কলকাতায় ‘সইয়ারা’র কারণে আদৌ লক্ষ্মীলাভের মুখ দেখলেন হল মালিকরা! গ্রাফিক- সনৎ সিংহ।
যুগটাই যেন সমাজমাধ্যমের। কেনাকাটা থেকে সিনেমা দেখা, আনাজ কেনা, সবই যেন অনলাইনে। আমাদের যাপনে সমাজমাধ্যম ক্রমশ যেন অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠছে। গত ১৮ জুলাই একটি ছবি মুক্তি পায়। নায়ক-নায়িকা দু’জনেই নবাগত। ছবি মুক্তির আগে তেমন কোনও প্রচার হয়েছে, কিংবা তারকারা যে বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে, তেমন কিছুই ঘটেনি। কিন্তু দমকা হাওয়ার মতো যেন রুপোলি পর্দায় এল ‘সইয়ারা’। সপ্তাহ পার হওয়ার আগে ১৫০ কোটির অঙ্ক ছুঁয়েছে এই ছবি। একেবারেই কি প্রচার হয়নি, না কি প্রচার না করে হল-ফেরত দর্শকদের প্রতিক্রিয়াই হল এই ছবির সব থেকে বড় প্রচার কৌশল! একটা নতুন জুটি পর্দায়। তাঁদের প্রেম, তাঁদের রসায়ন দেখে আবেগে বুঁদ গোটা ভারত। কেউ হলে কাঁদছেন, কেউ প্রেমিকাকে কোলে তুলে নাচছেন। কেউ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হাত না ছাড়ার। এখন সমাজমাধ্যমে এই ভিডিয়োই ছয়লাপ। কিন্তু সমগ্র দেশের মতো কলকাতাতেও কি চিত্রটা এক? বেশ কিছু বাংলা সিনেমার মাঝে নবাগত তরুণ-তরুণীর প্রেমের এই ছবি কি হলমালিকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।
দক্ষিণ কলকাতার বহু পুরনো প্রেক্ষাগৃহ নবীনা। সব সময়ে বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়িয়েছে এই ছবিঘরের মালিক নবীন চৌখানি। কিন্তু ‘সইয়ারা’ মুক্তির দিন থেকে যে ‘ওপেনিং’ নিয়েছে, তা দেখে তিনি খানিক অবাক। নবীন বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে এই ছবি টপ গিয়ারে! আমাদের হলে দর্শক সংখ্যা ৮০০ মতো। পুরো হাউসফুল যাচ্ছে। একটা নতুন তারকাকে দর্শক গ্রহণ করেছে এটাই বড় পাওনা। একটা নির্দিষ্ট বয়সের দর্শক যাঁরা আসছিলেন না প্রেক্ষাগৃহে, সেই যুব সম্প্রদায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’’
প্রথম সপ্তাহে ১৫০ কোটি ছুঁলে আর কয়েক দিনের মধ্যে ৩০০ কোটি ঘরে পৌঁছোবে ‘সইয়ারা’, আশাবাদী হল মালিক শতদীপ সাহা। এই কলকাতায় একাধিক প্রেক্ষাগৃহ আছে তাঁর। এই ছবির ফলে যেমন লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে, তেমনই শতদীপ বলেন, ‘‘আসলে সইয়ারা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখবর ও ইতিবাচক একটা ছবি। আসলে ছবির ইউএসপি ছিল মুখে মুখে প্রচার। এমনিতেই আমাদের হলগুলিতে যে লাভের অঙ্ক দেখছি, সেটা খুবই স্বস্তি দিচ্ছে। এই সপ্তাহ থেকে শো আরও বাড়বে।’’ যদিও শতদীপ মনে করেন, কলকাতা একা নয়, এই ছবির জ্বরে পুড়ছে গোটা দেশ।
বাণিজ্যিক বিশ্লেষক পঙ্কজ লাডিয়া জানান, অগ্রিম বুকিংয়ের সময় থেকে তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন এই ছবি লম্বা দৌড়বে। কারণটা ছিল, যুব সমাজের মধ্যে একটা আগ্রহ ছিল এই ছবিটা নিয়ে। শহরে ১০-১২ টা শো হাউসফুল যাচ্ছে সেটাই একটা বিশাল সাফল্য। তাই এই ছবির সাফল্যে বাংলার সমান অবদান আছে, মানছেন পঙ্কজ। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ এই ধরনের একটা উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ ছবিটা নিয়ে। সেটা হওয়ারই ছিল। কারণ, শাহরুখ খানের মতো তারকার ছবি সেটা। কিন্তু একেবারে নতুন ছেলেমেয়ে নিয়ে ছবি। আর প্রথম দিনে ২১ কোটির ব্যবসা এর আগে অন্য কোনও নবাগত দিতে পারেনি। এই ছবির এতটা ব্যবসা করার পিছনে কারণ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটা শোয়ে দর্শক আসছেন। এবং এই ছবি বার বার দেখছেন দর্শক। নিঃসন্দেহে ‘সইয়ারা’এই বছরের এখন অবধি বড় ওপেনিং ।’’