শুধু সুন্দর একটা মলাট

প্রেমাংশু এটাই করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট সায় দেয় না বলে পরিচালককে বাধ্য হয়ে এমন করতে হয়। কিন্তু সমস্ত কিছুর পরেও ‘চিলেকোঠা’-র চিত্রনাট্যের পাশে জুতসই কোনও যুক্তি এসে দাঁড়ায় না।

Advertisement

ঋকদেব ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:০০
Share:

ছবিতে ব্রাত্য-ঋত্বিক।

চিলেকোঠা

Advertisement

পরিচালনা: প্রেমাংশু রায়

অভিনয়: ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, ব্রাত্য বসু

Advertisement

৪/১০

নাটক হল নাটক। আর ফিল্ম হল ফিল্ম।

প্রেমাংশু রায়ের ‘চিলেকোঠা’ সম্বন্ধে বলার এটাই। আরও খোলসা করা যাক। নাটকের সংলাপে যত কথা বলতে হয়, ছবিতে তার দরকার হয় না। সেখানে পরিচালকের হাতে আরও একশোটা অস্ত্র থাকে। এক তো হল দৃশ্য। আর হরেক রকমের শব্দ। তার মধ্যে রয়েছে সংলাপ, চারপাশের ধ্বনি, আবহ, গান। এই সমস্ত কিছুর মধ্যে শুধু সংলাপের ঘাড়েই চোদ্দো আনা দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া— এ কেমন বিচার?

প্রেমাংশু এটাই করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট সায় দেয় না বলে পরিচালককে বাধ্য হয়ে এমন করতে হয়। কিন্তু সমস্ত কিছুর পরেও ‘চিলেকোঠা’-র চিত্রনাট্যের পাশে জুতসই কোনও যুক্তি এসে দাঁড়ায় না। ছবিটায় চিত্রনাট্য দিয়ে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় এবং ঋত্বিক চক্রবর্তীর মতো শক্তিশালী দুই অভিনেতার হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শুধু ফুলকাকার আর্কেটাইপ, থুড়ি চরিত্রে ব্রাত্য বসু সে সমস্ত ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, জাত অভিনেতা কী বিস্ময়কর কাণ্ডটা করতে পারেন! পুরো ছবিতে মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখতে হয় ব্রাত্যর অভিনয়। তাঁকে কুর্নিশ।

এমনিতে, ছবির গল্পটা ট্রেলারে যা বলা হয়েছে হুবহু সেটাই। মন্বন্তর, স্বাধীনতা, দেশভাগ, যৌথ পরিবার, ভোকাট্টা, পাশের ছাদে প্রেম, রাজনীতি, পুজো, পুজোর নাটক, আড্ডা, ফুটবল, নকশাল। সমস্ত মিলিয়ে সুন্দর একটা মলাট। কিন্তু ভিতরে বইটা নেই। ছবির মূল চরিত্র অনিমেষ চট্টোপাধ্যায় (যৌবনে ঋত্বিক, বার্ধক্যে ধৃতিমান)। বিদেশে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। দেশে অবসর কাটাচ্ছেন। সেই অবসরে একদিন তিনি ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যান মন্বন্তর আর স্বাধীনতার সময়ে। ফ্ল্যাশব্যাকেই জীবন চলে যায় কুড়ি কুড়ি বছরের পার। তার মধ্যে ওপার বাংলা থেকে আসা ফুলকাকা (ব্রাত্য বসু) বালক অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়কে তারুণ্যে প্রায় ‘কালবেলা’র অনিমেষ মিত্র বানিয়ে ফেলে। বাকি গল্প রিভিউয়ে বলার কথা নয়।

যেটা বলার, সেটা হল, স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে সবাই ‘বাঙালির সব কিছুর সাক্ষী, হারিয়ে যাওয়া সেই চিলেকোঠা’-য় উঠে গেলেও গল্প হয় না। তার জন্য হাড্ডি খিজিরের মতো কোনও চরিত্রকে রাস্তার ধুলোমাটি সমেত নিয়ে যেতে হয় চিলেকোঠায়।

এই ছবিতে অবশ্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে নিয়ে টানাটানি করা হয়নি। বাদবাকি রেফারেন্স আর প্রতীক যা দেওয়া সম্ভব, প্রায় সবই হাজির করে ফেলা হয়েছে। ছবিতে একটা দেওয়াল রয়েছে। সেটা আদপে একটা টাইমলাইন। তাতে ওই আমলের ক্লাসিক অনেক ছবির পোস্টার সাঁটা হতে থাকে।

প্রতীক যা আছে, অধিকাংশই নতুন কিছু নয়। ফেলে আসা ছবির গল্পের। এটা গল্প বলার একটা কৌশল হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য সংযম দরকার। আর দরকার ব্যাপারটাকে নিদেনপক্ষে একটা সুতোয় গাঁথা। আক্ষেপের ব্যাপার, এখানে সেটা সফল ভাবে হয়ে ওঠেনি। দুর্গার মৃত্যুর পরে তার চুরি করে লুকিয়ে রাখা হার ‘পথের পাঁচালি’-র অপু যে ভাবে ছুড়ে ফেলেছিল, অনিমেষও বোনের মৃত্যুর পরে তার বাক্স থেকে এক জোড়া শাঁখা বের করে ফেলে দেয় জলে। ফুলকাকা এসে তখন একটা মোক্ষম কথা বলে—‘‘তরে পথের পাঁচালি দেখানোটা আমার উচিত হয় নাই।’’ বিলক্ষণ!

সব শেষে একটা দৃশ্য প্রসঙ্গে পরিচালকের কাছে ব্যক্তিগত অনুযোগ না করে থাকতে পারছি না। তাই বলে আপনি জেনেবুঝে একটা কম্পিউটারে জল ঢেলে দিলেন? বছর তিনেক আগে এ ভাবেই আমার ল্যাপটপটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেটা ছিল দুর্ঘটনা। এখনও ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আর আপনি? কেন করলেন এ রকম, বলুন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন