Kaushik Ganguly

Tiktiki Review: ক্লাসিকের স্মৃতিচারণমাত্র

আধুনিক সিরিজ়ের ফরম্যাটে এনে পরিবেশন করা হচ্ছে, সেখানে তাড়াহুড়ো করে ফেললে রহস্যের নির্মাণপর্বটিই যেন নড়বড়ে হয়ে যায়।

Advertisement

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ০৮:১৪
Share:

নব্বইয়ের দশকের ‘স্বপ্নসন্ধানী’র তুমুল জনপ্রিয় নাটক ‘টিকটিকি’কে এখনকার দর্শকের জন্য ওয়েব সিরিজ়ে পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। অত্যন্ত সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ, সন্দেহ নেই। বিশেষ করে, যে দর্শক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-কৌশিক সেন অভিনীত মূল নাটকটির মঞ্চরূপ দেখেছেন, তাঁদের কাছে ওয়েব সিরিজ়টি কতখানি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে, সে চ্যালেঞ্জও ছিল পুরোমাত্রায়। অ্যান্থনি শেফারের এই ক্লাসিক নাট্যনির্মাণ থেকে ১৯৭২ সালেই তৈরি হয়ে গিয়েছে ‘স্লুথ’-এর মতো ছবি। মাইকেল কেন-লরেন্স অলিভিয়েরের অনবদ্য পারফরম্যান্স যে ছবিকে কালোত্তীর্ণ করেছে। অতএব, প্রত্যাশার পারদ চড়ে ছিল প্রথম থেকেই। ছিল নাট্যরূপকে সিরিজ়ের পর্বে বেঁধে ফেলার গুরুদায়িত্বও। পরিচালক প্রথম রাউন্ডে পাশ করে গিয়েছেন এই মুহূর্তে বাংলার অন্যতম শক্তিশালী দুই অভিনেতাকে নির্বাচন করে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যের দ্বৈরথ হইচই-এর ছয় পর্বের এই সিরিজ়ের নির্মাণের অনেক দোষত্রুটিই ঢেকে দিয়েছে। বাকিটা নস্ট্যালজিয়া উস্কে দিয়েছে মাত্র, তার বেশি কিছু নয়।

Advertisement

অতীতের মঞ্চসফল প্রযোজনা যখন আধুনিক সিরিজ়ের ফরম্যাটে এনে পরিবেশন করা হচ্ছে, সেখানে তাড়াহুড়ো করে ফেললে রহস্যের নির্মাণপর্বটিই যেন নড়বড়ে হয়ে যায়। প্রেক্ষাপট এক রেখে মূল নাটকের পাত্রদের নাম-ধাম-পেশা এখানে বদলে ফেলা হয়েছে। সঙ্গত ভাবেই, আনা হয়েছে ল্যাপটপ, মোবাইলের আধুনিক অনুষঙ্গও। একটা সময় ছিল, যখন এ দেশীয় অভিজাত, উচ্চবংশের কেউ কেউ ‘রিফিউজি’ বা ‘বাঙাল’ শব্দটি ও পার বাংলা থেকে আসা কোনও ব্যক্তির প্রতি প্রায় গালিবর্ষণ করার মতো করে প্রয়োগ করতেন। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সে রেফারেন্স ততটা জোরালো ভাবে খাটে কি? বরং শিক্ষা-সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির ফারাক বোঝানোর জন্য খুব সহজ ও বাংলা সিরিজ়ে প্রচলিত কিছু লঘু উপসর্গ ব্যবহার করা হয়েছে। দর্শক পাল্টেছেন, পাল্টেছে তাঁদের ‘রিঅ্যাকশন’ও। চরিত্রদের মুখে আদিরসাত্মক সংলাপ ও গালাগালি বসালেই এখন হাততালি পাওয়া যায় হয়তো। তবে সেটা ছাড়াও যে প্রেক্ষাগৃহে ঝড় তোলা যেত, তা এক সময়ে দেখিয়ে গিয়েছে এই নাটক।

টিকটিকি
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়: কৌশিক, অনির্বাণ
৫/১০

Advertisement

‘টিকটিকি’ নাটকের সত্যসিন্ধু চৌধুরীর (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) ছায়ায় সিরিজ়ের সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ দেব (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) খানিকটা গড়ে উঠলেও নব্বইয়ের দশকের বিমল নন্দী (কৌশিক সেন) আর ২০২২-এর মিলন বসাকের (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) মধ্যে প্রকৃতিগত ভাবে বিস্তর ফারাক। আর সময়ের দাবি মেনে কিছু ফারাক আপনা থেকে তৈরি হয় বলেই এ বারের প্লট সাজানোয় কিছু অভিনবত্ব যোগ করার প্রয়োজন ছিল। আরও যত্নশীল হওয়ার দরকার ছিল মিলন-সৌমেন্দ্রর চরিত্র দু’টির প্রেক্ষাপট রচনায়। মিলনকে নিজের পরিকল্পনামাফিক ‘গেম’-এ শামিল করতে সৌমেন্দ্রকৃষ্ণকে প্রায় কোনও কাঠখড়ই পোড়াতে হয়নি এখানে। জনশূন্য প্যালেসে চোর-পুলিশ খেলা ও পাল্টা খেলার পর্বগুলি যে ভাবে মূল টেক্সট অনুসরণে সাজানো হয়েছে, তা-ও ইন্টারনেটের যুগে প্রায় অবিশ্বাস্য ঠেকে। তবে চার দেওয়ালের মধ্য থেকে এই গল্পকে একটু হলেও বার করে আনা, মিলনের পাল্টা চাল ফিরে দেখানোর জায়গাগুলি ভাল লাগে। মনে রাখার মতো কাহিনির শেষটিও। এখানে দর্শকের জন্য চমক ও নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন পরিচালক।

অনির্বাণ এবং কৌশিক যুযুধান প্রতিপক্ষ রূপে জমিয়ে দিয়েছেন মগজের ডুয়েল। তাঁদের জন্যই সিরিজ়টি মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে বলা চলে। অনির্বাণ অভিনীত মিলনের চরিত্রটিতে আরও পরত যোগ করা যেত হয়তো। পুলিশ ইনস্পেক্টরের চরিত্রটির নির্মাণও অনবদ্য। ক্যামেরায় মুনশিয়ানার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে আলো-আঁধারির পরিবেশ। সেট নির্মাণের খুঁটিনাটিতেও সৃজনশীলতার ছাপ স্পষ্ট।

ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও ‘টিকটিকি’ যথার্থ ভাবেই তুলে ধরে এক চিরকালীন দ্বন্দ্বকে। ক্লাসিক-কে ছোঁয়ার চেষ্টা হিসেবেই এই সিরিজ় উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন