দাদু শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে নাতনি হিয়া চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
তখন আমি খুবই ছোট। মাত্র চার বছর বয়স। সকলের প্রিয় অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় চলে গিয়েছেন। তাই ওঁকে নিয়ে আমার স্মৃতি খুব আবছা।
তবু দাদুভাই আমার মনে রয়ে গিয়েছেন মায়ের মুখে শোনা অনেক গল্পে। ওঁর মৃত্যুদিনে মনে পড়ছে ছোট ছোট কথা। শুনেছি, ছোটবেলায় বাকি বাচ্চাদের মতো আমিও দেওয়ালে রং দিয়ে ছবি আঁকতাম। বাকি মায়েদের মতো আমার মায়েরও আপত্তি ছিল। আমার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দাদুভাই। ওঁর নির্দেশ ছিল, আমায় দেওয়ালে আঁকতে কেউ যেন বারণ না করেন। দাদু অভিনেতার পাশাপাশি চিকিৎসকও ছিলেন। বুঝতেন, শিশুমনের বিকাশে এই ছোট ছোট জিনিস অনেক সাহায্য করে।
দাদু শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কোলে ছোট্ট হিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
সম্পর্কে ‘দাদু’ হয়েও শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় কখনও কখনও বাবার ‘ছায়া’ হয়ে গিয়েছেন! ধরুন, আমি অসুস্থ। মা ওষুধ আনতে গিয়েছেন। বাবা কাজে। দাদুভাই আমায় কোলে নিয়ে ঘুরেছেন। ঠিক বাবার মতো। হবে না-ই বা কেন? দাদুভাইয়ের প্রথম নাতনি আমি। ভীষণ আদরের ছিলাম।
এই প্রসঙ্গে দাদুর আর একটা কথা খুব মনে পড়ছে। বাবার মুখে শুনেছি দাদু বলতেন, ‘‘মনখারাপ হতে দেবে না। মনখারাপ হলেই চার্লি চ্যাপলিনের আত্মজীবনী পড়ো। আর মনখারাপ থাকবে না।’’ কথাটা আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছে। আমিও সময় পেলে পড়ব।
আমি অভিনয়ে এসছি দাদু-বাবার জন্যই। এমন একটা পরিবারে জন্মেছি, যেখানে সিনেমার ডিভিডি ভর্তি। রোজ রাতে অন্তত একটা ছবি দেখা হবেই । আমিও দাদু-বাবার পথে হাঁটতে চলেছি, ভাবলেই গর্বে বুক ভরে ওঠে। স্বপ্ন দেখি, ওঁদের যেমন বাঙালি ভালবাসা জানিয়েছে, আশীর্বাদ করেছে, আমাকেও করবে। কত পরিশ্রম করে দাদুভাই অভিনেতা হয়েছেন! ডাক্তারির পাশাপাশি অভিনয় করে গিয়েছেন। সেই ঐতিহ্য বহনের দায় এখন আমার কাঁধে।
ঠাকুরমা অঞ্জলি চট্টোপাধ্যায়, দাদু শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শাশ্বত-কন্যা হিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
অভিনয় শুরুর পর থেকে ইদানীং অনেকেই জানতে চান, আমার চোখে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় নায়ক না অভিনেতা। আমি ওঁর অনেক ছবি দেখেছি। তার মধ্যে সেরা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘চৌরঙ্গি’। দাদুর যে কোনও পুরোনো ছবি আবার প্রেক্ষাগৃহে দেখালে দেখতে যাব। তার পরেও বলব, নায়ক বা অভিনেতা নন। দিনের শেষে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় আমার দাদু, দাদুভাই। আমার দুর্ভাগ্য, ওঁকে ভাল করে জানার আগে, বোঝার আগেই চলে গেলেন।