‘হুলিগানিজ়ম’ গান সত্যিই কি হুল ফুটিয়েছে! ছবি: সংগৃহীত।
সমাজমাধ্যম এখন ভাইরাল ‘হুলিগানিজ়ম’ ব্যান্ডের একটি গানে। আদতে ওই গানের কয়েক সেকেন্ডের কিছুটা অংশ নিয়েই যত বিতর্ক, যেখানে উঠে এসেছে রাজ্য রাজনীতির তিন ‘ঘোষ’-এর কথা। এই তিন ঘোষ হলেন কুণাল ঘোষ, দিলীপ ঘোষ ও শতরূপ ঘোষ। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল অবশ্য এ হেন গানের মধ্যে ‘অপমানজনক’ কিছু খুঁজে পাননি বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন। অন্য দু’জন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ও সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ এখনও পর্যন্ত নীরবই।
এই গান নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রচুর বক্তব্য উঠে আসছে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। কেউ বলেছেন, ‘হুলিগানিজ়ম’ ব্যান্ডের গান নাকি সত্যিই হুল ফুটিয়েছে। কেউ কেউ শতরূপের হয়ে এই গানের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এরই মধ্যে সমাজমাধ্যমে ফুঁসে উঠছেন সঙ্গীতশিল্পী মেখ্লা দাশগুপ্তও। অন্য দিকে, গানটির অন্যতম প্রধান শিল্পী তথা অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে এমন ‘মাতামাতি’তে গা ভাসাতে একেবারেই নারাজ পরিচালক সৌরভ পালোধী। কিন্তু একটা গান আচমকা কী ভাবে রাতারাতি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এল, কেন এটি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এমনকি, গানটিকে ‘বৈপ্লবিক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ! এই বিতর্ক, আলোচনা হবে ভেবেই কি সচেতন ভাবে গানটি বাঁধা হয়েছে? নাকি সত্যিই অন্য রকম কিছু করার ইচ্ছে ছিল? জানালেন অন্যতম গায়ক দেবরাজ ভট্টাচার্য। পাল্টা বললেন সৌরভ-মেখলাও।
শহরের এক গানের অনুষ্ঠানে গানটি গেয়েছিলেন অনির্বাণ ও দেবরাজ। খানিকটা কথোপকথনের ভঙ্গিতে। গানটির নাম ‘তুমি মস্তি করবে জানি’। এই গানে প্রধানমন্ত্রী থেকে পেনশন, তিন ঘোষ থেকে নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়বস্তু উঠে এসেছে। তবে সবচেয়ে ভাইরাল হয়েছে তিন ঘোষের অংশটুকু। এই প্রসঙ্গে দেবরাজ বলেন, ‘‘২০১৫ সালে অনির্বাণ যখন ‘চৌমাথা’ নাটকটি করে, সেই সময় থেকে এই গানটি গায়। আসলে কথায়, কবিতায় গানের এই র্যাপ অংশটি সেটি সময়ের সঙ্গে পাল্টায় এবং সেটা সচেতন ভাবেই রাজনৈতিক রাখা হয়েছে।’’
অনির্বাণদের এই গান নিয়ে খানিকটা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সৌরভ পালোধী। কেউ কেউ এই গানটিকে ‘বৈপ্লবিক’ আখ্যা দিচ্ছেন। এখানেই আপত্তি সৌরভের। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে বিপ্লব এত সহজ জিনিস নয়। ওদের কাজ নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই আমার। তবে চারপাশে এমন একটা ভাব, যেন অনির্বাণ কী না কী ঘটিয়ে ফেলেছেন। আসলে কিছুই ঘটাননি। এত মাথায় তোলারও কিছু হয়নি। আসলে রাজনৈতিক দায়িত্বই যদি নিতে হয়, যেখানে সিপিএম কেন শূন্য প্রসঙ্গে ওঠে, সেখানে চাকরি বাতিল, স্কুল খুলছে না কেন— এই সব প্রশ্ন করার সাহসও রাখা উচিত। তাই এটাকে শোয়ের একটা মজা ছাড়া কিছুই বলব না। এটা নিয়ে এত মাতামাতি করার কিছু নেই।’’
তবে দেবরাজের কথায়, ‘‘এর আগেও এটা গেয়েছি। কিন্তু তখন তো হইচই হয়নি। তাই ভাইরাল হবে ভেবে কিছু করা হয়নি। তবে আমরা বৈপ্লবিক কিছু করিনি। কারণ, আমাদের সমাজে বিপ্লব হওয়া মুশকিল। আমাদের যেটা মনে হয়েছে বলা দরকার, সেটা বলেছি। আমাদের আসলে কোনও শ্রেণির মধ্যে ফেলা যাচ্ছে না বলেই এত রাগ হচ্ছে।’’
সৌরভের বক্তব্য, তিন ‘ঘোষ’কে নিয়ে যে মজাটা করা হয়েছে তার বিরোধী তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যিনি এই মজাটা করছেন তাঁর তুলনায়, এই তিন ঘোষ অনেক বেশি রাজনৈতিক। তাঁরা চুরি করতে পারেন, জালিয়াতি করতে পারেন। কিন্তু রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাঁরা। আসলে মানুষজনের রাগ হচ্ছে। কারণ, যাঁদের নাম নেওয়া হয়েছে, তাঁদের একজন জেলখাটা আসামি, অন্যজন দেশটাকে হিন্দু রাষ্ট্র দেখতে চান। সেখানে শতরূপ তো স্কুল খোলার দাবি করছেন। এ বার আপনারাই বলুন।’’
খানিক একই বক্তব্য সঙ্গীতশিল্পী মেখলার। তিনি বলেন, ‘‘এটা কোন বিপ্লবের গানই নয়। প্রতিবাদের গান বলাতেও আপত্তি আমার। একটা প্রতিবাদের গানে তো আরজি কর প্রসঙ্গ, এসএসসি দুর্নীতি আসা উচিত ছিল। আমি আমার জীবনবোধ থেকে এমন গান কখনওই গাইব না।’’
যদিও দেবরাজের কথায়, ‘‘আমরা মজা করেই করেছি সবটা। যাঁরা মজাটা নিতে পেরেছেন, আনন্দ করেছেন। যাঁরা পারেননি বিষোদ্গার করেছেন।’’ তিনি শেষে আরও যোগ করলেন, ‘‘মানুষ এখন হুজুগে বাঁচে। এখন এটা চলছে, আবার নতুন কিছু পাব, তখন এটা ভুলে যাবে।’’ তবে এই বিষয়ে অনির্বাণের আলাদা করে বিশেষ কিছু বলার নেই, সেটাও স্পষ্ট করলেন দেবরাজ।