Monica O My Darling review

খুন-পরকীয়া-লোভের ককটেল, কেমন হল ‘মনিকা, ও মাই ডার্লিং’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

খুনের পর খুন, পরকীয়া, মধ্যবিত্তের উচ্চাশা, কর্পোরেট দুনিয়ার অবিশ্বাস, বিশ্বাসঘাতকতা— বসন বালার ছবি ‘মনিকা, ও মাই ডার্লিং’-এ মশলা ভরপুর। পরিচালক রেঁধেছেনও পাকা রাঁধুনির মতো।

Advertisement

আকাশ দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ১৭:২২
Share:

কেমন হল ‘মনিকা, ও মাই ডার্লিং’? ছবি: সংগৃহীত।

“ইয়ে এক জিন্দেগি কাফি নেহি হ্যাঁয়! কিতনা ভি হো তু বেগুনা মাফি নেহি হ্যাঁয়।” ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মনিকা, ও মাই ডার্লিং’ ছবির মূল সুর ধরা আছে বরুণ গ্রোভরের লেখা এই গানটিতেই। খুনের পর খুন, পরকীয়া, মধ্যবিত্তের উচ্চাশা, কর্পোরেট দুনিয়ার অবিশ্বাস, বিশ্বাসঘাতকতা— বসন বালার এই ছবিতে বিরিয়ানির মশলা ভরপুর। পরিচালক রেঁধেছেনও পাকা রাঁধুনির মতো। নির্মেদ কাহিনি আর টানটান চিত্রনাট্যে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখ সরানো যাবে না পর্দা থেকে।

Advertisement

খুনের পর খুন, পরকীয়া, মধ্যবিত্তের উচ্চাশা, কর্পোরেট দুনিয়ার অবিশ্বাস, বিশ্বাসঘাতকতা— বসন বালার এই ছবিতে বিরিয়ানির মশলা ভরপুর।

আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা জয়ন্ত আরখেদকর ইউনিকর্ন নামের একটি সংস্থার কর্মী। জয়ন্ত তথা রাজকুমার রাও প্রযুক্তিবিদ্যায় দক্ষ। কিন্তু তার থেকেও বেশি দক্ষ সাফল্যের হিসাব কষায়। সংস্থার মালিকের মেয়ের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে, কোটিপতি মালিকেরও জামাই তথা সংস্থার ভবিষ্যতের মালিক হিসাবে বেশ মনে ধরে তাঁকে। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থায় উপরে ওঠার সিঁড়ি বেশ প্যাঁচালো। সেই প্যাঁচে কে বন্ধু আর কে শত্রু, তা বুঝে উঠতে উঠতেই একের পর এক খুন হতে শুরু করে সংস্থার ভিতর। খুন হতে হতে বাঁচে জয়ন্ত নিজেও। কে করছে এত খুন? একই অফিসে কাজ করা মনিকা মাচাডোর (হুমা কুরেশি) সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক ছিল জয়ন্তের। তবে কি, খুনের পিছনে সেই মনিকাই?

সব মিলিয়ে যাঁরা রহস্য-রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য মনিকা, ও মাই ডার্লিং যে বেশ উপাদেয় হবে। ছবি: সংগৃহীত।

রহস্যের সঙ্গেই ছবিতে রয়েছে ভরপুর স্যাটায়ার ও রোমাঞ্চ। পঞ্চাশের দশকে আমেরিকায় এক ধরনের বিশেষ ছবি তৈরি হত। নাম, নিউ নয়ার। এই ছবি কিছুটা সে ভাবেই তৈরি। ঠিক ভুলের নৈতিক কাঠামো নেই। পরিচালক বলে দেন না, শুধু ঘটনার পর ঘটনা দেখান। আলো-আঁধারের খেলায় কখন কী হয়, এমন একটা ছন্দেই এগিয়ে চলে ছবিটি।

Advertisement

যে ছবিতে রাজকুমার রাও, রাধিকা আপ্তে ও হুমা কুরেশির মতো অভিনেতা রয়েছেন সেই ছবির অভিনয় নিয়ে প্রত্যাশা থাকবেই। কিন্তু সোজা কথায় এ ছবিতে তথাকথিত তারকাদের টেক্কা দিয়েছেন অন্যান্য চরিত্ররা। তাঁদের ঠিক পার্শ্বচরিত্র বলা যায় না। দাবার বোর্ডে যেমন ঘোড়া থেকে মন্ত্রী, সবেরই নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে, এই ছবিতেও কিছুটা তেমনই। রাজকুমার রাও কিংবা হুমা কুরেশি রাজা-মন্ত্রী হতে পারেন, তবে ভুললে চলবে না, এই খেলায় বড়েও কিস্তিমাত করতে পারে। অরবিন্দের চরিত্রে দক্ষিণী অভিনেতা বাগবতি পেরুমল আর গৌরব মোরের চরিত্রে সুকান্ত গোয়েল চমকে দিয়েছেন। ছবির ধর্ম অনুযায়ী কিছুটা আরোপিত অভিনয় দরকার ছিল হয়তো। রাধিকা আপ্তের চরিত্রটি বরং কিছুটা অসম্পূর্ণ লেগেছে।

কাহিনির গতি ও ঘটনার মারপ্যাঁচ যদি ছবির সম্বল হয়, তবে দুর্বলতা হল যুক্তি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাক্রম অতিরঞ্জিত মনে হয়। বিশেষ করে ছবির তার যদি নিচু হত, তবে সেই সব রং বেমানান লাগত না। কিন্তু রাজকুমার রাওয়ের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য, কিংবা প্রাণবায়ু প্রায় নির্গত হয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই চরিত্রদের একেবারে স্বাভাবিক আচরণ করার মতো বিষয় কিছুটা হলেও বিড়ম্বনা ডেকে এনেছে। তা ছাড়া, কোনও কোনও চরিত্রে কিছুটা নিরামিষ অভিনয় দেখতে পেলেও অসুবিধা হত বলে মনে হয় না। আলাদা ভাবে উল্লেখ করতে হয় আবহসঙ্গীতের কথাও। অচিন্ত্য ঠক্করের কাজ মনে রাখার মতো। সব মিলিয়ে যাঁরা রহস্য-রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য ‘মনিকা, ও মাই ডার্লিং’ যে বেশ উপাদেয় হবে তা নিয়ে বিশেষ সংশয় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন