও এগিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন টলি পাড়ার সদস্যরাও।

(টলিউডের প্রেম, টলিউডের বক্স অফিস, বাংলা সিরিয়ালের মা-বউমার তরজা -বিনোদনের সব খবর আমাদের বিনোদন বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন