ওঁরা ৫

এক নায়িকা খাইয়ে দিচ্ছেন ফিশ ফ্রাই আর এক নায়িকাকে। দেবশঙ্কর বলছেন মায়ের মৃত্যুদিনে নাটক করার গল্প। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পাওলি, দেবশঙ্কর হালদার, গৌতম হালদার ও রাজা সেন। দল বেঁধে আড্ডা মারলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সঙ্গে।এক নায়িকা খাইয়ে দিচ্ছেন ফিশ ফ্রাই আর এক নায়িকাকে। দেবশঙ্কর বলছেন মায়ের মৃত্যুদিনে নাটক করার গল্প। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পাওলি, দেবশঙ্কর হালদার, গৌতম হালদার ও রাজা সেন। দল বেঁধে আড্ডা মারলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সঙ্গে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১০
Share:

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

কথা ছিল পাঁচটায় আড্ডা শুরু হবে। পরিচালক রাজা সেন বলেছিলেন, ‘‘সকলেই তো সময়ে এসে যাবে। তবে আমাদের ‘দেরি কুইন’কে নিয়ে চিন্তা আছে।’’ সব্বাইকে চমকে দিয়ে যথাসময়ে হাজির দেরি-কুইন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। পাওলি হেসে বললেন, ‘‘ঋতুদি অন টাইম— দারুণ এটা।’’ আনন্দplus-এর জন্য ফোটোশ্যুটে সারাক্ষণ তিনি দেবশঙ্কর হালদারের পাশে পাশে।

Advertisement

ব্যাপার কী? আপনি তো দেবশঙ্কর হালদারকেও ছাড়ছেন না?

Advertisement

ঋতুপর্ণা: বাঃ রে, আমরা তো অনেক দিনের স্বামী-স্ত্রী! আর এ ছবিতে আমার নাম গঙ্গামণি হলেও দেবুদা আমায় আদর করে ছুটকি বলে ডাকে। দেবশঙ্করদার খুব প্রিয় বৌ আমি।

ঘড়ি ধরে আজ যে আপনি হাজির…

ঋতুপর্ণা: শুনুন, এই দেবুদার জন্য আমাকে টাইম অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। রাজাদা সারাক্ষণ বলে চলেছে দেবশঙ্কর কিন্তু ঠিক পাঁচটায় চলে যাবে। ওর শো আছে।

দেবশঙ্কর: (উচ্ছ্বসিত) আরিব্বাস! এটা কিন্তু লিখবেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মতো একজন স্টার আমার জন্য সময় ধরে শ্যুটে আসছে!

আচ্ছা, রাজা সেনের মতো অন্য ধারার পরিচালক হঠাৎ এত জন স্টারকে নিয়ে ছবি করতে গেলেন কেন? আপনিও কি শেষে টলি ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ডের সঙ্গে হাত মেলালেন?

রাজা: (বেশ উত্তেজিত) এখন টলিউডে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীকে একসঙ্গে নিয়ে ছবি হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু সেই কারণে স্টার নিয়ে এসে আমি ছবির বাজার তৈরি করতে চাইছি— এটা ভুল। যে চার জন এই ছবিতে আমার সঙ্গে কাজ করলেন, তাঁরা আমার মতে জাত-অভিনেতা। ঘটনাসূত্রে তাঁরা স্টার।

দেবশঙ্কর: দেখুন রাজাদা কিন্তু বললেন ঋতু বা পাওলি স্টার নয়, ঘটনাচক্রে স্টার!

(সকলের জোর হাসি)

ঋতুপর্ণা: রাজাদার সঙ্গে আমার সম্পর্কটাই আলাদা। ‘আত্মীয়স্বজন’য়ের জন্য আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড পাই। ‘চক্রব্যূহ’ করেছি, ‘খাঁচা’ করেছি। এক দিক থেকে বলতে গেলে রাজাদা আমাকে ব়ড় হতে দেখেছে।

রাজা: এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার ঋতু স্টার। (উত্তেজিত) শুনুন, আমি জাত-অভিনেতাদের এই ছবিতে নিয়েছি। সেই কারণেই দেবশঙ্কর আর গৌতমের কথা ভেবেছিলাম। কী সব সিন করেছে এরা দু’জন! এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায়।

পাওলি: আসলে এই ছবিতে আমরা প্রত্যেকেই গল্প আর চিত্রনাট্যের টানে এসেছি। আমার চরিত্রটা খুব ট্র্যাজিক। আমি গান-পাগল মানুষ। অথচ আমার জীবনে সুর নেই, ভালবাসাও নেই।

সেকী! এখন তো আপনার ভালবাসার সময়। সামনে বিয়ে, হানিমুন…

পাওলি: (দুষ্টু হাসি হেসে) হানিমুন? নাহ্, ওই নামে তো কোনও ছবি করছি না।

ঋতুপর্ণা: ইয়েস, ইয়েস, পাওলির তো এখন প্রেমের সময়। নে, একটু ফিশ ফ্রাই খা…

পাওলি: ঋতুদি, ক্যামেরায় লুক দাও। দারুণ একটা শট… কী ভাল দেখাচ্ছে তোমায়।

আপনাদের মধ্যে তো বেশ ভাব!

পাওলি: নায়িকা হলেই চুলোচুলি করব— এটা খুব ক্লিশে। বরং এই ছবিতে এত সব দারুণ কো-অ্যাক্টর পেয়ে ভাল অভিনয়ের উৎসাহটাই বেড়ে গিয়েছিল আমার।

ঋতুপর্ণা: পাওলির সঙ্গে আমার ঝগড়াই বা হতে যাবে কোন দুঃখে? আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা না খুব ছোট। সবাই এখন কাজটা ভাল করে করারই জন্য উঠেপড়ে লাগে। শুধু ৫-৬ জন পরিচালকের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিটা আটকে থাকবে কেন?

তা হলে আপনার কথাতেই বলি? সেই কারণেই আপনি একের পর এক ‘ঝাপসা’ ছবি করছেন?

ঋতুপর্ণা: মানে?

আপনি নাকি আপনার কিছু ছবিকে ‘ঝাপসা’ ছবি বলেন?

ঋতুপর্ণা: মোটেও না। আমি বরাবর নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি অন্যদের মতো ক্যালকুলেটিভ নই। আমি ইমোশনালি চলি। ইন্ডাস্ট্রি শুধু ৪-৫ জন পরিচালকের মধ্যে আটকে থাকবে? হোক না ভুল! কোথাও আবার সাকসেসও তো আছে।

গৌতম হালদার এত চুপ কেন?

গৌতম: আমি তো স্টার নই, তাই চুপ!

আচ্ছা, আপনি আর দেবশঙ্কর হালদার প্রায় তিরিশ বছর একসঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু এই প্রথম একসঙ্গে ছবিতে…

গৌতম: হ্যাঁ, একসঙ্গে শুরু করে এই প্রথম সিনেমায়। ও ওস্তাদ, আমি ওর শাগরেদ।

দেবশঙ্কর: একটু আগেই আপনি বলছিলেন না আমি কেন ঋতুর পাশে পাশে? আমি যদি গৌতমের পাশে পাশে থাকতাম, তখনও প্রশ্ন উঠত কিন্তু! (সকলের খুব হাসি)

পাওলি: ফাটাফাটি এটা দেবুদা! আমি বাবা সেফলি রাজাদার পাশে!

হ্যাঁ, আপনি তো সেফ খেলছেন। বিয়ের ডেট বলছেন না।

পাওলি: বিয়ে! সেটা কী?

ঋতুপর্ণা: এই, মারব এ বার তোকে!

কখনও মনে হয়নি একসঙ্গে শুরু করে দেবশঙ্কর অনেক এগিয়ে গেলেন?

গৌতম: আরে, কোথায় এগোবে ও? কীসের এগোনো? ও সব মানি না। ওর রসিকতা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকি। একসঙ্গে কাজ করার এটাই আনন্দ।

আপনার মধ্যে এক ধরনের এফিমিনেসি আছে। সেটাই আপনার ব্র্যান্ড হয়ে গেছে— এটা তো মানেন?

গৌতম: হতে পারে এটা ব্র্যান্ড, তবে রবীন্দ্রনাথ, গিরিশ ঘোষ, শিশির ভাদুড়ী সকলের মধ্যেই এই এফিমিনেসি ছিল। শুনুন, যিনি একাধারে শিল্পী এবং পুরুষ, তার মধ্যে যদি এফিমিনেসি না থাকে, তবে তার শিল্পীসত্তার প্রকাশ হয় না। আপনি এটা বললেন, আমি গর্বিত!

পাওলি: বাহ্, কী সুন্দর আধুনিক কথা।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের আলকাপদের গল্প ‘মায়ামৃদঙ্গ’, নিয়ে ছবি। আজকের সিনেমায় যে ধরনের স্মার্ট সংলাপ থাকে, সেটা কি এই ছবিতে থাকবে? এই প্রজন্ম দেখবে?

পাওলি: আমরা সদ্য ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’ নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু এই ছবিতে ছেলেরা মেয়ে সেজে যে অভিনয় করেছে। সেটা অসাধারণ। ঋতুদি আর দেবুদার সুন্দর সিন আছে। দলের এক ছোকরা দেবুদা, যে নারী হয়ে উঠেছে তার প্রতি আসক্ত। তাকে আদর করছে। শরীরও আছে সেখানে। এটা যদি আধুনিকতা না হয়, আর কী হবে?

গৌতম: একজনের দুই বৌ, যৌনতা, লিভ ইন, সমকামিতা— আমার তো মনে হয় এই ছবি অতি আধুনিক।

তবে পরিচালক হিসেবে কি মনে হয় না এখন ইন্ডাস্ট্রিও জেন ওয়াই আর জেন এক্স-এ ভাগ হয়ে গিয়েছে?

রাজা: মানে?

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়— এঁরা নতুন প্রজন্মের পরিচালক। আর আপনি…

ঋতুপর্ণা: রাজাদার হয়ে আমি উত্তর দিচ্ছি। রাজাদা ‘দামু’র মতো ছবি করেছে, আবার ‘আত্মীয়স্বজন’ও করেছে। নানা ধরনের ছবি ওর
মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি আমরা। রাজাদার ফিল্ম মেকিং-এর ক্ষেত্রটি নতুন প্রজন্ম, পুরনো প্রজন্ম, এ ভাবে ভাগ করা যায় না।

দেবশঙ্কর: ঋতু কিন্তু সিরিয়াস হয়ে গেছে।

আচ্ছা, এখন নিশ্চয়ই খান পঁচিশ নাটক চলছে আপনার?

দেবশঙ্কর: ও রকমই হবে। এখন আর গুনি না।

ঋতুপর্ণা: দেবুদা কাউন্ট রাখতে পারছে না।

বেশ, নাটকের সংখ্যা যত, তার চেয়ে ছবির সংখ্যা কম। এটা কি সচেতন ভাবে?

দেবশঙ্কর: যে ডিরেক্টর জানে আমি থিয়েটারের জন্য চারটেয় চলে যাব, সেটা জেনেও তিনি আমায় ছবি করতে ডাকেন। আমি সেই ডিরেক্টরদের ছবিই করি। তবে এটা প্লিজ লিখবেন আজকাল ঋতু আমার জন্য টাইম অ্যাডজাস্ট করছে। (সকলের হাসি)

সদ্য মা চলে গেলেন। সেদিনও আপনি শো করেছেন…

দেবশঙ্কর: দু’টো অভিনয় করেছিলাম। অনেকে বলেছিল ও কি মা’কে সত্যিই ভালবাসত? কাকে বোঝাব? আমি যখন অভিনয় করতে চলে যাচ্ছি, মা’র শবদেহ বাড়িতে আসছে। মা’কে বলে গিয়েছিলাম সারা জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করেছ। আরও চার ঘণ্টা অপেক্ষা করো। আসলে সম্পর্কের মধ্যে কোনও কমিটমেন্ট না থাকলেই সেটা সহজ হয়। আমিও বারান্দায় দাঁড়ালাম, তুমি এ বার জানলায় এসো— এটা না হয় না! আমি বারান্দায় না-ও আসতে
পারি। আর ধরে নিচ্ছি তুমিও জানলায় এলে না। এই ছবিতে ঝাকসু ওস্তাদের চরিত্র করতে করতে আমার ভেতরের ওস্তাদ বেরিয়ে এসেছে। যে লিড
করতে পারে, ভালবাসতে পারে, আবার বিশ্বাসঘাতকতাও করতে পারে। আবার একা হয়ে যেতে পারে।

পাওলি: একা থাকার স্পেস সকলেরই দরকার। বন্ধুত্বে শর্ত আমিও মানি না।

হবু বর কি সেটা দিচ্ছে?

পাওলি: ও যথেষ্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং।

ঋতুপর্ণা: আমার বোঝাপড়া আমার মতো হবে। শর্তহীন সম্পর্কই প্লেজার দিতে পারে। আর আমার কোনও স্টার ব্যাগেজ নেই। আমি কালও যা ছিলাম, আজও তাই।

দেবশঙ্কর: ঋতুর এই ব্যাপারটার মধ্যে একটা চমক আছে। স্টার ব্যাগেজ না দেখানোর অহঙ্কার।

কিন্তু ছবির মতো সঞ্জয় যদি অন্য মহিলার প্রেমে পড়েন, তা হলে কি গঙ্গামণির মতোই আপনি পজেসিভ হয়ে যাবেন?

ঋতুপর্ণা: এটা কিন্তু সাঙ্ঘাতিক!

পাওলি: এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ঋতুদি অনেক সময় নেবে!

দেবশঙ্কর: বলো একবার! মেরে ঘাড় মটকে দেব।

রাজা: আমি বলছি, ঋতু অন্য পুরুষের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে এই ভেবে সঞ্জয় এতটাই শঙ্কিত যে আলাদা করে অন্য নারীর প্রেমে প়ড়তে পারল না।

পাওলি: আরে না, না। সঞ্জয়দা ও রকম না। খুব চিলড্ আউট।

ঋতুপর্ণা: বিয়ের পর আমার জীবনটা কনফারেন্স কল-য়েই কেটে গেল। সঞ্জয়ের প্রেমিকা হলে সেটা নিয়ে ভাবব, ডিসকাস করব।

দেবশঙ্কর: ভেবো না ঋতু। আরে এন্ড অব দ্য ডে তুমি একজন স্করপিও…

নাটক করছেন না কেন? শতাব্দী রায় তো করলেন…

ঋতুপর্ণা: সেটা আমার ইয়ার্ডস্টিক হতে পারে না। তবে মিউজিক্যাল কিছু করব বা একাঙ্ক নাটক।

দেবশঙ্কর: আমাকেও নিও মিউজিক্যালে। ওটাই বাকি আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement