short film

শর্টফিল্মের উদযাপন ‘আনন্দলোক শর্ট কাট’-এ, পুরস্কৃত তরুণ পরিচালকরা

প্রতিযোগিতায় সামিল অনেকগুলি ছবি থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল সেরা দশটি। সেইসঙ্গে ‘স্পেশাল স্ক্রিনিং’ বিভাগে আরও দু’টি ছবি। সব মিলিয়ে মোট বারোটি বাছাই ছবি বুধবার সকালে প্রদর্শিত হল প্রিয়া সিনেমা-য়। শেষে ছিল প্রথম তিন স্থানাধিকারীর জন্য পুরস্কার।

Advertisement

অর্পিতা রায়চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:১২
Share:

প্রতিযোগিতার বারোটি বাছাই ছবি প্রদর্শিত হল প্রিয়া সিনেমা-য়। নিজস্ব চিত্র।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়, কবেই বলে গিয়েছে ‘ইন্দ্রাণী’। তার পর টলিপাড়ার লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা দিয়ে অনেক রিল গড়িয়েছে। বাংলা ছবি এখন বলছে, দৈর্ঘ্য ছোট, ক্ষতি নেই, বার্তা তো বড়। সেই বার্তাকেই উদযাপন করতে হাজির ‘ডেভিড অ্যান্ড গোলিয়থ প্রেজেন্টস আনন্দলোক শর্ট কাট’। হাল্কা শীতের আমেজে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির প্রতিযোগিতা। ‘আনন্দলোক’-এর ডাকে সাড়া দিয়ে ছবি বানিয়েছিলেন নতুন প্রজন্মের একগুচ্ছ তরুণ পরিচালক। প্রতিযোগিতায় সামিল অনেকগুলি ছবি থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল সেরা দশটি। সেইসঙ্গে ‘স্পেশাল স্ক্রিনিং’ বিভাগে আরও দু’টি ছবি। সব মিলিয়ে মোট বারোটি বাছাই ছবি বুধবার সকালে প্রদর্শিত হল প্রিয়া সিনেমা-য়। শেষে ছিল প্রথম তিন স্থানাধিকারীর জন্য পুরস্কার এবং চূড়ান্ত পর্বের প্রত্যেক প্রতিযোগীর জন্য শংসাপত্র।

Advertisement

কাজটা যে বেশ কঠিন, স্বীকার করেছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এবং অভিনেত্রী জয়া আহসান, দু’জনেই। তাঁরা ছিলেন বিচারকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। বাকি সদস্যদের মধ্যে ছিলেন প্রিয়া সিনেমা কর্তৃপক্ষের তরফে ইশা দত্ত এবং ২০১১ সালের মিসেস ইউনিভার্স রিচা শর্মা। মূলত তিনটি বিষয়ের কথা মাথায় রেখে বেছে নেওয়া হয়েছে সেরা ছবিগুলি। জানিয়েছেন পরিচালক তথা এই প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক রাজ চক্রবর্তী। সেই তিন মাপকাঠি হল ছবির বিষয়বস্তু, কত কম সময়ে সেই বিষয় বোঝানো হয়েছে এবং কী ভাবে বোঝানো হয়েছে।

এই সব বিভাগে টেক্কা দিয়ে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিল ‘শ্রীচরণেষু মা’। পরিচালক ধীমান সাহার মুন্সিয়ানায় এ ছবিতে মিলেমিশে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সবার ফেলে আসা অতীত। স্মার্টফোনের রিংটোন-হীন যে অতীতে ছিল পোস্টম্যানের সাইকেল-ঘণ্টির টুংটাং। সেই ডাকমাশুলের যুগের প্রতিনিধি এই ছবির একমাত্র অভিনেতা। গ্রাম থেকে শহরে কাজ করতে আসা নিপাট যুবক। যে জানতে পারে, বড়বাজারের গদিতে তার বেতন হত মালিকের কালো টাকায়। নোটবাতিলের ঘোষণায় চাকরি হারায় সে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কথা বলায় আড়ষ্টতা কাটিয়ে দেশের র‌্যাপ সম্রাট হয়ে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ার বাবা সেহগল

সেই দুঃসংবাদ সে লিখতে বসে ইনল্যান্ড লেটারে। কারণ, গ্রামের বাড়িতে তার মা অপেক্ষায় ছেলের পাঠানো টাকার। তিনি এখনও ফোন ব্যবহার করেন না। মায়ের পুরনো অভ্যাসই ছেলের মধ্যে জিইয়ে রেখেছে চিঠি লেখার স্বভাব। কিন্তু থুতু দিয়ে মুখবন্ধ সে চিঠি কর্মহীন ছেলের ওয়ালেট থেকে আর ডাকবাক্সে পৌঁছয় না। তার আগেই ওয়ালেট হাতছাড়া পকেটমারের দৌরাত্ম্যে। নৈরাশ্যে ডুবে যাওয়া ছেলে সে খবর দিয়ে চিঠি লিখেও লিখে উঠতে পারে না। শেষ সম্বল মোবাইল বিক্রি করে আর সাইকেল বন্ধক দিয়ে চাকরির খোঁজ করে চলে। চাকরি আসে না। কিন্তু আসে দু’টি চিঠি। একটি মায়ের। অন্যটির প্রেরক অজানা। মায়ের চিঠিটি প্রথমে‌ খুলেই ছেলে হতভম্ব। মা জানিয়েছেন, তিনি ছেলের কাছ থেকে হাজার টাকা পেয়েছেন! বিস্মিত ছেলে এ বার দ্বিতীয় খামের মুখ খোলে। সেখানে প্রেরক জানিয়েছে, সে-ই ওই হাজার টাকা পাঠিয়েছে। চিঠির শেষে নাম দেখে ছেলের সঙ্গে দর্শকও অবাক। কারণ সেই চিঠির লেখক অজ্ঞাতপরিচয় এক পকেটমার!

সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে এ গল্প ঘুরেছে বহু বার। তাকেই সেলুলয়েডবন্দি করে চিঠির লেফাফা আর স্মার্টফোনের কি বোর্ড-কে যেন এক বিন্দুতে মেলালেন পরিচালক ধীমান সাহা। তাঁর মতোই বিন্দুতে সিন্ধুদর্শনের চেষ্টা করেছেন সৌরভ পাল এবং অভিরূপ বসু। তাঁদের ছবি যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। সৌরভের ছবির নাম ‘গড ইজ গুড’। সেখানে একনিষ্ঠ ঈশ্বরবিশ্বাসী মধ্যবিত্ত এক মধ্যবয়সী শুনতে পায় মানবতার জয়ধ্বনি। আবার অভিরূপের ছবি ‘মিল’ (খাবার) জুড়ে শুধুই মনস্তত্ত্বের জটিল আবর্ত। তৃতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘চিনতে পারছিস’-এর চমক আবার এর শেষ কিছু লহমায়। ছবিটি শুরু হওয়ার পরে এর শেষ অনুমান করা যে কোনও দর্শকের কাছেই দুঃসাধ্য।

আরও পড়ুন: মুক্তি পেল শাহরুখ কন্যার প্রথম সিনেমা, সুহানার অভিনয়ে মুগ্ধ নেটিজেনরা

একই রকম দুঃসাধ্য শর্ট ফিল্মের বিচারক হওয়াও। বললেন জয়া আহসান। তাঁর কাছে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি কবিতার মতো। আর পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি দেয় গদ্যের স্বাদ। বললেন আর একটি স্বস্তির কথাও। সেটি হল, শর্ট ফিল্মে এখনও বাণিজ্যিক চাপ আসেনি। পরিচালককে ভাবতে হয় না বক্স অফিস নিয়ে। ফলে তিনি ভারমুক্ত হয়ে ছবি বানাতে পারেন।

বাণিজ্যিক উদ্বেগের বাইরে সৃষ্টির আনন্দে তৈরি শর্ট ফিল্ম বরাবরই ছিল। বিনোদনের সেই মাধ্যমকেই মঞ্চ দিতে চায় ‘আনন্দলোক শর্ট কাট’। সেই মঞ্চে এ বার তাক লাগিয়েছে বাছাই পর্বের বাকি ছবিগুলিও। বিষয়বৈচিত্র থেকে ছবি পেশ করার অভিনবত্ব, সবেতেই সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন পরিচালকরা। দু’টি ছবির স্পেশাল স্ক্রিনিং হল। প্রবাল চক্রবর্তীর ‘সম্পূরক’ এবং শৌভিক চক্রবর্তীর ‘ডায়ালগ’।

আরও পড়ুন: ‘কেউ সাহস করে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ছবি বানাচ্ছেন না’

‘সম্পূরক’-এ বলিষ্ঠ অথচ নিটোল গল্প বলা হয়েছে অভিনয়ের গুণে। মূল চরিত্রে চান্দ্রেয়ী ঘোষ। নারীর সাফল্যে পুরুষের ঈর্ষা এবং উন্নাসিকতা যে আজও সমাজের পরিচিত ছবি, সে কথাই বলে এই ছবি। এত সুন্দর ছবিতে চোখকে পীড়া দেয় একটি চোনা। ছবিতে পারমিতার স্বামী, সাহিত্যিক ‘রাজর্ষি’-র নামের ভুল বানান তাঁর সাজিয়ে রাখা পুরস্কারফলকে। স্পেশাল স্ক্রিনিং-এর আর এক ছবি ‘ডায়লগ’ বোনা হয়েছে দৃশ্যকল্পে। ঠিক একই ভাবে আরও একটি বাছাই ছবি ‘হ্যান্ড-দ্য রিদম অব লাইফ’-ও দৃশ্যকল্পের ঠাসবুনোটে তুলে ধরে জীবনের যাত্রাপথ। এই ছবিগুলির তুলনায় কিছুটা দুর্বল মনে হয় ‘ইয়েলো প্লেট’-কে।

প্রতিযোগিতায় বলা হয়েছিল, দু’ মিনিট থেকে দশ মিনিট সময়ের মধ্যে ছবি বানাতে হবে। সেই সময়ফলকে প্রতিটি ছবি যেন এক একটি ছোটগল্প। ভাললাগার সেই রেশের প্রলেপ আরও ঘন করতেই পারত ছবির বিষয়ে সাহিত্যের ছোঁয়া। হয়তো আগামী কোনও বছরে এই পার্বণে পুরস্কৃত হবে বাংলা বা বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী কোনও ছোটগল্পের ফ্রেমবন্দি রূপ-ও। আশার নটেগাছে জল দিচ্ছে প্রতিশ্রুতিমান পরিচালকদের নিপুণ প্রচেষ্টা। আর দর্শকদের আরও পাওয়ার লোভ তো সার্থক ছোটগল্পের মতোই। শেষ হইয়াও শেষ হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন