চিরকালীন সম্পর্ক।— ফাইল চিত্র।
সুপ্রিয়া দেবী আমার কাছে তো সুপ্রিয়া দেবী নন। আমার কাছে আন্টি দিদু।
হ্যাঁ, এই অদ্ভুত নামেই আমি ডাকতাম ওঁকে। আসলে বাবা আন্টি বলত। আমি সেখান থেকেই শুনে বলতাম আন্টি দিদু।
আজ সকালে খবরটা পাওয়ার পর আমি গিয়েছিলাম ওঁর বালিগঞ্জের বাড়িতে। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই গিয়েছিলেন। আন্টি দিদুর চলে যাওয়া মানে একটা বড় সময়ের সমাপ্তি।
‘উত্তম-সুপ্রিয়া’ ফ্রেজটা নিয়ে আমি বিশেষ কিছু বলতে পারব না। কখনও আমি আমার দাদুকে দেখিনি। আমার জন্মের পাঁচ বছর আগে উনি মারা গেছেন। বড় হতে হতে দাদুকে নিয়ে আমার বিশেষ কোনও আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল এমনও নয়। কারণ তিনি তো আমার দাদু। আমার কাছে তো আর ‘উত্তমকুমার’ নন। লাউডন স্ট্রিটে দাদুর যে ফ্ল্যাটটা ছিল, সেখানে প্রায়ই পার্টি দিত আন্টি দিদু। তখন ক্লাস সেভেন বোধহয়। নিজের হাতে রান্না করত আমাদের জন্য। বড়দের পার্টি শেষ হলে আমরা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতাম। সেই রান্নার টেস্ট অন্য লেভেলের। কোনও তুলনা হবে না।
আরও পড়ুন, ‘রান্না নয়, সংসার করতে শিখিয়েছিলেন বেণুদি’
সুপ্রিয়া দেবী। ইনসেটে গৌরব চট্টোপাধ্যায়।
সে সব পার্টিতে দাদুকে নিয়েও গল্প হত প্রচুর। তবে আমার সে সবে কোনও ইন্টারেস্ট ছিল না। আন্টি দিদুর বড় নাতি নীল আসলে আমার বন্ধু ছিল। আমার থেকে বয়সে একটু বড়। আমার ইন্টারেস্ট ছিল ওর সঙ্গে আড্ডা। ও হয়তো সিগারেট খাচ্ছে। বড়দের লুকিয়ে সেখান থেকে দু’টো টান দিতাম। ওটাই আমার ইন্টারেস্ট ছিল। তাই আন্টি দিদুর কাছে দাদুর গল্প সে ভাবে শোনা হয়নি। পরে যখন প্রফেশনালি অভিনয় করতে এলাম, তখন ইন্ডাস্ট্রিতেই প্রচুর গল্প শুনেছি।
আরও পড়ুন, ‘দীর্ঘ দিনের বন্ধুকে হারালাম’
আন্টি দিদু আসলে আমাকে খুব স্নেহ করত, ভালবাসত। বছর দু’য়েক আগেও যখন দেখা হল, বলেছিল, খুব রোগা হয়ে যাচ্ছিস। বাড়িতে আয়। রান্না করে খাওয়াব। তাই সম্পর্কটা পারিবারিক। অভিনয় নিয়ে কখনও কোনও কথা হত না।
আরও পড়ুন, পর্দা জুড়ে সুপ্রিয়ার উপস্থিতি চোখের আহ্লাদ, কিন্তু বিপজ্জনকও বটে
আজ সকালে বালিগঞ্জের বাড়িতে দাঁড়িয়ে ওই কথাটাই বার বার মনে হচ্ছিল। রোগা হয়ে যাচ্ছি বলে বাড়িতে ডেকে রান্না করে খাওয়ানোর মানুষটা আর থাকল না।