Rana Sarkar Will Produce Theater

নাট্য দুনিয়ায় কি নতুন ঝোঁক? সাংসদ-অভিনেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মঞ্চ দুনিয়ায় আসছেন কে?

নাট্য নির্দেশক অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, নাট্য দুনিয়া রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা নেয়। এ বার না হয় বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাবে। এতে অনেক নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁর আশা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ১৬:০২
Share:

কোন প্রযোজক নাটক প্রযোজনা করবেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মঞ্চ থেকে রুপোলি পর্দায় বহু মানুষ এসেছেন, আসছেন। কেউ ছবি বা সিরিজ় পরিচালনা করছেন। যেমন, মঞ্চাভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সাম্প্রতিক পরিচালনা সিরিজ় ‘মন্দার’, বা ছায়াছবি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। অর্ণ মুখোপাধ্যায়ও একই পথে হেঁটে বানিয়েছেন ‘অথৈ’। তাঁর দ্বিতীয় ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। এঁদের অনেক আগে সুমন মুখোপাধ্যায় করেছেন ‘হারবার্ট’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘অসমাপ্ত’ এবং মু্ক্তির অপেক্ষায় তাঁর ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। অনেকেই আবার অভিনেতা হিসাবে খ্যাতনামী। যেমন, কৌশিক সেন, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। তবে বিপরীত দৃষ্টান্তও রয়েছে। সম্প্রতি, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় অভিনয় করলেন কৌশিক সেনের ‘স্বপ্নসন্ধানী’ নাট্যদলের নাটক ‘মার্কস ইন কলকাতা’-তে। ছবি-সিরিজ় পরিচালনা করলেও সৃজিতও মঞ্চ থেকে এসেছেন। খবর, বেঙ্গালুরুতে একটা সময় নিয়মিত নাটক করতেন তিনি।

Advertisement

সিনেমা ও নাট্য দুনিয়ার মধ্যে এমন আদানপ্রদান চললেও ছবির প্রযোজকেরা কিন্তু মঞ্চ দুনিয়াকে বরাবর এড়িয়েই চলেছেন। মঞ্চ মাধ্যমটিকে আরও শক্তিশালী করতে কখনওই সহযোগিতার হাত বাড়াতে দেখা যায়নি তাঁদের।

এ বার সেই পথে হাঁটতে চলেছে প্রযোজক রানা সরকারের দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া। খবর, রাজনীতিবিদ-অভিনেতা পার্থ ভৌমিকের নাট্যদল ‘বাংলা অপেরা’র নতুন নাটক প্রযোজনা করছেন তিনি। পার্থ এবং রানা একযোগে আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন, ২৫ অগস্ট বিড়লা সভাগৃহে তাঁরা যৌথ ভাবে মঞ্চস্থ করতে চলেছেন ‘কনকচাঁপা’। পরিচালনায় রঞ্জন দত্ত। নাটকের মহড়া জোরকদম চলছে। পার্থর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কঙ্কাল’ ছোট গল্প অবলম্বনে আমাদের প্রথম কাজ।” অভিনয়ে অনুরণ সেনগুপ্ত, সায়ন্তন মৈত্র, রোহন ভট্টাচার্য, দেবলীনা সিংহ, ঋক দেব প্রমুখ।

Advertisement

রানার প্রযোজিত ছবি ‘অঙ্ক কী কঠিন’ ভাল ব্যবসা করেছে। ১৪ অগস্ট মুক্তি পাবে তাঁর ন’বছর আগে তৈরি হওয়া ছবি ‘ধূমকেতু’। শুটিং চলছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’। হঠাৎ কেন মঞ্চের দুনিয়ায়? জবাবে প্রযোজকের যুক্তি, “আমরা কোটি টাকা খরচ করে একটা ছবি বানাই। সেই অর্থে একাধিক নাটক মঞ্চস্থ করা যায়। শহরতলিতে এখনও নাটক নিয়ে নিয়মিত চর্চা হয়। নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ হয়। শনি এবং রবিবার থিয়েটার হলগুলোতে একটাও আসন ফাঁকা থাকে না। কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটার, তপন মঞ্চ বা হাওড়ার শরৎ সদন— সর্বত্রই এক ছবি।” এ সব দেখেই তাঁর মনে হয়েছে, ছবির পাশাপাশি নাটক প্রযোজনা করলে এই মাধ্যমটি আরও শক্তিশালী হবে।

সে ক্ষেত্রে প্রযোজকের হাত ধরে অনেক পর্দাসফল অভিনেতা হয়তো নাট্যদুনিয়ায় পা রাখার ইচ্ছাপ্রকাশ করবেন। দুই মাধ্যমের অভিনয়রীতি একটু হলেও আলাদা। তাঁরা কি মঞ্চাভিনেতাদের মতো নিখুঁত অভিনয় করতে পারবেন? ‘কনকচাঁপা’ নাটকের পরিচালক রঞ্জনের যুক্তি, মঞ্চ থেকে পর্দায় যোগ দেওয়ার সময় মঞ্চাভিনেতাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। দুই মাধ্যমের অভিনয়শৈলী আলাদা বলে। একই ভাবে পর্দা থেকে মঞ্চে পা রাখার আগে পর্দার অভিনেতাদেরও প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

এ দিকে, সাংসদ-অভিনেতা পার্থ জানিয়েছেন, তাঁর দলের নাটক ‘আনন্দ’ সম্প্রতি নাট্যমেলায় মঞ্চস্থ হয়। হিন্দি ছায়াছবি ‘আনন্দ’-এর নাট্যরূপ এটি। নাটক দেখার পর প্রযোজক তাঁকে নাট্য প্রযোজনার প্রস্তাব দেন। পার্থ মঞ্চের পাশাপাশি পর্দাতেও নিয়মিত অভিনয় করেন। তাঁর কথায়, “ছবির প্রযোজকেরা যদি নাটকের প্রতি সমান মনোযোগী হন তা হলে মঞ্চ দুনিয়ার খরা কাটবে।”

নাটক থেকে ইদানীং ছবি, সিরিজ় তৈরির ঝোঁক বেড়েছে। বাদল সরকারের বিখ্যাত নাটক ‘পাগলা ঘোড়া’ পর্দায় দেখাতে চলেছেন পরিচালক শেখর দাশ। আগামী দিনে ছায়াছবি থেকে নাটক মঞ্চস্থ হবে? পার্থ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁর দল ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘বসন্তবিলাপ’, ‘আনন্দ’ ছবির গল্প নিয়ে নাটক করেছেন। রানার মতে, তাঁর ভাবনায় বিষয়টি রয়েছে।

বিষয়টিকে কী চোখে দেখছেন মঞ্চ এবং পর্দার সফল পরিচালক-অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়?

অর্ণ বিষয়টি প্রথম জেনেছেন আনন্দবাজার ডট কম থেকে। নাট্য প্রযোজনায় ছবির প্রযোজকের এগিয়ে আসার পদক্ষেপকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি কিন্তু আশাবাদী। রানাদার মতো আরও প্রযোজক এই পদক্ষেপ করলে মঞ্চাভিনেতা বা পরিচালকেরা আরও পেশাদার হয়ে উঠবেন।” তাঁর আরও দাবি, নাট্য দুনিয়া রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা নেয়। এ বার না হয় বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাবে। এতে অনেক নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁর আশা। নাট্যমঞ্চে রুপোলি পর্দার ছোঁয়া লাগলে কি এই প্রজন্ম আরও বেশি উৎসাহিত হবে? অর্ণর বক্তব্য, রুপোলি পর্দার ছোঁয়ায় নাটক নিয়ে এই প্রজন্মের আগ্রহ বাড়বে কি না, তা নিয়ে তিনি বিন্দুমাত্র ভাবিত নন। বরং তাঁর যুক্তি, “পাঁচ হাজার বছর ধরে এই শিল্পটি টিকে আছে সীমিতসংখ্যক মানুষের আগ্রহের কারণেই। থিয়েটার এমনই একটি আর্ট ফর্ম, যার সব স্তরের মানুষকে ভাল লাগানোর দায় নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement