Detective

প্লটের ভাঁজে ভাঁজেই শেষ...

মহিম ও হুতাশনের কথোপকথনে সংলাপ সব সময়ে মনোগ্রাহী না হলেও দুই অভিনেতার জন্যই দৃশ্যগুলি দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০০:১৭
Share:

সিনেমার একটি দৃশ্য।

ডিটেকটিভ
(ওয়েব মুভি)

পরিচালনা: জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: অনির্বাণ, ইশা, সাহেব, অম্বরীশ, কৌশিক
৫/১০

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘ডিটেকটিভ’-এ গোয়েন্দা মহিমচন্দ্রের আক্ষেপ ‘‘আমাদের দেশের অপরাধীগুলা ভীরু এবং নির্বোধ, অপরাধগুলা নির্জীব এবং সরল, তাহার মধ্যে দুরূহতা, দুর্গমতা কিছুই নাই...’’ সেই গল্প অবলম্বনে তৈরি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ওটিটি ছবি ‘ডিটেকটিভ’-এ দিবাস্বপ্নে বিভোর গোয়েন্দা মহিমচন্দ্র (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) বলে, ‘‘এমন কেস চাই যেখানে প্লটে থাকবে ভাঁজের পর ভাঁজ, প্যাঁচের পর প্যাঁচ...’’

পাঁচ পাতার ছোট গল্পকে সিনেম্যাটিক রূপ দিতে গেলে প্লটে ভাঁজের প্রয়োজন হয় বইকি! তবে ক্লাসিক গল্প নিয়ে কাজ করলে ভাঁজের সঙ্গে চাই পরিমিতিবোধও। ‘ডিটেকটিভ’ ছবিতে সেই পরিমিতির অভাব রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গল্পের মূল সুর বাঁধা ছিল স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের সূক্ষ্ম তারে। তবে এ ছবির শেষে প্রাধান্য পায় মহিমচন্দ্রের ডিটেকটিভ সত্তাই। তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রায় দু’ঘণ্টার ছবিতে স্বাধীনতা আন্দোলনের রক্ত-গরম করা যে পর্ব প্লটকে চালনা করেছে, শেষের টুইস্টে তার কোনও তাৎপর্যই থাকল না। সমস্যা সেখানে।

Advertisement

গল্পে মহিমচন্দ্রের নামহীন স্ত্রী ছবিতে সুধামুখী (ইশা সাহা)। সে শিক্ষিতা, বিয়ের আগে আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সুধামুখী ও মন্মথর (সাহেব ভট্টাচার্য) প্রেম ছবির সবচেয়ে ভাল ইম্প্রোভাইজ়েশন। তার জন্য চিত্রনাট্যকার সৌগত বসুকে ধন্যবাদ। মহিলা চরিত্রটিকে যখন গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তখন তার খেলাঘরই কি ছবির ফোকাস হতে পারত না? মহিমচন্দ্রের মতো পাঠকও গল্পের শেষে আবিষ্কার করেছিলেন, মন্মথর আসল পরিচয়। কিন্তু ছবিতে প্রথমেই দেখিয়ে দেওয়া হয়, সে সুধামুখীর প্রাক্তন প্রেমিক। তাই ছবিতে ইতি টানতে টুইস্টের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি আরোপিত বলেই মনে হয়েছে।

মহিমচন্দ্রের গোয়েন্দাগিরির মামলাগুলিতে আরও নজর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। গল্পে লেখা এক লাইন ছবিতে ‘ড্রিম সিকোয়েন্স’! কিন্তু তাতে বাকচাতুরী কই? কোথায় বা তারিফযোগ্য হাস্যরস? চিত্রনাট্যকারের কাছে প্রশ্ন, গতে বাঁধা বিষ্ঠা, অর্শের উল্লেখ না করে কি হাস্যরস তৈরি করা যায় না? পিরিয়ড ছবির ডিটেলিংয়ে যত্নের অভাবও নজর কাড়ে। শুধু সাদা থান পরে নিলেই বিধবা চরিত্র (স্নেহর চরিত্রে তৃণা সাহা) হয়ে ওঠা যায় না! ইংরেজ সরকারের অধীনে কর্মরত গোয়েন্দা মহিমচন্দ্র জানে না, বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রাখি উৎসব হতে চলেছে। তাকে তথ্যটি দেয় তার সহকারী। এ-ও কি বিশ্বাসযোগ্য? আবার হুতাশন (শার্লক হোমস সিরিজ়ের চরিত্র ওয়াটসনের রূপভেদ) নামটায় যে নতুনত্ব, তা প্রশংসনীয়।

পরিবেশনের অজস্র খামতি অভিনয়গুণে ভরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ছবির শিল্পীরা। মহিমচন্দ্রের চরিত্রে অনির্বাণ বেশ ভাল। কমেডি ও ভাঁড়ামোর মাঝের সূক্ষ্ম ফারাক তাঁর শরীরী ভাষা ও অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। সুধামুখীর চরিত্রে ইশা মানানসই। মন্মথর চরিত্রে সাহেবকেও ভাল লেগেছে। হুতাশনের চরিত্রে অম্বরীশ ভট্টাচার্য বেশ ভাল। মহিম ও হুতাশনের কথোপকথনে সংলাপ সব সময়ে মনোগ্রাহী না হলেও দুই অভিনেতার জন্যই দৃশ্যগুলি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। মাস্টারমশাইয়ের চরিত্রে কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জায়গাবিশেষে উচ্চকিত। পিরিয়ড ছবিতে সাধারণত আবহসঙ্গীতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। কিন্তু ছবির প্রায় প্রতিটি দৃশ্যে এত জোরালো আবহসঙ্গীতের কি প্রয়োজন ছিল?

পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি দেড় ঘণ্টাতেও বানানো যায়। ছবির দৈর্ঘ্য অহেতুক না বাড়িয়ে পরিচালক-নির্মাতারা যদি সম্ভাবনাপূর্ণ প্লট ও পরিবেশনের খুঁটিনাটির দিকে নজর দিতেন, তবে ছবিটি আরও উপভোগ্য হতে পারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন