পাখা মেলুক ‘কল্পনা’, চাইছেন সব পক্ষ

অমলাশঙ্করের জন্মদিন উপলক্ষে প্রাইভেট শো-এর মাধ্যমে ‘কল্পনা’ দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন মমতাশঙ্কর। তিনি বলছেন, ‘‘ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়ায় কল্পনার কপিরাইট উঠে গিয়েছে।

Advertisement

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০২:১০
Share:

ছবিটির বুকলেট। ছবি সৌজন্য: সুলেখা জিন্দল।

ছবিটা সত্তর বছর পূর্ণ করল আর ছবির নায়িকা অমলাশঙ্কর একশো বছরে পা দিলেন। উদয়শঙ্করের ‘কল্পনা’ নিয়ে তাই নতুন করে আগ্রহ নানা মহলেই।

Advertisement

১৯৪৮ সালের সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘কল্পনা’ বক্স অফিস সাফল্য তেমন না পেলেও শুরু থেকেই কাল্ট হিসেবে স্বীকৃত। যত দিন এগিয়েছে, উদয়শঙ্কর এবং তাঁর নৃত্যভাবনার প্রত্যক্ষ দলিল হিসেবে তার ঐতিহাসিক গুরুত্বও গিয়েছে বেড়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ স্বত্বাধিকার নিয়ে টানাপড়েনের জেরে ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে দেখানো যায়নি। ফিল্মোৎসব বা দূরদর্শনের পর্দা ছাড়া তামাম দর্শকের কাছে ছবিটির নাগাল পাওয়া এখনও মুশকিল।

অমলাশঙ্করের জন্মদিন উপলক্ষে প্রাইভেট শো-এর মাধ্যমে ‘কল্পনা’ দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন মমতাশঙ্কর। তিনি বলছেন, ‘‘ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়ায় কল্পনার কপিরাইট উঠে গিয়েছে। ফলে ছবিটি অবাণিজ্যিক ভাবে দেখাতে অন্তত বাধা নেই। বাণিজ্যিক ভাবেও ওয়েব-দুনিয়ায় বা ডিভিডি কি ব্লুরে আকারে ‘কল্পনা’ সকলের সামনে আসা উচিত। আমি চাইব, স্বত্বাধিকারের মামলা যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা ‘কল্পনা’কে দর্শকের সামনে তুলে ধরুন।’’

Advertisement

ছবিটির বর্তমান স্বত্বাধিকারী সুলেখা জিন্দলেরও ইচ্ছা সে রকমই। সুলেখার কথায়, ‘‘আমরাও চাই, উপযুক্ত মর্যাদা নিয়েই কল্পনা সামনে আসুক।’’

জিন্দলরা কল্পনার স্বত্বাধিকার পেয়েছেন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। ১৯৭৪ সালে উদয়শঙ্কর ছবিটির মাস্টার পজিটিভ ছাত্রী অনুপমা সেনগুপ্ত (দাস)-কে দিয়ে গিয়েছিলেন। সে সব দীর্ঘ দিন গল্ফ ক্লাব রোডের ফিল্ম সার্ভিস স্টুডিয়োর ভল্টে ছিল। এ ছাড়া কল্পনার একটি ডিউপ নেগেটিভ উদয়শঙ্করই ফিল্ম সংরক্ষণবিদ পি কে নায়ারকে দিয়েছিলেন, পুণের জাতীয় আর্কাইভের জন্য। ১৯৯৭ সালে অনুপমা ছবিটি বিক্রি করে দেন জনৈকা মন্দিরা করকে। মন্দিরার স্বামী প্রদীপ কর, পেশায় ব্যবসায়ী। দীর্ঘ দিন ফিল্ম সার্ভিস স্টুডিয়োর অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। ছবিটি ওঁরা কেনার পরেও এক বার রেস্টোরেশনের পরিকল্পনা হয়েছিল। তার মুখ্য উদ্যোক্তা ছিলেন উদয়শঙ্করের অনেক দিনের পরিচিত, শঙ্করস্কোপ-এর চিত্রগ্রাহক মহেন্দ্র কুমার। অধুনাপ্রয়াত মহেন্দ্র ঋত্বিক ঘটকেরও অন্যতম সহকারী ছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ‘নটীর পূজা’র রেস্টোরেশন তাঁরই করা। কিন্তু ওয়াকিবহাল সূত্রের খবর, কল্পনা নিয়ে তাঁদের কাজ বেশি দূর এগোয়নি। এর পরের বছরই, ১৯৯৮ সালে কল্পনার স্বত্বাধিকার নিয়ে মামলা শুরু হয়। এক দিকে শঙ্কর পরিবার এবং অন্য দিকে মন্দিরা-মহেন্দ্র-অনুপমা।

মামলা চলাকালীন ২০০২ সালেই মন্দিরা করের কাছ থেকে ছবিটি কিনে নেন সুলেখা জিন্দল। চুক্তি হয়, এই লেনদেন কার্যকর হবে মামলা মেটার পরে। সুলেখার স্বামী সুনীল জিন্দল ছবি প্রযোজনার সঙ্গে অনেক দিন যুক্ত। তাঁদের জিন্দল ফিল্মস এক সময়ে ‘কেদার রাজা’র মতো ছবি প্রযোজনা করেছে। সুনীলের কাকা সুরেশ জিন্দলই সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’র প্রযোজক। ‘কল্পনা’ মামলা শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। ফলে আইনের খাতায় শঙ্কর পরিবার ছবিটির স্বত্বাধিকার পায়নি। জিন্দলদের বক্তব্য, ‘‘মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। অতএব চুক্তি অনুযায়ী আমরাই এখন কল্পনার স্বত্বাধিকারী।’’

‘কল্পনা’র় মাস্টার পজিটিভ এখন জিন্দলদের কাছে। পাশাপাশি ‘কল্পনা’র দু’-দু’টি রেস্টোরেশনের কাজ হয়েছে। জাতীয় আর্কাইভের তরফে একটি রেস্টোরেশন হয়েছে ফ্রান্সের থমসন ফাউন্ডেশনে। আবার পি কে নায়ারের কাছে থাকা ডিউপ নেগেটিভটি ফিল্ম সংরক্ষণবিদ শিবেন্দ্র সিংহ দুঙ্গারপুরের হাত দিয়ে গিয়ে পৌঁছেছে প্রখ্যাত পরিচালক মার্টিন স্করসেসের ফিল্ম ফাউন্ডেশনে। তাঁরাও ছবিটি রেস্টোর করে কান উৎসবে দেখিয়েছেন। পুণে আর্কাইভের ডিরেক্টর প্রকাশ মাকদুম বলছেন, ‘‘দু’টি সংস্করণই আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে ছবি দেখানোর অধিকারী আমরা নই।’’

তা হলে ‘কল্পনা’র পুনর্মুক্তি ঘটবে কি? জিন্দলদের বক্তব্য, ‘‘আমরা যে ছবিটার স্বত্বাধিকারী, সে কথা সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং জাতীয় আর্কাইভকে জানিয়েছি। ছবিটার উপযুক্ত প্রচার যাতে হয়, তার জন্য যোগ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে দায়িত্ব দিতে চাই। কেউ এগিয়ে এলেই আমরা রাজি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন