মহসীন আখতারের সঙ্গে উর্মিলা
শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে, অভিভাবকরা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। না...না...গঙ্গারামকে নিয়ে চিন্তা নেই। টেনশন এটা নিয়ে যে, কবে মেয়ে গঙ্গারামকে বিয়ে করতে রাজি হবে। আজকের মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়েতে অনীহা, অনেক দিন ধরেই খেয়াল করা যাচ্ছে। এই ট্রেন্ড আরও বেশি করে সমক্ষে এলো, উর্মিলা মাতণ্ডকর এবং প্রীতি জিন্টার বিয়ের খবর চাউর হতেই। দু’জনেই বিয়ে করলেন ৪০-এর কোঠায়।
কোনও তাড়াহুড়ো না করে
‘রঙ্গিলা’র সেই মেয়েটি, যাঁর সরু কোমর-দেখানো মিনি স্কার্ট পরা অনবদ্য নাচে মজেননি এমন পুরুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বা সাবানের বিজ্ঞাপনে, ঝরনার জলে সিক্ত সেই কন্যা, যার গালের গভীর টোল দেখে টাল খাননি, এমন বুকের পাটা আছে নাকি কারও? এহেন উর্মিলা আর প্রীতি, একজন ৪২-এ অপরজন ৪১- এ বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। নিজেদের কেরিয়ারের সেরা সময়ে চুটিয়ে কাজ করে, নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে, অবশেষে ধীরে সুস্থে নিজের মনের মানুষকে খুঁজে নিলেন দু’জনে। তবে কি নায়িকাদের এটাই নতুন ট্রেন্ড হতে চলেছে? শুধু অভিনেত্রী কেন, সব মেয়েরাই তো ভাবতে পারেন, বলছেন অভিনেতা পার্নো মিত্র। বললেন, ‘‘জানুয়ারিতে আমার এক আত্মীয়া বিয়ে করলেন ৪২ বছর বয়সে।’’
প্রীতি ও জিন গুডএনাফ
ডেমি ম্যুর থেকে হ্যালি বেরি
নায়িকাদের চল্লিশে বিয়ে হওয়াটা আমাদের দেশে নতুন, কিন্তু বিদেশে অনেকেই ৪০/৪৫-এ বিয়ে করেন। ডেমি ম্যুর, হ্যালি বেরি বিয়ে করেছেন ৪০-এ পা দিয়ে। সমাজতাত্ত্বিকরা তো বলছেন, ৪০-এ বিয়ে বেশ বুদ্ধিমানের কাজ। উড়ু উড়ু ব্যাপারটা তখন কমে আসে, সংসারে মন বসে।
‘বিইং সিঙ্গল’ এখন নতুন স্ট্যাটাস
বিয়ে না করলে নিরাপত্তাহীনতা গ্রাস করবে, এই ধারণাটাই বদলে গেছে। এক সময় দেখা যেত, নায়িকারা ৩০ পেরোলেই তাড়াতাড়ি কোনও এনআরআই বা ব্যবসায়ী বা প্রযোজককে বিয়ে করছেন। বয়স বাড়লে পাছে গ্ল্যামার কমে যায়, পাছে ভাল পাত্র না জোটে। এখন নায়িকারা নিজেদের জীবন চুটিয়ে উপভোগ করতে চান। মন দিতে চান কেরিয়ারে। সে জন্যই অনুষ্কা আর বিরাট কোহলির ব্রেক আপের পর অনুষ্কা অনায়াসে ‘সুলতান’ ফিল্মের কাজে মন দেন। অনেকে দেরি করে বিয়ের কথা ভাবেন। টালিগঞ্জের নায়িকা মিমি। বিয়ের কোনও তাড়া নেই তাঁর। বললেন, ‘‘যখন মনে হবে, তখনই বিয়ে করব। আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে তাই বিয়ে করব, এটা কোনও যুক্তিই না।’’
বিয়ের আগে মন যা চায়, যে ভাবে চায়, সে ভাবে থাকবেন—আজকের দিনের নায়িকাদের এই ভাবনা খুবই স্বাভাবিক মনে করছেন মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম। কারণ ‘বিইং সিঙ্গল’ এখন নতুন স্ট্যাটাস। কিন্তু দেরিতে বিয়ে মানে তো, দেরিতে সন্তান। তবে আজকের দিনে তা কোনও সমস্যাই নয়। ডায়না হেডেন বিয়ের ৮ বছর আগে নিজের সন্তানের কথা ভেবে দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন বলেই আজ ৪২ বছরে মা হয়েছেন তিনি।
আসলে মনের মানুষের খোঁজ চলছেই
দেরিতে বিয়ের পক্ষপাতী নন অভিনেতা তনুশ্রী। যিনি বর্তমানে ব্যস্ত ‘মহানায়ক’ সিরিজের শুটিংয়ে। তার মানে মুখে নায়িকারা যতই কেরিয়ার বলুন না কেন, আসলে ভেতরে ভেতরে মনের মানুষের খোঁজ চলতে থাকে। পেলেই বিয়ে। তাই কি? “একেবারেই তাই। ঊর্মিলা আর প্রীতিরও নিশ্চয় তাই হয়েছে। মনের মানুষ খুঁজে পেতে দেরি হয়েছে,” বলছেন তনুশ্রী। সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র লক্ষ করেছেন, ৪০-এ বিয়ের ফলে ‘মিড লাইফ ক্রাইসিস’ কম হয়। কারণ জীবন শুরুই হচ্ছে মিড লাইফে। সে ক্ষেত্রে বিয়ে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু সমাজ কি এত সহজে মেনে নেবে মেয়েদের এই সিদ্ধান্ত? আর শুধু মেয়েদের কথাই বা কেন, খুব সম্প্রতি যেমন কবীর বেদির বিয়ে সকলের চোখ কপালে তুলে দিয়েছিল, এমনকী তাঁর মেয়ে পুজা বেদিও বেশ আগুন-ঝরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন প্রথমে। কবে বিয়ে, বয়স তো হল...এই জাতীয় প্রশ্ন নায়িকাদেরও সহ্য করতে হয়। কিন্তু তাতে কি? আজকের গ্যাং অব গার্লস নিজের শর্তে জীবন বাঁচেন। ওদের আর্ট অব লিভিং এটাই।
কী ভাবছেন, নায়িকারা যদি পারেন ৪০-এ বিয়ে করতে। আপনি নয় কেন। বলেই দেখুন না বাবা-মা’কে, দেখবেন তাঁরাও আপনার মনের কথা ঠিক বুঝতে পারবেন। দিলওয়ালাদের দেশে নায়ক বলেছেন, ‘বড়ে বড়ে দেশো মে ছোটি ছোটি বাতে হোতি রহতি হ্যাঁয়।’ তাই ৪০- এ বিয়ে নিয়ে অকারণ চিন্তিত হবেন না। নির্দ্বিধায় প্রেমে পড়ুন, যখন ইচ্ছে তখনই বিয়ে করুন।