Friendship Day 2025

বন্ধুত্বে বাড়ছে দূরত্ব! তাই এই বিশেষ সম্পর্কে প্রেম, যৌনতা? কী বলছেন তরুণ অভিনেতারা?

তুমিই বন্ধু, প্রেমিকও তুমিই... এমনকি যৌনসঙ্গীও! এটাই কি একুশের বন্ধুত্বের নয়া সংজ্ঞা?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৪৪
Share:

বন্ধুত্বের নয়া সংজ্ঞায় এই প্রজন্ম? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

‘আজ বাড়ি থেকে কী এনেছিস রে? আজ তোর আনা খাবারটাই ভাগ করে খাব...।’ কিংবা ভোর তিনটে পর্যন্ত ফোনে বকবকম— সব বয়সের বন্ধুত্বের উদাহরণ তো এমনই। তবু বন্ধুত্ব আর প্রেমে কোথাও যেন সূক্ষ্ম ভেদ ছিল। যে বন্ধু সে বন্ধুই। যার সঙ্গে অনেক কুকথা, কুকর্ম দিনের শেষে ভাগ করে বুক হালকা হয়। এমনকি পরনিন্দা-পরচর্চাও।

Advertisement

প্রেমিকা বা প্রেমিকের সঙ্গেও কি ঠিক এ ভাবেই মেশা যায়?

আগের প্রজন্মের দ্বিধা, হয়তো যায় না। এই প্রজন্ম অনেক বেশি সপ্রতিভ। তাদের দাবি, প্রয়োজনমতো নিজেকে বদলে নিলেই হল! এই অনুভূতি থেকে বন্ধুত্বে শারীরিক ঘনিষ্ঠতাও নতুন কিছু নয়। দুই অনুভূতির এমন সহাবস্থানে পরস্পরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিনোদন দুনিয়ার তরুণ তুর্কিরাও। যেমন, আদিত্য সেনগুপ্ত-অনুষা সেনগুপ্ত।

Advertisement

বন্ধু কি কখনও প্রেমিক বা প্রেমিকা হতে পারে? কিংবা প্রেমে বন্ধুত্বের উপস্থিতি! যার হাত ধরে আসতে পারে যৌনতাও?

আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আলোচনায় যোগ নিয়েছিলেন আদিত্য-অনুষা। দেবাংশু সেনগুপ্ত-খেয়ালি দস্তিদারের সন্তান আদিত্য। শুরু থেকেই তিনি সম্পর্ক, বন্ধুত্ব নিয়ে অকপট। পরিচালক-অভিনেতার কথায়, “আমার বাবা-মায়ের সম্পর্ক দেখেছি। পরে আমার মায়ের সঙ্গে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্কও দেখেছি। দুই সম্পর্কই আমায় বুঝিয়েছে, মানুষের কোন সত্তা কখন প্রকাশিত হবে সেটা সময়, পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে। সব সময় দুই অনুভূতি মিলেমিশে যায় না।” আদিত্য তার পরেই তাঁর সঙ্গে অনুষার সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “আমরা কখনও শুধুই বন্ধু। তখন আমাদের আচরণ কিন্তু সাধারণ দুই বন্ধুর মধ্যে যেমন হুবহু তেমন।” বন্ধুত্ব নয়, শুধু প্রেম তাঁদের সত্তা জু়ড়ে থাকে। কিন্তু উভয় সত্তার উপস্থিতির কারণে তাঁদের আদানপ্রদান অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। “অনুষাকে এমন অনেক কিছু বলতে পারি বা জানাতে পারি যা শুধু একজন বন্ধুকে জানানো যায়”, দাবি আদিত্যের।

অনেক দিন ধরে সম্পর্কে থাকার ফলে আদিত্যর এই বিশ্বাস ছড়িয়ে গিয়েছে অনুষার মধ্যেও। “ইদানীং আদিত্য যেন আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছে। আড্ডা দেওয়ার জন্য বা আলাদা করে কথা বলার জন্য অন্য কারও উপর আগের মতো নির্ভর করতে হচ্ছে না”, বক্তব্য তাঁর। তা বলে সব বয়সের প্রেমে এ রকম রসায়ন তৈরি হবে তারও কোনও মানে নেই, মত অভিনেত্রীর। যত পরিণত হচ্ছেন ততই তিনি বুঝতে পারছেন, বন্ধুত্ব, প্রেম, দাম্পত্য সব কিছুই তৈরি হয় বয়স, পরিস্থিতি, পরিবেশ বুঝে। যেমন, প্রেমিক-প্রেমিকা সমবয়সি হলে সেখানে হয়তো বন্ধুত্ব আপনা থেকেই গড়ে ওঠে। একই ভাবে বয়সের ফারাক বাড়লে হয়তো বন্ধুত্ব কমে পারস্পরিক নির্ভরতা আসে। তবে ইদানীং, এই দুই অনুভূতি যে একটি সম্পর্কে সহাবস্থান করছে সেই বিষয়ে দ্বিমত নেই অনুষারও।

ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। একটা সময় তুমুল প্রেম ছিল বিরসা দাশগুপ্ত-বিদীপ্তা চক্রবর্তীর বড় মেয়ে মেঘলা দাশগুপ্তের সঙ্গে। “আমরা বহু বছর প্রেমে নেই। কিন্তু বন্ধুত্বে আছি। কারণ, আমাদের প্রেমে বন্ধুত্বও ছিল, তাই”, বলেছেন মঞ্চ এবং পর্দার চেনামুখ। মেঘলার সঙ্গে দেখা হলে ঋতব্রত তাই এখনও চুটিয়ে আড্ডা দেন। কোনও অস্বস্তি কাজ করে না। ইদানীং বন্ধুত্বে প্রেম থাকছে বলেই কি দাম্পত্য বিচ্ছেদ বা সম্পর্ক ভাঙার পরেও পারস্পরিক আদানপ্রদান থাকছে? একদম তাই, জানিয়েছেন ঋতব্রত।

অভিনেতার কথায়, “সম্পর্ক না-ই থাকতে পারে। কিন্তু সম্পর্কে বন্ধুত্ব থাকলে সেটা সাধারণত থেকে যায় উভয়ের মনে।” তাঁর উপলব্ধি, ছোট থেকে বেড়ে উঠেছেন যাঁদের সঙ্গে, কর্মসূত্রে বা নানা কারণে তাঁরা এখন পরবাসে। বন্ধু, বন্ধুত্বের এই দূরত্বও কিন্তু বন্ধুত্ব আর প্রেমকে মিলিয়ে দিচ্ছে। তাই, বন্ধুত্ব যখন প্রেমের উদ্‌যাপনে বাঁধা পড়ে ছাঁদনাতলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, খুব খুশি হন ঋতব্রত।

একটা সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলেই শোনা যেত, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় আর ঐশ্বর্য সেন নাকি ‘বিশেষ’ বন্ধু!

আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসের দিন সে কথা তুলতেই অভিনেত্রী হাসতে হাসতে বলেছেন, “বিশেষ নয়, ঋতব্রত আমার খুব ভাল বন্ধু। যে বন্ধুত্ব সাধারণত পেশা দুনিয়ায় দেখা যায় না।” তা হলে কি ঐশ্বর্য যাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাবেন তাঁর সঙ্গে প্রেম করবেন না? “সত্যিই করব না”, দাবি তাঁর। অভিনেত্রীর মতে, বন্ধুত্ব আর প্রেম এক নয়। তাই বন্ধু আর প্রেমিক এক হতে পারে না। এই কারণেই তিনি বন্ধুর সঙ্গে প্রেমে জড়াবেন না। বন্ধু শুধুই বন্ধু।

আর যৌনতা? ‘ওপেন রিলেশনশিপ’? অর্থাৎ, যার সঙ্গে প্রেমে আছি তাকে ছাড়াও অন্য কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া, যা নিয়ে বিন্দুমাত্র লুকোছাপা নেই।

এটাও পরিস্থিতি এবং সম্পর্কের উপরে নির্ভর করে—দাবি এই তিন জনের। পড়াশোনার সুবাদে আদিত্য একটা সময় দেশের বাইরে থেকেছেন। তিনি এই সম্পর্ক তাঁর বন্ধুদের মধ্যেও দেখেছেন। আদিত্যর মতে, “এটা সম্পূর্ণ ভাবে দুটো মানুষের মতের উপরে নির্ভর করে। তাঁদের সমস্যা না হলে সব ঠিক।” ঋতব্রত একটু অন্য কথা বলেছেন। তাঁর যুক্তি, “এই ধরনের সম্পর্কে জড়ানোর আগে ‌উভয়ের মন জেনে নেওয়া উচিত। পারস্পরিক সম্মতি থাকলে কোনও সমস্যা নয়। কিন্তু সেটা না হলে যৌনতা তখন ধর্ষণের নামান্তর।” অভিনেতা এ-ও জানিয়েছেন, আমাদের দেশে এখনও যৌনশিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক অনেক নারীর উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়। যার জেরে লাগাতার বৈবাহিক ধর্ষণ বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে।

অনুষা এই প্রজন্মের হয়েও ‘খোলা পাতার মতো সম্পর্ক’-এ ততটাও অনায়াস নন। তাঁর কথায়, “আমি কখনও এই ধরনের সম্পর্কে জড়াইনি। আমার তাই অভিজ্ঞতা নেই।” এই ধরনের সম্পর্কে জড়ানোর ইচ্ছাও যে তাঁর রয়েছে, তা নয়। কারণ তিনি মনে করেন, এই ধরনের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হতেও পারেও। তার পরেও তিনি জানিয়েছেন, কেউ যদি ‘ওপেন রিলেশনশিপ’-এ ভাল থাকেন তিনি অবশ্যই সে ভাবে থাকবেন।

এখানেও ভিন্ন মতে বিশ্বাসী ঐশ্বর্য। তাঁর সাফ জবাব, “এই দিক থেকে আমি প্রাচীনপন্থী। যাকে ভালবাসব তার সঙ্গেই আমার যাবতীয়। সকলের সঙ্গে নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement