Ritwick Chakraborty

প্রধান চরিত্রে ঋত্বিক, বড় পর্দায় নতুন রূপে ‘রাজলক্ষ্ণী ও শ্রীকান্ত’

এ ফিল্মের রাজলক্ষ্ণী বাংলাদেশের অভিনেতা জ্যোতিকা জ্যোতি। ইতিমধ্যেই আটটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের এবং অনেক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফেলেছেন।

Advertisement

মৌসুমী বিলকিস

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ১২:১৭
Share:

‘শ্রীকান্ত’ ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং রাজলক্ষ্মীর চরিত্রে বাংলাদেশের অভিনেতা জ্যোতিকা জ্যোতি

ফিল্মের নাম যদি হয় ‘রাজলক্ষ্ণী ও শ্রীকান্ত’, তাহলে তো ছুঁয়ে যাবেই বাঙালির নস্টালজিয়া। তাই স্বভাবতই তুলনা আসবে।কেননা, ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের প্রথম পর্ব অবলম্বনেই এই ফিল্মের গল্প বোনা হয়েছে। ফিল্মের গল্প কোন সময়কে ধরছে?

Advertisement

পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ ফিল্মের জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার, বললেন, “বহুদিন ধরেই ‘শ্রীকান্ত’ করার ইচ্ছে ছিল, এবারে হল। যদিও এটা এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘রাজলক্ষ্ণী ও শ্রীকান্ত’। আমরা প্রচুর গান ব্যবহার করেছি।আমার নিজের মতে, ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেছেন বা ক্যামেরা, সাউন্ড, মিউজিক করেছেন,প্রত্যেকেই যথেষ্ট অবদান রেখেছেন এবং আমাদের ছবিটায় একটা ভাল টিমওয়ার্ক হয়েছে।টিমওয়ার্ক আমাদের ছবিতে একটা শক্তি এনে দিয়েছে। আশা করি সেটা দর্শকদের মধ্যেও প্রসারিত হবে, তাঁরা ছবিটা দেখবেন।আগামী২০ সেপ্টেম্বর রিলিজ করবে। এখনআড়াই মিনিটের ট্রেলার রিলিজ করছে।”

ফিল্মের চরিত্ররা কতটা সমসাময়িক? এই ফিল্মের ‘শ্রীকান্ত’ ঋত্বিক চক্রবর্তী বললেন, “ছবি দেখলে আমার সঙ্গে সবাই একমত হবে যে... পুরোটাও বলা যায় না। মানে এরকম ভাল ছবিটার বিন্যাস,সময়কালের যে দূরত্বটা আছে উপন্যাসের সঙ্গে আজকের সময়ের, সেটা কোথাও একটা ঘুচে যায় বলে আমার মনে হয়।”

Advertisement

অন্নদাদিদির ভূমিকায় অপরাজিতা ঘোষ দাস

পরিচালকের সঙ্গে প্রায় ছোটবেলার সম্পর্ক। প্রদীপ্তর ছোট-বড় অনেক ফিল্মেই তাঁকে দেখেছেন দর্শক। এই যুগলবন্দি থেকে এই ফিল্মে আলাদা কী পাওয়া যাবে? ঋত্বিক বললেন, “আমাদের দু’জনের জায়গা থেকে নতুন করে কী পাচ্ছি সেটা আমার বলা খুব কঠিন। আমরা দু’জনে একসঙ্গে বহুদিন ধরে কাজ করছি এবং প্রায় কাজ শুরুর সময় থেকেই। আমাদের বোঝাপড়া সাংঘাতিক। পরিচালক হিসেবে প্রদীপ্তর একটা যে নিজস্বতা আছে সেটা অভিনেতা হিসেবে আমাকে এবং সিনেমার দর্শক হিসেবে আমাকে একভাবে টানে। ফলে বন্ধুত্ব যেমন আছে, পারস্পরিক কাজের প্রতি সম্মানও আছে। এর ফলে ছবিটা কতটা আলাদা হল, সেটা আমার মনে হয় ছবি দেখার পর মানুষ বলতে পারবে।”

এ ফিল্মের রাজলক্ষ্ণী বাংলাদেশের অভিনেতা জ্যোতিকা জ্যোতি। ইতিমধ্যেই আটটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের এবং অনেক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফেলেছেন। তানভীর মোকাম্মেল, সারাহ্‌ কবরী,শবনম ফেরদৌসী, মাসুদ পথিক,মোরশেদুল ইসলাম প্রমুখ বাংলাদেশের প্রতিথযশা পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন।

রাজলক্ষ্ণী বাংলাদেশের অভিনেতা জ্যোতিকা জ্যোতি

রাজলক্ষ্ণীর মতো ধ্রুপদী চরিত্র আগেই দুই দেশের দুই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী করেছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেমন লাগছে? জ্যোতিকা জ্যোতির মন্তব্য: “‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’ শুনলে মানুষের মনে যা আসে সেটা আমার ওপর এক ধরনের প্রেশার তৈরি করেছে। আগে কলকাতায় রাজলক্ষ্ণী করেছিলেন সুচিত্রা সেন, আর বাংলাদেশে রাজলক্ষ্ণী করেছিলেন শাবানা। তো আমি শুরু থেকেই খুবই চাপে ছিলাম।”

কলকাতার মতো বাংলা ডায়ালেক্টকীভাবে আয়ত্ত করলেন? তিনি বললেন, “এই জায়গাটায় আমি একেবারেই ছাড় দিতে রাজি হইনি, আমার ডিরেক্টরও না। আমি এক ধরনের ওয়ার্কশপের মধ্যেই ছিলাম। এক বছর ফুল টাইম দিয়েছি এই ছবির প্রিপারেশনের জন্য।পরিচালকের কথা মেনেই আমি কলকাতার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেছি, রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি, লোকজনের কথা শুনে বোঝার চেষ্টা করেছি, শেখার চেষ্টা করেছি। এত বড় প্রোজেক্ট, এত বড় একটা কাজ... আমি আমার হাণ্ড্রেড পারসেন্ট দিয়ে চেষ্টা করেছি। ওই সময় দেড়/দু’বছর অন্য কোনও কাজ করিনি। শুধু রাজলক্ষ্ণী নিয়েই ছিলাম। এখনও কাজের অফার পাচ্ছি, কিন্তু চুপ করে বসে আছি। এই ছবি রিলিজ করার পর ঠিক করব, কী করব না করব।”

অন্নদাদিদির ভূমিকায় অপরাজিতা ঘোষ দাস। উপন্যাসে অন্নদাদিদিকে একজন স্নেহময়ী হিসেবেই পেয়েছি। ফিল্মেও কি সেই স্পর্শ পাবেন দর্শক? অপরাজিতা বললেন, “এখানে আরও অনেক ডাইমেনশন অ্যাড করা হয়েছে। আমার চরিত্রটা খুবই চমকপ্রদ বলে আমার মনে হয়েছে। তার কারণ অন্নদাদিদির অনেক জ্বালাযন্ত্রণা ছিল উপন্যাসে। সেটাকে ধরেই একটা পথে হাঁটা হয়েছে। তো সেই জ্বালাযন্ত্রণার তীব্রতা ছবিতে খুবই চোখে পড়ে।”

আরও পড়ুন- তাইল্যান্ডে মগ্ন অবকাশ অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার

এই নিয়ে ঋত্বিকের সঙ্গে কোন কোন ফিল্মে স্ক্রিন শেয়ার করা হল? “প্রদীপ্তর আগের ছোট-বড় অনেক ছবিতে তো স্ক্রিন শেয়ার করেইছি, তাছাড়া‘চলো লেটস্‌ গো’, অতনু ঘোষের ‘এক ফালি রোদ’-এ একসঙ্গে পার্ট করেছি, অঞ্জনদার ‘হাতে রইলো পিস্তল’ করেছি। মাল্টিপল টাইম আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।”

ঋত্বিকের সঙ্গে পর্দা ভাগ করলে আলাদা কিছু মনে হয়? অপরাজিতা: “সত্যি কথা বলতে কি, আমি যখন অভিনয় করি তখন সত্যি মনে হয় না যে কার সঙ্গে পার্ট করছি। সমস্ত ব্যক্তিগত রিলেশন দেখবেন কাজের জায়গায় গিয়ে ঠিক ওইভাবে এক্সিস্ট করে না, অন্যভাবে হয়তো করে... ‘চা খাবি কিনা?’— এরকম আরকি। পার্ট করার পর হয়তো কখনও মনে হয়, ‘বাহ্! ওই জায়গায় আমাদের সুন্দর একটা ইন্টার‌অ্যাকশন হল।’ কাজের সময়নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই বেশি ইনভলভ়ড থাকি, প্রফেশনালি যেটা হওয়া উচিত আরকি।”

রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে হুকুমচাঁদ। শেয়ার করলেন, “প্রদীপ্তর ফিল্মে একেবারেই অন্যরকমভাবে গোটা বিষয়টা অপারেটেড হয়, অনেক বেশি অরগ্যানিক। নিজেরাও জড়িয়ে পড়ি সেই প্রসেসটার মধ্যে। তো সেটা খুব মজার।”

রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে হুকুমচাঁদ

শোনা যাচ্ছে আপনার চরিত্রটি একেবারেই শরৎচন্দ্রের নয়, প্রদীপ্তর? রাহুল: “হ্যাঁ, আমার চরিত্রটি উপন্যাসে নেই। হুকুমচাঁদ প্রদীপ্তর লেখা। এই চরিত্রটার একটা রাজনীতি আছে, একটা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডও আছে। বিকজ, আমরা নিজেরা ডিসাইড করে নিয়েছিলাম যে কোন পলিটিক্সে বিশ্বাসী।”

কোন পলিটিক্সে? রাহুল বললেন, “সেটার জন্য তো ফিল্মটা দেখতে হবে। হুকুমচাঁদের সবকিছুই আগে থেকে ছকা ছিল। ফলে চরিত্রটা করা অনেক সহজ হয়েছে। আর ঋত্বিকের সঙ্গে কাজ করার তো একটা মজা আছেই। কারণ, আমি ওর অভিনয়ের খুব ভক্ত এবং এত ভাল যে অভিনয় করে তার পাশে থাকলে আপনাআপনি নিজের অভিনয়ও উন্নত স্তরে পৌঁছয়।”

আরও পড়ুন- সমাজের ‘অন্দরকাহিনী’ শোনাবেন প্রিয়ঙ্কা-সৌমিত্র

গান কি রাজলক্ষ্ণী, শ্রীকান্তর সঙ্গে হুকুমচাঁদের অন্যতম সংযোগ সূত্র? রাহুল: “হ্যাঁ, গান তিন চরিত্রের একটা কমন বিষয়। কিন্তু আরও অনেককিছু আছে... বাকিটা প্রেক্ষাগৃহে।”

‘বাকিটা ব্যক্তিগত’-য় অভিভূত দর্শক কি আবার পেতে যাচ্ছেন অভিনব কোনও অনুভূতি? উত্তর মিলবে শিগগির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন