Cyclone Amphan

বাস্তব চিত্রনাট্যে আমপানের তাণ্ডব, বহুতলে কাঁপলেন টলিপাড়ার সেলেবরা

মাথার উপর ছাদ, পর্যাপ্ত খাবার, যখন যা চাই তাই সামনে হাজির, ফিল্মস্টার বললেই এমনই এক ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। তাঁদের আবার কষ্ট কিসের?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ২৩:২৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মে মাসের কুড়ি তারিখ। চারিদিক থমথমে। বিকল সাড়ে চারটে, বিধ্বংসী আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উমপুন) নিজস্ব রুটম্যাপে তখন ভয়ার্ত চেহারা নিয়েছে সুন্দরবনের বুকে। যখন সোনারপুরে সে এসে পৌঁছল তখন সময় আন্দাজ ৬টা ৪০-মিনিট। গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। সেখান থেকে মেট্রোপলিটন বাইপাসের বহুতল 'আরবানা'-য় পৌঁছতে তার হাতে গোনা সময় লেগেছিল। এ এমন এক বহুতল যেখানে টলিউডের বহু সেলিব্রিটির ভিড়।

Advertisement

কে নেই সেখানে? রাজ-শুভশ্রী, শ্রাবন্তী থেকে পায়েল সরকার, অরিন্দম শীল। সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তাঁরা। ঝড় যে আসবে তা জানতেন সবাই। কিন্তু হাইরাইজে থাকা তামাম সেলেবকুলের গায়েও যে আমপানের আস্ফালনে আঁচ আসবে তা কি কল্পনাও করতে পেরেছিলেন তাঁরা?"আরবানা' যে রকম সুইংগিং টেকনোলজিতে তৈরি হয়েছে তাতে এমন বিধ্বংসী ঝড়েও আমরা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে কিন্তু অনেক ভাল আছি। কলকাতার তো সব লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে! মানুষের কি অবস্থা!" অরিন্দম বলতে থাকেন, "আমি ৪৪ তলায় থাকি। আমার উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম খোলা। তাই পূর্ব গতির ঝড় আমার বাড়িতে তার চিহ্ন রেখে যায়নি। তবে পুব দিকে মুখ করা টাওয়ারের কয়েকটা বাড়িতে কাচ ভেঙেছে।আর আমরা তিন ঘণ্টা ধরে শুধু দুলেছি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট সারা ক্ষণ দুলেছে। প্রচুর গাছ পড়েছে। গাছের দিকটা কেমন শ্মশানের মতো দেখাচ্ছে!" আতঙ্কের গলা নিয়ে বললেন পরিচালক অরিন্দম শীল।

মাথার উপর ছাদ, পর্যাপ্ত খাবার, যখন যা চাই তাই সামনে হাজির, ফিল্মস্টার বললেই এমনই এক ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। তাঁদের আবার কষ্ট কিসের? এ ধারণাই যখন আপামর জনগণের বিশ্বাসে তখনই আমপান কোথাও গিয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে সবাই সমান।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বসিরহাটের মানুষের সঙ্গে রয়েছি: নুসরত

হাওয়ার বেগ ক্রমশই বেড়ে চলেছিল। বৃষ্টির মতো ভেঙে পড়ল কাচের জানলা। ভেতরে চলে এল জল! ফ্ল্যাটে একাই থাকেন পায়েল। বলছিলেন, “আমি খুব একটা ভয় পাই না। কিন্তু এত ভয় জীবনে কোনওদিনও পাইনি ।একটা জানলা বন্ধ করতে গিয়ে আর একটা জানলা খুলে চলে গেল!”

রাজের বাড়িতেও একই অবস্থা। শুভশ্রী অন্তঃসত্ত্বা। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা। তারই মধ্যে আমপানের আস্ফালন। রাজের বাড়িতেও ভেঙে গিয়েছিল জানলা। না, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়নি। কিন্তু যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন। ফোনের নেটওয়ার্ক থেকে ওয়াইফাই, কিছুই কাজ করেনি সে দিন।"প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুভ প্রেগন্যান্ট। সবাই প্যানিক করছি। চোখের সামনে কাচ ভাঙল!জল যে কোথা থেকে ঢুকছে বুঝতেই পারছি না। আর সব দুলছে। মাথা ঘুরছে সকলের।"

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শ্রাবন্তী 'আরবানা' থেকেই লাইভ করে ঝড়ের বীভৎস রূপ দেখান। "শুধু মানুষ নয়, আমার পোষ্যগুলো ভয়ে কেমন কুঁকড়ে ছিল।" বলেন নায়িকা। 'আরবানা'-য় কাচ ভাঙলেও বিদ্যুতের কোনও সমস্যা হয়নি। আর পুব দিক থেকে আসা ঝড় পুব দিকের টাওয়ারেই বেশি দৌরাত্ম্য দেখিয়েছে।

অন্য দিকে ট্যাংরার এক হাইরাইজে বসে অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা সে দিনই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃতির কাছে তাঁরা কি অসহায়।

আরও পড়ুন: দু’টি বিয়ে, লিভ ইন, প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক... নওয়াজের জীবনে প্রেম এসেছে বার বার

অঙ্কুশ বলছিলেন, “মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। ফ্ল্যাটের জানলার কাচ ভেঙে গেল হঠাৎ করে। জল ভেতরে আসতে লাগল প্রবল বেগে। বাথরুম থেকে ফলস সিলিং খসে পড়তে লাগল। মনে হল, এ যাত্রায় বুঝি আর রক্ষে নেই।” দু’দিন কেটে গিয়েছে। এখনও আতঙ্কে রয়েছেন অঙ্কুশ। সেই রাতের কথা ভাবলেই গা শিউরে উঠছে তাঁর।

আমপানের রুটম্যাপে বাইপাসের পরেই ছিল পুব ঘেঁষা কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে সে হাজির হয় গড়িয়াহাট, গোলপার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ চত্বরে। প্রকাণ্ড গাছ পড়ে অভিনেত্রী রুক্মিণীর সাধের গাড়ির উপর! সে গাড়ি অক্ষত নেই। "পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে থাকি আমি। গাছ পড়ে কমপ্লেক্সের দুটো গাড়ি নষ্ট হল। চারিদিকে তো আরও খারাপ অবস্থা!" উৎকণ্ঠা রুক্মিণীর গলায়। অন্য দিকে দেব বললেন, "আমি আজ অবধি ঠিক আছি।আমার বাড়িতে ঝড়ে কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে চারপাশের মানুষকে দেখে বুঝেছি কি ভয়াবহ পরিস্থিতি। রাজনীতি না করে আমাদের সকলকে গৃহহারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।" কিন্তু সাউথ সিটির ১৮ তলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা লেখক, বাংলা ধারাবাহিকের প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, " এত ঘন অন্ধকার জীবনে দেখিনি। তার সঙ্গে শোঁ শোঁ আওয়াজ! দুম করে কাচ ভাঙল আর হু হু করে জল ঢুকল!কমপ্লেক্স থেকেই গ্যাস বন্ধ করতে বলা হল।"

গোলপার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ ছুঁয়ে লেক গার্ডেন্সেও ঢুঁ মেরে যায় এই আমপান। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে শুক্রবারও যেমন জল নেই। ওই অঞ্চলেই থাকা অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তর বাড়িতে জল নেই, ওয়াইফাই নেই। বাইরে থেকে জল এনে কাজ সারতে হচ্ছে তাঁদের।

জৌলুস ভরা আবাসনের সুসজ্জিত লন এখন কাচের কুচিতে ভরা। বাহারি গাছ শিকড় থেকে উপড়ে পড়েছে। আর তার পাশেই পড়ে আছে জানলার ভাঙা ফ্রেম!

ধ্বংসের এমন নির্মম চিত্রনাট্য আগে কখনও দেখেছে টলিপাড়া?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন