Mumbai Diaries 26/11

Mumbai Diaries 26/11: আরও রোমহর্ষক হতে পারত

শুরুতেই ডিসক্লেমারে দেখিয়ে দেওয়া হয়, বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে তৈরি এই সিরিজ়ের মূল উদ্দেশ্য অকুতোভয় প্রাণগুলিকে কুর্নিশ জানানো, যাঁদের কারণে মুম্বই ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিল।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৭
Share:

একাধিক তথ্যচিত্র এবং পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি (যেমন ‘হোটেল মুম্বই’, ‘দ্য অ্যাটাকস অব ২৬/১১’) হওয়ার পরে অ্যামাজ়ন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ় ‘মুম্বই ডায়েরিজ় ২৬/১১’। বাণিজ্যনগরীর বুকে আছড়ে পড়া তেরো বছর আগের বিভীষিকাময় তিন রাত কী ভাবে ওটিটির দর্শকের কাছে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা যায়, সেটাই ছিল পরিচালক নিখিল আডবাণী এবং নিখিল গনজ়ালভেসের মূল ভাবনা। বম্বে জেনারেল হাসপাতালের (বাস্তবে মুম্বইয়ের কামা হাসপাতালের ভাবনায় দেখানো) সিনিয়র-জুনিয়র ডাক্তারদের নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পরিচালকদ্বয় বলতে চেয়েছেন, ইয়ে হ্যায় মুম্বই মেরি জান...

Advertisement

শুরুতেই ডিসক্লেমারে দেখিয়ে দেওয়া হয়, বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে তৈরি এই সিরিজ়ের মূল উদ্দেশ্য অকুতোভয় প্রাণগুলিকে কুর্নিশ জানানো, যাঁদের কারণে মুম্বই ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিল। তাই সিরিজ় কতটা বাস্তবকে অনুসরণ করেছে, সেই চুলচেরা বিশ্লেষণ অবান্তর। ডাক্তার এবং ডাক্তারি পরিভাষা যে সিরিজ়ের প্রাণ, তা পর্বগুলির নামকরণে স্পষ্ট। ‘ডায়াগনসিস’, ‘কমপ্লিকেশনস’, ‘ম্যালিগন্যান্ট’ নামের পর্বগুলিতে এক দিকে দেখানো হয়েছে সন্ত্রাসের আবহে ধ্বস্ত মুম্বই নগরীকে, অন্য দিকে সেই চিকিৎসকদের ব্যক্তিজীবনের আভাসও ফুটে উঠেছে ফ্ল্যাশব্যাকে। সিরিজ়ের শুরুটা উৎসাহ জাগায়। কিন্তু আটটি পর্বের সিরিজ়ে রুদ্ধশ্বাস ভাবটা ধরে রাখতে পারেননি নির্মাতারা। বিশেষত, যখন মুম্বইয়ে সন্ত্রাস হামলার মতো সম্ভাবনাময় প্লট হাতে ছিল, তখন তা খোলতাই করার জন্য চিত্রনাট্যকারদের আরও একটু ভাবতে হত। মাঝের পর্বগুলিতে গল্প যেন একই জায়গায় ঘুরপাক খায়। সিরিজ়ের সবচেয়ে রোমহর্ষক এপিসোড বলা যায় ‘রিল্যাপ্স’কে। কারণ তখন হাসপাতাল হয়ে উঠেছে রণক্ষেত্র।

মুম্বই ডায়েরিজ় ২৬/১১ (ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: নিখিল আডবাণী, নিখিল গনজ়ালভেস
অভিনয়: মোহিত, কঙ্কণা, শ্রেয়া, মৃণ্ময়ী, সত্যদেব, দিয়া
৬/১০

Advertisement

সিরিজ়ের অন্তরায় বলতে, সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীন পরিবেশন। ব্রেকিং স্টোরির জন্য মানসী (শ্রেয়া ধন্বন্তরী) ওই ভয়াবহ রাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোয় বাধ্য করে। এতটা লাইসেন্স নেওয়া এমন সিরিজ়ে বিসদৃশ। ‘পাতাল লোক’ সিরিজ়টি আবর্তিত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমকে ঘিরে। এখানে বিষয়টি যে আরোপিত, তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

এখনকার সিরিজ়ে বার্তা দেওয়ার দায়বদ্ধতাও মাথায় রাখতে হয় নির্মাতাদের। নিম্নবর্ণের এক নতুন ডাক্তারের (সুজাতার চরিত্রে মৃণ্ময়ী দেশপাণ্ডে) কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে আপত্তি জানায় উচ্চবর্ণের এক ইনস্পেক্টর (ময়াঙ্কের চরিত্রে অক্ষর কোঠারি)। আবার সন্ত্রাসবাদী হিসেবে মুসলিমদের দিকে একতরফা আঙুল তোলা এড়ানোর জন্য অবতারণা করা হয়েছে চুরাশির শিখ-বিরোধী দাঙ্গার। সিরিজ়ে লিয়োপোল্ড কাফে, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসের নাম থাকলেও, তাজ হোটেলকে ‘প্যালেস হোটেল’ বলা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ২৬/১১-র বাস্তব ফুটেজও।

সব ত্রুটি খানিক লাঘব করতে পেরেছেন অভিনেতারা। ডাক্তার কৌশিক ওবেরয়ের চরিত্রে মোহিত রায়না অসাধারণ। ছোট পর্দার অভিনেতারা যে ভাবে ওটিটিতে নিজের উপস্থিতি তুলে ধরছেন, তা প্রশংসনীয়। চিত্রা দাসের চরিত্রে কঙ্কণা সেন শর্মা ভাল। তবে তাঁকে আরও পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। জুনিয়র তিন ডাক্তারের চরিত্রে সত্যজিৎ দুবে (অহন), নাতাশা ভরদ্বাজ (দিয়া) এবং মৃণ্ময়ী ভাল। নজর কেড়েছেন পুষ্করাজ চিরপুটকার (সমর্থ), সন্দেশ কুলকার্নি (এসিপি মহেশ তাওড়ে)। সিরিজ়ের কালার ট্রিটমেন্ট এবং প্রোডাকশন ডিজ়াইনিং প্রশংসার দাবি রাখে।

ওটিটিতে কনটেন্টের এত ভিড় যে, ছকে বাঁধা উপাদান সব সিরিজ়ে থাকবেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছকভাঙা হয়ে উঠতে পারেনি এই সিরিজ়। সেখানেই এর ব্যর্থতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন