ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
সকলের নজর এই মুহূর্তে যে খবরে আটকে, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের চোখেও ভাসছেন তাঁরা। সাক্ষাৎকার শুরুর আগে টেলিভিশন দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘অনুষ্কার (শর্মা) লেহঙ্গাটা খুব সুন্দর, না?’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘ওদের দু’জনের ছবি এত ন্যাচারাল, প্রাণোচ্ছ্বল, সেটা দেখতেও খুব ভাল লাগছে,’’ মিঠে হাসি তাঁর চোখেমুখে। শীতের সকালে বেহালার বাড়ির হলঘরে বসল আড্ডা।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী না ওডিশি নৃত্যশিল্পী, কোন পরিচিতিকে আগে রাখবেন? ‘‘আগে রাখার কোনও ব্যাপার নেই। ‘দাদা’র স্ত্রী হিসেবে আমার পরিচিতির ব্যাপ্তি অনেক বেশি। সেটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কারণ, ক্রিকেট আর সিনেমা বেশির ভাগ মানুষেরই পছন্দের। ক্ল্যাসিকাল ডান্স সকলের জন্যও নয়। তাই আমার নাচের প্রচারে এই পরিচিতি সাহায্য করেছে,’’ অকপট ডোনা। নাচের প্রতি আগ্রহ কি বরাবরের? ‘‘সকলের তো এমন গুরুর সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। আমার গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র কলকাতায় যখন আসতেন, আমাদের বাড়িতেই থাকতেন, ওয়র্কশপ হতো। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ওঁর সঙ্গে পারফর্ম করতে শুরু করলাম। আর পেশা হিসেবেও আমি ফ্লেক্সিবল কিছু চাইতাম। যেন পরিবারকে সময় দিতে পারি। তাই নাচ সে দিক দিয়েও আমার সঙ্গে মানানসই। আমার প্যাশন বলুন, হবি বলুন, সবটাই নাচ।’’
সম্প্রতি কোনারক ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করেছেন ডোনা ও তাঁর নাচের দল। গর্বিত শিক্ষিকা বার বার ফোন ঘেঁটে দেখাচ্ছিলেন তাঁর প্রিয় ছাত্রীদের ছবি। ‘‘আমার এখনকার ট্রুপের মেয়েদের সঙ্গে অন্য রকম বন্ডিং। সেই কোন ছোটবেলা থেকে ওরা শিখছে! অনেকে তো আবার এখন কলেজের ছাত্রী। ওদের মধ্যে উৎসাহও আছে। তবে মেয়েদের অনেকেই বলে ‘আন্টি আগের চেয়ে কম স্ট্রিক্ট হয়ে গিয়েছে’,’’ হাসির রেখা তাঁর মুখে। ডোনা বললেন, ‘‘ক্ল্যাসিকাল ডান্স কিন্তু রেওয়াজের বিষয়, সাধনা করতে হয়। ওটা নিয়েই থাকতে হয়। আর এটা একটা প্রসেস। রেড রোডে পারফর্ম করা আর কোনারক উৎসবের অভিজ্ঞতা এক নয়। এই বোধ তৈরি করার জন্য এক সময়ে খুব জোর দিতাম। তবে সানা খুব একটা রেওয়াজ করে না। তাই আমিও আর আগের মতো কড়া নই,’’ হাসতে হাসতে বললেন টিনএজার কন্যার মা।
সামনের বছর সানার আইএসসিই। ওর পড়াশোনার অনেকটা দায়িত্বই ডোনার কাঁধে। আর মায়ের দায়িত্ব তো শেষ হয় না! ‘‘বাবা হল লাক্সারি, ডেসার্টের মতো। আর মা নেসেসিটি, অনেকটা জলের মতো। সানার বেশি আবদার ওর বাবার কাছেই। আর স্বভাবের দিক দিয়েও ওর বাবার মতোই,’’ বললেন ডোনা।
আপনাদের বিয়েও কম রোমাঞ্চকর ছিল না! ‘‘হ্যাঁ, সেই সময়ের নিরিখে বেশি রোম্যান্টিক ছিল বলা যায়। পরিবার প্রথমে মানেনি, পরে মেনে নেয়। তখন কিন্তু ব্যাপারটা বোরিং হয়ে যায়। দু’দশক কেটেও গেল! তবে সানা এই বিষয়ে কৌতূহলী। ওর প্রশ্ন এড়াতেই আমরা এই নিয়ে বেশি কথা বলি না,’’ মুচকি হাসি সানার মায়ের মুখে।
স্বামী হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাল গুণ কী? তাঁর কোনও বৈশিষ্ট্য কি আপনি বদলাতে চান? ‘‘খারাপ কিছু নেই। তবে দাদার মতো এত কাজ করতে পারি না। আপনাদের দাদা এত বেশি কাজ করে, স্ট্রেস নেয়, আমার মনে হয় ওর একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। টক শো, এনডোর্সমেন্ট, সিএবি... অনেক দায়িত্ব আছে ঠিকই। তবে মেয়ে বড় হচ্ছে... এই সময় তো আর ফিরে আসবে না।’’ সময় না দেওয়া নিয়ে কি কখনও অভিযোগ করেছেন? ‘‘এখনও করছি না। তবে আমার মনে হয়, সুস্থ থাকার জন্যই ওর কাজের ভার একটু কমানো উচিত। বয়স তো হচ্ছে!’’ সাক্ষাৎকারের ফাঁকেই অবশ্য গিন্নিকে টাটা করে কর্তা বেরোলেন নিজের কাজে।
বিয়ের পর আপনি কতটা বদলেছেন? ‘‘দায়িত্ব অবশ্যই বেড়েছে। যৌথ পরিবারের সদস্য। এ দিকে, আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাঁদেরও দেখতে হয়। আর এখন মেয়ে বড় হচ্ছে। তাই দায়িত্ব বাড়তেই থাকে।’’
সৌরভের সঙ্গে ট্র্যাভেলের সুবাদেই অনেক ধরনের খাবার খেতে শিখেছেন ডোনা। ‘‘এখন ও আমাকে মেনুকার্ড ধরিয়ে দেয়। আর আমার পছন্দেই খায়,’’ বলছিলেন সৌরভ-পত্নী। ডোনার কথায়, ‘‘ক্ল্যাসিকাল নাচের উৎসব ভারতের হেরি়টেজ জায়গায় হয়। বারাণসী ঘাটে গঙ্গা মহোৎসব, খাজুরাহোর মন্দিরের সামনে খাজুরাহো উৎসবে পারফর্ম করার অনুভূতি কিন্তু অতুলনীয়। পারফরম্যান্সের পাশাপাশি জায়গাগুলোও ঘোরা হয়।’’
আরও পড়ুন: চিত্রনাট্যই তো ছবির নায়ক
ডোনা এখন বেশি ফুটবল ফলো করেন। ‘‘সানার আগ্রহ ফুটবলেই বেশি। বাইরে গেলে সৌরভ ও সানা ইউরোপ লিগের ফুটবল ম্যাচ বেশি দেখে।’’
মেয়ে, স্ত্রী, মা, নৃত্যশিল্পী...ভূমিকা তাঁর কম নয়। ঘরে-বাইরে সমান পারদর্শী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। আর সকলের সঙ্গে তাঁর অকৃত্রিম আন্তরিকতাই বলে দেয়, তিনি আমাদের দাদার স্ত্রী।