ষষ্ঠীতে কী ভাবে গৌরবকে বরণ করেন দেবলীনার মা? ছবি: সংগৃহীত।
দেখতে দেখতে পঞ্চম জামাইষষ্ঠী গৌরব চট্টোপাধ্যায় ও দেবলীনা কুমারের। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও পঞ্চব্যঞ্জন থালায় সাজিয়ে জামাইকে খাওয়াবেন শাশুড়ি দেবযানী কুমার। পাঁচ রকমের ভাজা থেকে সাত রকমের মাছ ষষ্ঠীর দিন থাকে জামাইয়ের পাতে। সেই সঙ্গে জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় মানা হয় বেশ কিছু রীতি। আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে সেই সব রীতি, নিয়ম ভাগ করে নিলেন শাশুড়ি দেবযানী কুমার।
মনের মতো জামাই পেয়েছেন তিনি। জামাইকে নিয়ে কোনও অভিযোগই নেই তাঁর। কোনও কথাতেই নাকি না নেই গৌরবের। তাই জামাইষষ্ঠীর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। জামাইষষ্ঠীর দিন সকাল হতেই শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে যান গৌরব। সকালে পালন করা হয় একটি রীতি। নানা রকমের ফল, পান, বটপাতা ও ডুমুর দিয়ে বাঁধা একটি ডালা তৈরি করা হয়। দেবযানী বলেন, “এই ডালা আগে বাড়িতে বানাতে হত। এখন বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়। জামাইষষ্ঠীর সকালে এই ডালা দিয়ে পুজো হয়। পুজোটা হয় গৌরবের নামে। পুজোর পরে ওই ডালা দিয়ে ওকে বরণ করি। তালপাতার পাখার হাওয়া করে দিই।” সব শেষে জামাইয়ের হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দেন দেবযানী। জামাইয়ের মঙ্গলার্থেই এই বিশেষ রীতি তাঁদের বাড়িতে।
দেবলীনাদের বাড়িতে জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে কলার বড়া হয়। নিয়ম মেনে সবটাই করেন দেবযানী। তাঁর কথায়, “কলার বড়া তৈরি করা নিয়ম আমাদের। এ ছাড়া পায়েস-মিষ্টি তো হয়েই থাকে। ফল খাওয়ানো হয়। আমটা যেমন একটু হলেও খেতেই হয়। এটা সব বাঙালি পরিবারেরই নিয়ম। কাঁঠালও দেওয়া হয়। কিন্তু কাঁঠাল গৌরবের একেবারেই পছন্দ নয়।”
সকালে কলার বড়া, পায়েস, মিষ্টি ফলাহারের পরে আসে মধ্যাহ্নভোজের পালা। এখানেও কিছু নিয়ম মানা হয়। দেবযানী বলেন, “প্রথম পাতে ভাতের সঙ্গে শুক্তো। তার পরে ডাল ও পাঁচ রকমের ভাজা খেতেই হয়। তার পরে গৌরবের পছন্দ মতো সাত রকমের মাছের আয়োজন করা হয়।” ইলিশ, কাতলা, চিংড়ি, ভেটকির সঙ্গে থাকে পাবদা, পমফ্রেট ও ট্যাংরা। দেবযানীর কথায়, “সাত রকমের মাছ রাঁধা আমাদের বাড়ির নিয়ম হয়ে গিয়েছে। তার কারণ, গৌরব মাছ খেতে খুব ভালবাসে। আর তিথির জন্য (দেবলীনা কুমার) পমফ্রেট মাছটা করতে হয়। কারণ, অন্য কোনও মাছ ওর পছন্দ নয়।”
জামাইষষ্ঠী শুধু নয়। যে কোনও ষষ্ঠীতেই পুজো করেন দেবযানী। এই দিনগুলোয় ভাত খান না। শুধু নিরামিষ সব্জি খান। জামাইষষ্ঠীতে শাশুড়িদের খাওয়াদাওয়ার উপর থাকে কিছু নিষেধাজ্ঞা। যেমন পায়েস এই দিন কোনও ভাবেই খাওয়া যায় না বলে জানালেন দেবযানী।
মধ্যাহ্নভোজেই শেষ হয় না গৌরবের জামাইষষ্ঠী। দেবলীনার দিদিমা’র বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর দ্বিতীয় পর্ব পালন করেন তিনি। দেবাশিস কুমারের সঙ্গে নাতজামাই গৌরবকেও ভুরিভোজ করান দেবলীনার দিদিমা। তবে এখানে আচার বা রীতি সেই ভাবে পালন করা হয় না। ফিশ চপ, ডিমের ডেভিল থেকে শুরু করে কব্জি ডুবিয়ে পাঁঠার মাংস খান জামাইয়েরা। সব শেষে দেবযানীর বক্তব্য, “নিয়ম মানার জন্য আসলে আমরা জামাইষষ্ঠী পালন করি না। আচার-রীতি নিয়ে আমরা সেই ভাবে ভাবি না। আসলে পুরনো রীতি, অনুষ্ঠানগুলো যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতে থাকে, সেটাই আমাদের আসল লক্ষ্য।”