acid attack

পোড়া মুখের জন্য চাকরি পাইনি কত বার...

কিন্তু জীবন সে ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারলাম কই?

Advertisement

সবিতা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ১৮:০৯
Share:

সবিতা বিশ্বাস।

অ্যাসিড ঢেলে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছিল আমার স্বামী। কারণ, আমি তাঁর অপরিসীম টাকার চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। প্রথমে গায়ে হাত, মারধর, তার পর এক দিন অ্যাসিড ছুড়ে দিল মুখে। ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল শরীরের। আশেপাশের লোকেরাই ধরাধরি করে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়, মা আর ভাই ছুটে আসে। প্রাণে বেঁচে যাই সে যাত্রায়, কিন্তু আসল লড়াইটা শুরু হয় তার পর।

Advertisement

প্রথাগত নিয়ম মেনে পুলিশ কেস , আইন আদালত। পুলিশি সাহায্য পাইনি। হাঁটতে চলতে পারতাম না। এত দৌড়ঝাঁপ, এত মানসিক চাপ—মা ভাবল, মেয়েটা আমার মরেই যাবে। প্রাণে তো বাঁচুক আগে। থাক ও সব পুলিশ, আদালত। পয়সাও ছিল না কেস টেনে নিয়ে যাওয়ার।

ইতিমধ্যে কেস বন্ধ হয়ে যায়। দু’তিন বছর বিছানায় শুয়ে ছিলাম। উঠতে পারতাম না। একটু চলার মতো অবস্থা হলে কেস রি-ওপেন করি আমি নিজেই। বিবিএ শেষ করি। কিন্তু সমাজ! যতই আমরা বলি, ‘চেহারা’ কোনও ব্যাপার নয়, তাও কোথাও না কোথাও গিয়ে বার বার সেখানেই আটকেছি।

Advertisement

দেখুন কী বলছেন সবিতা

বড় কোম্পানি থেকে কল এসেও পোড়া মুখের জন্য বাদ হয়ে গিয়েছি বহুবার। এখনও হই। রাস্তাঘাটে বেরোলে লোকের অদ্ভুতভাবে তাকানোতে যদিও কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি এখন। চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি। আমার ঠোঁট, হাত এগুলো কোনওমতে ঠিক করা হয়েছে। এখনও অনেক বাকি।

মা-বাবা নেই। আমি হোমে থাকি। রাগ হয় এই ভেবে, আমায় অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেওয়া সেই লোকটি, যে একদা আমার স্বামী ছিল, তাকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি।

আসলে কী জানেন, মেয়েদের লড়াইটা জন্ম থেকেই শুরু হয়। আর আমার ক্ষেত্রে সেই লড়াইটা যে খানিক বেশি তা আমি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছি। এ ভাবেই লড়তে লড়তে বেশ কিছু দিন হল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেয়েছি আমি। হারতে শিখিনি। হারতে চাইও না।

কিন্তু জীবন সে ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারলাম কই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন