Sabitri Chatterjee birthday

সারাটা জীবন অভিনয়ের সঙ্গেই সংসার করলেন মামণি

২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। বিশেষ দিনে তাঁর মামণিকে নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় লিখলেন অভিনেত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৬
Share:

অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

আমাদের পরিবার কোনও বিশেষ ঘটনাকে খুব ঘটা করে উদ্‌যাপনে বিশ্বাসী নয়। আমাদের কাছে জন্মদিনটাও সে রকমই। কিন্তু আজ মামণির জন্মদিনে লিখতে বসে ঠিক কী লেখা উচিত, সেটাই ভাবছি। আমার মনে হয়, আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের কাছে অভিনেত্রী এবং ব্যক্তি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়— এই দুই সত্তাকে তুলে ধরার একটা প্রচেষ্টা এই লেখার মাধ্যমে করা যেতে পারে।

Advertisement

আমি তখন বেশ ছোট। মনে আছে, মামণির জন্মদিনের বিকেলে কত মানুষ আসতেন বাড়িতে! একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হত। একদম ঘরোয়া জলসা। তার মধ্যে সৌমিত্র জেঠু (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়), মাধবী আন্টি (মাধবী মুখোপাধ্যায়) ছিলেন অন্যতম। আশির দশকে বিজলি গ্রিলের ফিশ ফ্রাই ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই জন্মদিনের আড্ডায় সেটা ছিল মাস্ট। এখনও জন্মদিনে মামণির বন্ধুরা বাড়িতে আসেন। সেখানে আট থেকে আশি— সব ধরনের মানুষ রয়েছেন। তার মধ্যে আমার ছেলেও রয়েছে। এটা আমার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়। কারণ, মামণি সমস্ত বয়সের মানুষের সঙ্গে অনায়াসে মিশতে পারেন।

মামণির আজ কততম জন্মদিন, সেটা বলা মুশকিল। কারণ শুনেছি, পুত্রের দশম সন্তানটিও কন্যা জেনে, মামণির ঠাকুরদা নাকি ঘড়ি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন! সময় দেখেননি। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটা মনে থাকলেও, বেশ কিছু বছর ধরে জন্মের সালটাও কেউ খেয়াল রাখেনি। কী অদ্ভুত সমাপতন। সেই মহিলাই পরবর্তী কালে অত বড় সংসারের হাল একা ধরেছিলেন! কেউ বলে আমি মামণির ভাইঝি। আবার আমি বংশতালিকা মাথায় রেখে বুঝেছি, আমি হয়তো তাঁর নাতনি। কারণ, মামণির সঙ্গে আমার বাবার বয়সের মাত্র তিন বছরের পার্থক্য। বড় পরিবার, তাই এখনও বিষয়গুলো আমার গুলিয়ে যায়। তবে এটা বলতে পারি, দিদা এবং নাতনি— আমরা দু’জনেই একে অপরের ভাল বন্ধু।

Advertisement

(বাঁ দিকে) সাবিত্রীর সঙ্গে পিঙ্কি। ছবি: সংগৃহীত।

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় আধুনিকা। পোশাকআশাক থেকে শুরু করে প্রযুক্তি— চারপাশে কী কী ঘটছে, সব কিছু নিয়ে মামণি ওয়াকিবহাল। জানার আগ্রহটা এখনও রয়ে গিয়েছে। পরিবারের প্রত্যেকেই মামণির এই দিকটাকে উদ্‌যাপন করি। আপনারা হয়তো জানলে অবাক হবেন, এখনও মামণি নিয়মিত বাংলা পডকাস্ট শোনেন। চিরকাল নিজেকে সময়ের সঙ্গে বদলেছেন বলেই হয়তো সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এভারগ্রিন।

সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এলেও এই দিনের মাহাত্ম্য আমাদের কাছে একই রকম রয়ে গিয়েছে। মামণির জন্মদিন এবং ভাষা দিবস। বুঝতে হবে, দেশভাগের সময় ও-পার বাংলা থেকে কলকাতায় চলে আসছেন এক জন কিশোরী। মামণির মুখেই শুনেছি, সেই সব দিনের ভয়াবহ আখ্যান। ১৯৫৪ সালে তাঁর কেরিয়ারের সূত্রপাত। তখন বাংলা ছবির নায়িকারা মূলত শাড়িই পরতেন। মামণি শাড়িতে যতটা স্বচ্ছন্দ, ততটাই এখনকার লিনেনের কোঅর্ড সেটে। আমি তো আমার এক পোশাকশিল্পী বান্ধবীর সঙ্গে পরিকল্পনা করে জন্মদিনে মামণিকে একটি কোঅর্ড সেট উপহার দিয়েছি। সেটা কবে পরবেন, তা নিয়েও ওঁর মধ্যে ছেলেমানুষি লক্ষ করে অবাক হয়েছি।

‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবির একটি দৃশ্যে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

মামণির মতো একজন মানুষ সারা জীবনে বিয়ে করলেন না। বিষয়টা নিয়ে এখনও অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। আমাকেও মাঝেমধ্যে তাঁর হয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বাবা শশধর চট্টোপাধ্যায় ছিলেন স্টেশনমাস্টার। কিন্তু বাড়িতে নিয়মিত নাটক এবং গানের রেওয়াজ ছিল। ‘বরসাত’ ছবি দেখার পর মামণির মনে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা জন্ম নেয়। তাঁর মুখ থেকেই শুনেছি, নিজেই নাকি রাজ কপূর এবং নার্গিস সেজে অভিনয় অভ্যাস করতেন। বুঝতে হবে, মামণিরা ছিলেন ১০ বোন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সেখানে জানতেন, তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে। এটাও জানতেন যে, কোনও রকম সম্পর্কে জড়ালে তা তাঁর কেরিয়ারের পক্ষে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনে হয়, আত্মসম্মান এবং স্বাধীনতা খুইয়ে কোনও সম্পর্কে জড়াতে চাননি মামণি। আমি বলতে পারি, মামণি সারা জীবন অভিনয়ের সঙ্গেই সংসার করলেন। কারণ ছোট থেকে আমি তাঁকে দেখে শিখেছি, বিয়ে না করলে কী হয়। আর মামণি এখন বুঝে গিয়েছেন বিয়ে করলে কী হয়! কিন্তু আজ মামণির জন্মদিনে বলতে চাই, কোনও দিনও বিয়ে করেননি বলে কোনও রকম অবসাদে তিনি ভোগেননি। বরং তাঁর মনের জোরের আশপাশেও কেউ থাকলে তাঁর মনটাও আরও শক্ত হয়ে উঠবে।

স্বর্ণযুগে মামণি প্রায় ৩৫০ ছবিতে অভিনয় করেছেন। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, আমার নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে মামণিকে নিয়ে একটা বিশেষ সিরিজ় (‘অন্তরালের গল্প’) শুরু করেছি, যেখানে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় তাঁর ছবিগুলির নেপথ্য গল্প শোনাচ্ছেন। আগেকার ইন্ডাস্ট্রিতে সেই ভাবে তো ‘সংরক্ষণ’ বিষয়টা গুরুত্ব পেত না। আমার মনে হয়েছে, এগুলো মামণির অনুরাগী এবং বাংলা ছবির ইতিহাসের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রয়ে যাবে। আজ জন্মদিনে বিকাশ রায় পরিচালিত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবিটা নিয়ে মামণি যা বলেছেন, সেই পর্বটিই প্রকাশিত হবে।

মামণি বিশ্বাস করেন, এখনও বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে তাঁর অনেক কিছু দেওয়ার আছে। এই বয়সেও নিয়মিত অভিনয় করছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। এখনও একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের অপেক্ষায় থাকেন। জন্মদিনে, মামণিকে একটাই কথা বলতে চাই— তুমি যেমন আছ, ঠিক তেমনটিই থেকো। নিজেকে বদলে ফেলো না।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement