মায়ের ভোগে

যতই আসুক না পোলাও, সাদা ভাত। খিচুড়ির কিন্তু কোনও বিকল্প নেই। ব্লগ লিখছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কিছু কিছু ব্যাপার বাঙালির জীবন থেকে মায়ের ভোগে চলে গেছে, ‘মায়ের ভোগ’ তার মধ্যে অন্যতম। আমার ধৃষ্টতা মার্জনীয়, তবু সব কিছুতেই আধুনিকতার আতিশয্যে, সত্যি করে বলুন তো আমাদের জীবনে কতটুকু শুদ্ধাচার আর অবশিষ্ট আছে? নেই-নেই বলতে বলতে উল্টো পথে হাঁটার কথা বলছি না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০০:১০
Share:

কিছু কিছু ব্যাপার বাঙালির জীবন থেকে মায়ের ভোগে চলে গেছে, ‘মায়ের ভোগ’ তার মধ্যে অন্যতম। আমার ধৃষ্টতা মার্জনীয়, তবু সব কিছুতেই আধুনিকতার আতিশয্যে, সত্যি করে বলুন তো আমাদের জীবনে কতটুকু শুদ্ধাচার আর অবশিষ্ট আছে? নেই-নেই বলতে বলতে উল্টো পথে হাঁটার কথা বলছি না। এগিয়ে যেতে হলেও কিছু জিনিসকে যে আঁকড়ে ধরতে হয়, থ্রিজি ফোরজি স্পিডে চলতে চলতে আমরা ভুলতে বসেছি সে কথা। মন্দিরে যেতে বলছি না, পাড়ার পুজোমণ্ডপেও বছর দশেক আগে যে-ভোগ রান্না হত, এখনকার কাজু-কিশমিশ-জাফরান-এলাচ-লবঙ্গ মেশা কসমো স্বাদের পাল্লায় পড়ে পুজোর ভোগের সেই সাবেক স্বাদটা আজ হাওয়া হতে বসেছে। কে না জানে, আমরা এখন ভোগের ব্যাপারেও ইন-ভোগ থাকাতে বিশ্বাস করি। অষ্টমী বা নবমীর ভোগ উঠে গিয়ে এখন পুজোর চারদিনই পাত পেড়ে খাওয়া। এটা যদিও খুবই সাধু এক সামাজিক উদ্যোগ, কিন্তু এর মধ্যে যদি ফাঁকতালে নবরতন পোলাও ঢুকে পড়ে, হার্ডকোর বাঙালি হিসেবে দাঁত কিড়মিড় করে কি না, আপনিই বলুন!

Advertisement

আসলে দুর্গাপুজোর অর্থনীতিটাই এখন সব। থিম থেকে শপিং ভায়া খাওয়াদাওয়া, বাজারই আপনাকে বলে দেবে কী খাবেন, কী দেখবেন, কী পরবেন। সুতরাং ভোগের স্থান শুধুমাত্র মণ্ডপে নয়, পাঁচতারা রেস্তোরাঁতেও। তাই খিচুড়ি থেকে পোলাও-এ উত্তরণ তো অবশ্যম্ভাবী। আদতে উতরোচ্ছে কি না, তা সময়ই বলবে। আমরা শুধু দেখব, কাঁসার থালা বা কচি কলাপাতা সাজানো রেস্তোরাঁয় লম্বা লাইন, অষ্টমীর স্পেশ্যাল মেনু : পিওর মাদার্স ভোগ অ্যাভেলেবল হিয়ার। বাজার যখন বলছে অথেনটিক, তবে তো বস, সেটাই ঠিক। অতএব বাঙালির মায়ের ভোগে যাওয়া আর আটকায় কে!

তবু শিবরাত্রির সলতে হয়ে এখনও বেশ কিছু বাড়ি, বেশ কিছু বনেদি বারোয়ারি পুজো ধরে রেখেছে মায়ের ‘ভোগে’র সেই সাবেকি স্বাদ। কিছুই অতিরিক্ত নেই তাতে, তবু মন রিক্ত হতে চায় এমন স্বাদের আস্বাদে। শহর কলকাতা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের নানা ছোট জেলাশহরে আজও প্রচলিত সেই সনাতন রীতির রেসিপি। কেষ্টনগর রাজবাড়ির পুজোয় সেরকম এক ভোগ-ভক্ষণ আমার জিভ আজীবন মনে রাখবে। আমি নিশ্চিত, আজকালকার ছেলেমেয়েরাও অমন স্বাদের সন্ধান পেলে পুজোর রাতে রেস্তোরাঁয় লাইন দেওয়া ছেড়ে দেবে।

Advertisement

কাউকে কিছু ছাড়ার কথা বলছি না। ত্যাগের নয়, ভোগের কথা বলতেই আমার আজকের ভ্যানতারা। আমরা তো সব সময়ই নতুন কিছু খুঁজি। আসুন না, এবারের পুজোয় খুঁজি সে রকম নতুন কিছু যা আদতে অনেক দিনের পুরনো। পুরনো সেই দিনের খাওয়াকে নতুন করে আবিষ্কার করতে দুগ্গা দুগ্গা বলে চেখে দেখি মায়ের আশীর্বাদ, অনেক কাল ধরেই যা বাংলার ঘরে ঘরে মা-মাসিমাদের হাত ধরে চলে আসছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন