Stray dogs in Delhi

‘পথকুকুরদের নিয়ে এই সিদ্ধান্ত মানবিকতার উপর একটা চড়’, রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন তথাগত?

এই রায়ের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। তথাগতও জানান, এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৭
Share:

পথকুকুরদের নিয়ে মুখ খুললেন তথাগত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দিল্লির রাস্তা থেকে কুকুরদের সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে আশ্রয়স্থলে। এমনই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই সিদ্ধান্ত কতটা সঙ্গত তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠছে। সমাজমাধ্যমে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন পশুপ্রেমীরা। পথেও নেমেছেন তাঁরা। অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় পশুদের অধিকারের জন্য কাজ করেন। এ বার তিনিও মুখ খুললেন এই বিষয়ে।

Advertisement

প্রথমেই একটি কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তথাগত। তিনি বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের একটি আইন ছিল। সেই আইন অনুযায়ী, পথকুকুরদের স্থানান্তরিত করা যাবে না। পথকুকুরদের যাঁরা রাস্তায় খেতে দেন, তাঁদের বাধা দেওয়া যাবে না। কেউ বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে। আমাদের রাজ্যেও যাঁরা কুকুরকে খাওয়ান, তাঁদের বাধা দিলে আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিই।”

এর পরেই শীর্ষ আদালতের রায়ের প্রসঙ্গে চলে আসেন অভিনেতা তথা পশুপ্রেমী। এই বিষয়ে প্রত্যেকের সরব হওয়া উচিত বলেও দাবি করেছেন তিনি। একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে তথাগত বলেছেন, “আগের আইনটিকে টপকে গিয়ে এই নতুন রায় দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র দিল্লির জন্য। অন্য কোনও এলাকার জন্য এই রায় প্রযোজ্য নয়। ভারতের অন্য জায়গায় কিন্তু আগের আইনই জারি রয়েছে— পথকুকুরদের স্থানান্তরিত করা যাবে না।”

Advertisement

এই রায়ের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। তথাগতও জানান, এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই তিনি মনে করছেন। অভিনেতার কথায়, “পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট সুয়ো মোটো, অর্থাৎ স্বতঃপ্রণোদিত মামলার দায়িত্ব নিয়ে নিজেরাই রায় দিয়েছে। এর পরে যখন কুকুরগুলিকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হবে, তখন কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। এটা তো আসলে ভয় দেখানো। মানুষ যাতে প্রতিবাদ না করে মেনে নেয়, সেই জন্য এটা করা হচ্ছে।”

ভবিষ্যতে নিজেদের রাজ্যেও এমন আইনের প্রয়োগ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তথাগত। অভিনেতা বলেছেন, “এই মুহূর্তে দেশের বার্ষিক আয় কোথায় দাঁড়িয়ে, সবাইকে কত টাকার কর গুনতে হয়, তা আর মনে করাতে হবে না। সেখানে পথঘাট পরিষ্কার করাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, পথকুকুরগুলিকে আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ওদের এত দিনে টিকাকরণ ও নির্বীজকরণ হল না। অথচ, সেই লক্ষ লক্ষ পথকুকুরের আশ্রয়স্থল রাতারাতি তৈরি হয়ে যাবে, বিশ্বাস করতে পারছেন না তথাগত। তাঁর কথায়, “এটা কল্পকাহিনীর মতো। আসল উদ্দেশ্য হল, পথকুকুরগুলির ভবিষ্যৎ। বিদেশিরা এসে যাতে পরিষ্কার রাস্তা দেখতে পান, তাই এটা করা হল। কিন্তু মানুষেরাই থুতু ফেলে বা প্রস্রাব করে রাস্তা নোংরা করে।”

কেরলেও এমন পশুদের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল। তার পরে সেই রাজ্যে বন্যার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তথাগত। অভিনেতার কথায়, “এই রায় মানবিকতার উপর একটি চড়। এই চড় অনেক দিন ধরেই আমাদের মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুন বা ধর্ষণের শাস্তি হয় না, অন্যায়ের বিচার হয় না। আরও এক বার বুঝিয়ে দেওয়া হল, ক্ষমতাহীন মানুষ কতটা পঙ্গু ও অসহায়।”

সমাজমাধ্যমে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ভুয়ো তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন তথাগত। “বহু জায়গায় বলা হচ্ছে ১০ লক্ষ মেল করুন, তা হলে এই রায় স্থগিত হবে। অনেকেই মেল করে ভাবছেন, সমাধান হতে পারে। কিন্তু এগুলোতে কিচ্ছু হয় না। ক্ষমতায় থাকলেই যেন যা খুশি করা যাচ্ছে।” বলেন তথাগত।

তথাগত আরও বলেন, “আজ পথকুকুরদের সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। কাল অন্য প্রাণীদের সরিয়ে ফেলা হবে অসুবিধা হলেই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, আমরা শুধু মানুষেরা। হতেই পারে, বাড়ি থেকে পোষ্য তুলে নিয়ে যাওয়ার আইনও তৈরি হয়ে গেল। যাদের বাড়িতে কোনও প্রাণী নেই, তাদের অবশ্য তাতে কিছুই যাবে আসবে না।” প্রকাশ্যে এসে এবং পথে নেমে প্রতিবাদ করার ডাক দিয়েছেন তথাগত। সব শেষে তিনি বলেন, “প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করেনি। প্রকৃতির সন্তানের উপরে কেউ অত্যাচার করলে, প্রকৃতিই ক্ষমা করবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement