new year celebration

এ বারের মৃত্যুপুরীর মাঝেও বৈশাখ এল

আজকের পয়লা বৈশাখ আঙুল দিয়ে প্রকৃতিকে দেখাচ্ছে।

Advertisement

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

সিঙ্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ১৯:০২
Share:

পয়লা বৈশাখ নিয়ে নস্টালজিক ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

​​আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য লিখতে বসেছি পয়লা বৈশাখ নিয়ে। সাদা কাগছে সব আনন্দের ছবি উপচে পড়ছে! এ কি আর একটা দিনের উদযাপন? পুরোদস্তুর বিয়েবাড়ির মতো মনে হত আমার পয়লা বৈশাখ। তখন নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর স্টুডিয়োপাড়ার তিনটে ফ্লোরে তিনটে ছবির মহরৎ। ফুলের গন্ধ আর আলোর দিন। এখনকার প্রেস কনফারেন্সের মতো নয় সে সব। মহরতের জন্য তৈরি হত ফুলের বাগিচা। নায়ক-নায়িকা যখন গাড়ি থেকে নামতেন তাদের ওপর ফুলের বৃষ্টি! আহা! যেন স্বর্গ থেকে দেবদেবী নেমে এলেন মাটিতে। বিয়েবাড়ির জৌলুসের চেয়ে কিছু কম ছিল না সেই বৈশাখের প্রথম দিনের মহরৎ।

Advertisement

আর এখন পয়লা বৈশাখ মানে নতুন ছবির ঘোষণা যেন একটা ব্রেকিং নিউজের মতো। এখন তো টেকনিক্যালি এগিয়ে গিয়েছে পৃথিবী। এখন আর সেই স্টুডিয়ো পাড়ার ক্ল্যাপ্সটিক, টাটকা ফুলের গন্ধের পয়লা বৈশাখ হয় না। হারিয়ে গেল সেই দিন! আমি দেখেছি একসঙ্গের উৎসব হয় না আর। চলে ব্রেকিং নিউজ নিয়ে কাড়াকাড়ি! কে নিজের ছবি কতটা ফলাও করে মিডিয়ায় ঘোষণা করবে? মিডিয়াও লড়তে থাকে ‘রিচ’ বাড়ানোর খেলায়। ছবি ঘিরে যেন শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই। সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া কোল্ডড্রিঙ্কস, খাবারের প্যাকেট... ‘সব্বাই!’ কোথায় গেল সেই একজোট? ‘সব্বাই!’

দিন বদলে গিয়েছে। দিন বদলের ছুট, দিন এখন ক্ষতিতে, ক্ষততে পূর্ণ!

Advertisement

আরও পড়ুন: লকডাউনে সবার মধ্যে খালি ‘আমায় দেখ’, ক্ষোভ উগরে দিলেন ফারা

সে এক সুখের সময়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

এই বৈশাখ শুধু বলছে, ‘বেঁচে আছি, বেঁচে আছি ’। আর একটু একটু করে স্বপ্নে হাত বাড়াচ্ছি। নিজেকে বলছি, ‘এই তো আমরা বেঁচে আছি’। এই ঢের! এই বৈশাখ বার বার মৃত্যুপুরীর ছবি দেখাচ্ছে আমায়। অথচ রাতে তারা দেখছি! সকালবেলা আগুনের তেজ বাড়ছে। সন্ধেবেলা আলো কমে আসছে।

প্রকৃতি!

প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আজকের পয়লা বৈশাখ আঙুল দিয়ে প্রকৃতিকে দেখাচ্ছে। পরিবারকে দেখাচ্ছে। ঘরের সঙ্গকে চেনাচ্ছে। এ বারের পয়লা বৈশাখ আর আগের মতো অনেক নেমন্তন্নে একটু একটু করে ছুঁয়ে যাওয়ার নয়। বাইরে ছোটার নয়। ঈশ্বর বলে দিয়েছেন এ বারের পয়লা বৈশাখ বারোয়ারি নয়, ঘরের পয়লা বৈশাখ। আমরা পরিবারের থেকে সবাই দূরে সরে গিয়েছিলাম। অনেক ব্যস্ততা, পরিবারকে সময় দেব কখন? তাই ঈশ্বর চোখে আঙুল দিয়ে শেখালেন পরিবার আমাদের উৎস। এ বছর তাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দিন। খুব কিছু রেঁধে খেতেও হবে না! খিচুড়ি আর ডিম ভাজা? সবাই মিলে এটাই খাই। ‘সব্বাই’!

তবে সকলের বৈশাখ ঘরে নয়।

বাইরের জগতে যে সব মানুষ নিরন্তর করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন তাঁদের পয়লা বৈশাখ পথে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য আর জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষ, তাঁদেরকে চিনছি আমরা। ‘অন্যের ভাল’ কথাটা আর শুধু কথার কথা নয় এখন। অন্যের ভাল করছেন তাঁরা। কত এনজিও ভাল কাজ করছে এখন। আমার মিডিয়ার বন্ধুরা নিজের কথা বা তাদের পরিবারের কথা ভাবছে না, কেবল ভাবছে খবরের কথা। তাদের জন্যই খবর পৌঁছে যাচ্ছে সব দিকে। আমি রোজ আমার মতো করে দেশের মানুষের জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করছি। আমরা সকলে যেন পশুপাখিদের খাওয়ার কথাও ভাবি... এই বৈশাখ মানবিকতার বৈশাখ। হতে পারে, বছরের প্রথম দিন থেকে এই সভ্যতার নবজন্মের সুচনা হবে!
খুব কাব্যিক শোনাচ্ছে কি? বোধহয় না। এই লকডাউনের নতুন বছরে আমাদের সমস্ত ক্লেদ, ক্লেশ, দুঃখ, জরা সব কেটে যাক।

আরও পড়ুন: রাস্তা স্যানিটাইজ় করছেন নাইজেল

পয়লা বৈশাখে নতুনকে আহ্বান জানাতে বাড়ি বাড়ি পুজোর চল রয়েছে বাংলায়। —ফাইল চিত্র।

বাড়ির লোকজনের কথা আজ খুব মনে পড়ছে আমার। পয়লা বৈশাখ কী? ওরাই তো শিখিয়েছিল আমায়!

ছোটবেলায় কারও না কারও বাড়িতে নেমন্তন্ন থাকত আমাদের। খুব ভোর ভোর মা উঠিয়ে দিতেন। প্রথমে ঠাকুমাকে প্রণাম, তার পর মা-বাবা, তার পর ঠাকুরকে প্রণামের রীতি ছিল। তবেই দিন শুরু হত। ঠাকুমাকে দেখতাম দাদুর ছবিতে মালা দিত, ফল-মিষ্টি রাখত। চিরকাল সুতির জামা পরতাম। খুব দামি কিছু পরতাম না। বাঙালি মতে খাওয়া হত। অনেক মিষ্টি খেতাম। আর কোনও নেমন্তন্নে গেলে ঠান্ডা কোল্ডড্রিঙ্কস স্ট্র দিয়ে খাওয়ার যা মজা পয়লা বৈশাখে পেয়েছি সে ভোলার নয়! এ বার তো সিঙ্গাপুরে আছি। ছেলেমেয়েকে বাংলা গান শোনাব। শাড়ি পরব। সকলে একসঙ্গে খাব। আর ওই মেয়েটাকে খুঁজব, পয়লা বৈশাখ এলেই যে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’ গানের সঙ্গে নাচতও। সময়, কাল পেরিয়ে যাচ্ছে... মেয়েটা তবু নাচছে, ‘বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক’... এ বারের বৈশাখেও মৃত্যুপুরীর মাঝে সে হয়তো নাচছে... ‘ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন