Mir Afsar Ali

Bijoyar Pore: শীত-সকালে মীরের বুকে মাথা রেখে অঝোরে কান্না স্বস্তিকার, সান্ত্বনায় অভিনেতা-সঞ্চালক

মীরের পরনে সাদা কুর্তা, বাদামি ট্রাউজার্স, স্বস্তিকা উষ্ণ অথচ স্নিগ্ধ ঘিয়ে সাদা কুর্তা-পালাজোয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:১৩
Share:

এক ছবিতে মীর-স্বস্তিকা।

শীতের মিঠেকড়া রোদে ভেসেছে বারুইপুর রাজবাড়ি। বাগানজুড়ে বড় বড় রঙিন ছাতা আর সারি সারি টেবিল, চেয়ার পাতা। যেন চড়ুইভাতি হবে! বাড়ির আনাচেকানাচেও উৎসবের মেজাজ। দালানে এক পাশে রাখা একচালার দুর্গা প্রতিমা। ডাকের সাজে সেজে কার্তিক-সরস্বতী, লক্ষ্মী-গণেশ এবং দেবী স্বয়ং। যেন অকালবোধন হচ্ছে বাড়িতে! আনন্দবাজার অনলাইন তারই সাক্ষী।
কেন এমন অসময়ে দেবী দুর্গার আবাহন? এখানেই সেট পড়েছে অভিজিৎ শ্রী দাসের প্রথম বড় ছবি ‘বিজয়ার পরে’-র। তারই জন্য ভরা শীতে ফিরে এল শরতের আমেজ।

বাড়ির মেঝে লাল টুকটুকে। সাবেক বাঙালি বাড়িতে যেমন হয়। সিঁড়িতে ক্ষয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। সেই ফাঁক ভরাট করেছে দুধসাদা আলপনা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই বড় ঘর। সেখানে আলো, ক্যামেরা, আর কলাকুশলীদের ভিড়। ওই ঘরেই শ্যুট হবে ছবির দুই মুখ্য চরিত্র ‘মৃন্ময়ী’ ওরফে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আর ‘মিজানুর’ ওরফে মীর আফসার আলির বেশ কিছু দৃশ্য। সকলেই রয়েছেন, সব রয়েছে, কিন্তু শহরের এই মুহূর্তের সবথেকে আলোচিত জুটি কই? আচমকাই চোখ ঘরের কোণে। সেখানে নিজেদের মতো করে মগ্ন দুই অভিনেতা! পোশাকেও বেশ মিল দু’জনের। সাদা কুর্তা, বাদামি ট্রাউজার্সে মীর। স্বস্তিকা শীতের রোদের মতোই উষ্ণ অথচ স্নিগ্ধ ঘিয়ে সাদা কুর্তা-পালাজোয়।

বোধনে যার শুরু, বিজয়া মানেই কি তার শেষ? শ্রেষ্ঠ উৎসবকে ঘিরে আপামর বাঙালির এ যেন অনন্ত জিজ্ঞাসা। অলকানন্দা-আনন্দর একই অবস্থা। সারা বছর তাঁরা কোণঠাসা হয়ে কথার পিঠে কথা বোনেন। পুজো এলে অন্ধকার মুখগুলোয় যেন হাজার বাতির আলো। মেয়ে মৃন্ময়ী ফেরেন মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে। হাতেগোনা কয়েকটা দিন আবার জোড়া লাগে ভাঙা পরিবার। এ যুগে ঘরে ঘরে এটাই তো ছবি। তারই গল্প আবার বলতে চলেছেন পরিচালক। ছবিতে অলকানন্দা-আনন্দ চরিত্রে জীবন্ত করবেন দীপঙ্কর দে, মমতা শঙ্কর। এ দিনের শ্যুটে তাঁরাও ছিলেন। লাল পেড়ে তাঁতের শাড়িতে মমতার সারা গায়ে মায়ের পেলবতা। দীপঙ্কর আশিতেও দাপুটে। সাদা পাঞ্জাবি-ঢোলা পাজামায় বনেদি যৌথ পরিবারের কর্তার মতোই। স্বস্তিকা-মীর যতক্ষণে শট দিচ্ছেন সত্যজিৎ রায়ের ছবির দুই জনপ্রিয় অভিনেতা ততক্ষণে রূপটানে ব্যস্ত।

Advertisement

ইদানীং মীর এবং স্বস্তিকা চর্চায়।

উৎসবে ঘরের লোকের বাড়ি ফেরার গল্প অনেক বার বলা হয়েছে একাধিক ছবিতে। প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’, নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’ বা মৈনাক ভৌমিকের ‘একান্নবর্তী’ তার উদাহরণ। এই ছবিতে আলাদা কী? চরিত্রের নাম বলছে, দুই ভিন্নধর্মী মানুষ উৎসবের আবহে ঘরে ফিরবেন। পরিচালকের কথায়, তার পাশাপাশিই থাকবে একা হয়ে যাওয়া প্রান্তিক কিছু মানুষের গল্প। যাঁদের কথা কেউ বলে না। যা আজকের যুগের অন্যতম সমস্যা।

ইদানীং মীর এবং স্বস্তিকা চর্চায়। মীরকেও তাঁর ধর্ম নিয়ে কটাক্ষের শিকার হতে হয়। তাই এঁদের বেছেছেন? অভিজিতের দাবি, একেবারেই না। চরিত্রে এঁদের মানিয়েছে। তাই নেওয়া হয়েছে। অভিজিৎ এর আগে বিজ্ঞাপনী ছবির দুনিয়ায় শর্মিলা ঠাকুর সহ মুম্বই এবং বাংলা ছবির তারকাদের সামলেছেন। ফলে, প্রথম ছবিতেই স্বস্তিকা-মীরের মতো জনপ্রিয় অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করতে তাঁর একটুও সমস্যা হচ্ছে না। বারুইপুর রাজবাড়ি ছাড়াও ছবির কিছু অংশ শ্যুট হবে পুরীতে এবং কলকাতায় গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে। অভিজিতের ইচ্ছে, তাঁর আগামী ছবির প্রেক্ষাপটে উঠে আসবে উত্তরবঙ্গ। সেখানকার সংস্কৃতি নিয়ে বহু ছবি হয়েছে। কিন্তু তিনি তুলে ধরতে চান সেখানকার প্রাণী, প্রান্তিক মানুষদের কথা। তার আগে নতুন বছরের এপ্রিলে মুক্তি পাবে ‘বিজয়ার পরে’।

নির্দিষ্ট ঘরে ততক্ষণে শ্যুটের আয়োজন সারা। জানলার কাছে দাঁড়িয়ে মীর ও স্বস্তিকা। উৎসবের আবহে আচমকাই মিজানুরের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠলেন মৃন্ময়ী! যেন এক পশলা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বুকে জড়িয়ে নিয়ে নীরবে সঙ্গিনীর ব্যথায় প্রলেপ দিলেন মিজানুর। পরিচালক কাট বলতেই ফের মেঘ ভাঙা রোদ হাসি হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল স্বস্তিকার চোখে-মুখে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন