Tollywood Reaction

ধর্মযুদ্ধ বনাম কর্মযুদ্ধ— সায়নী ও তথাগতর লড়াইয়ে দু’ভাগ টলিপাড়া

‘‘সায়নী তো আর মিমি-নুসরত নয়। তাই লোকে ওকে চিনত না খুব একটা। ‘জয় শ্রী রাম’ নিয়ে ওর মন্তব্যের পরেই মানুষ ওকে চেনার জন্য ওর প্রোফাইল ঘাঁটতে গিয়েছিলেন। তাতেই কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়েছে। ’’ জানালেন অভিনেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:১৫
Share:

সায়নী ও তথাগতর যুদ্ধে দু’ভাগ টলিপাড়া

দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে টলিউড। কেউ সায়নী ঘোষের পক্ষে, কেউ আবার তথাগত রায়ের পক্ষে। এক দিকে আইনি লড়াই শুরু। অন্য দিকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করার যুদ্ধ চলছে। যুযুধান দুই পক্ষ।

Advertisement

সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হিন্দুধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। তার পরেই টলি অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন প্রবীণ রাজনীতিক তথা ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারার আওতায় রবীন্দ্র সরোবর থানায় এফআইআর দায়ের করেন তথাগত রায়। অভিযোগের সূত্রপাত কোথায়?

২০১৫ সালে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়েছিল। একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছে এক মহিলা। গ্রাফিক থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহিলাকে এডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রাফিকের ভিতরে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। পোস্টের ক্যাপশনে ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর’।

Advertisement

সেই বিষয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানালেন টলিউডের বিশিষ্টরা।

রুদ্রনীল ঘোষ- সায়নী তো আর মিমি-নুসরত নয়। তাই লোকে ওকে চিনত না খুব একটা। ‘জয় শ্রী রাম’ নিয়ে ওর মন্তব্যের পরেই মানুষ ওকে চেনার জন্য ওর প্রোফাইল ঘাঁটতে গিয়েছিলেন। তাতেই কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়েছে। এর পিছনে কোনও অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে সায়নীর মাথায় রাখা উচিত, নিজের পছন্দ অপছন্দ অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ওর হিন্দু ধর্মের প্রতি রাগ থাকতেই পারে, তা বলে এমন কিছু পোস্ট করে দিলাম, যাতে কোনও বিশেষ ধর্মের মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হলেন, সেটা অনুচিত।এই অপরাধের বিরুদ্ধে কিন্তু আইন আছে। তা হলে আইনি পথ বেছে নিতেই পারেন কেউ। এ বার আসি ‘জয় শ্রী রাম’ প্রসঙ্গে। আমার মনে হয়, সায়নী এখনও খুব একটা স্লোগান, মিছিল চাক্ষুষ করেনি। তাই জন্য ও জানে না কী রকম ভাবে স্লোগানিং হয়। আমি প্রাক্তন বামপন্থী কর্মী হয়ে বলছি, কত কত মিছিলে তো ‘পুঁজিবাদী সরকারের কালো হাত গুঁড়িয়ে দাও ভেঙে দাও’ বলে চিৎকার করা হয়। কার হাত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শুনি? এটাকে রণধ্বনি বলে না। এটা রাজনৈতিক স্লোগান। আবেগ কাজ করে এ ক্ষেত্রে।

কৌশিক সেন- আমি বামপন্থীদের আগ্রাসন দেখেছি। তৃণমূলের আগ্রাসনও দেখেছি। কংগ্রেসের আগ্রাসনের কথা শুনেছি। তৃণমূলের অত্যাচরের ভুক্তভোগী আমার নাটকের দল। কত কত কল-শো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে ৩৪ বছরের শেষ দিকে এসে বামপন্থীরা আমাকে হুমকি দিত। আমাকে শুনতে হয়েছে, তৃণমূল নাকি আমাকে টাকা দিচ্ছে। স্কুল থেকে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এই কমরেডরাই তো করেছেন। কিন্তু সব বিচার করেই আমি বলছি, বিজেপির থেকে ভয়ঙ্কর কেউ না। হতেও পারবে না কেউ। সায়নী ঘোষের একটা ছোট্ট মন্তব্যের প্রভাব ওদের ভোটব্যাঙ্কে পড়বে নাকি? না তো। তবে এ রকম করে পিছনে লাগার কী কারণ? আসলে ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রবণতাই এটা। এরা অঙ্কুরে বিনাশ করতে চায়। নিজেদের বিপক্ষে একটি আওয়াজকেও উঠতে দেবে না এরা। ‘‘যদি আজ আমরা সায়নীকে ছেড়ে দিই, তবে কাল আরও পাঁচ জন মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।’’ এ রকম ভাবনা চলে বিজেপির মাথায়। তাই বলছি, সিপিএম-তৃণমূল-কংগ্রেস সকলের খারাপ দিকগুলি যোগ করলেও বিজেপি-র ভয়াবহতার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে না।

আরও পড়ুন: পরপুরুষের মধ্যে নিজের স্বামীকে দেখে সব ‘সীমা পার’ করতে চাইছেন রাখী

রূপাঞ্জনা মিত্র- ভারতবর্ষের মতো দেশে খুব সহজেই আমরা আমাদের সনাতন ধর্ম নিয়ে গালমন্দ করতে পারি। যেখানে আমরা জানি যে হিন্দু সনাতন ধর্ম আমাদের শিখিয়েছে যে ‘কর্মই ধর্ম’। প্যানেলে যে যে কথা বলেছিল সায়নী, সেগুলির সব ভুল আমি বলব না। সত্যিই আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা কম। কিন্তু তা বলে ও কী করছে? অন্য ধর্মকে মাথায় তুলছে আর নিজের ধর্মকে স্বীকার করছে না। আরে আমাদের বাবা মায়েরা এই ধর্মে বিশ্বাসী, তাঁদের কথাও ভাবতে হবে। আমি বলব, আগে মানুষ হও। তার পর তুমি সেকিউলার, তার পর তুমি বামপন্থী, তার পর তুমি লিবারেল। আর ‘লিবারেল’ শব্দটার অতিরিক্ত ব্যবহারে তার ওজন হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

ঋষি কৌশিক- আমি তো এই বিষয়ে কিছুই জানি না। কলকাতার বাইরে রয়েছি আমি। তাই এ ভাবে কিছু বলাই উচিত নয় আমার। কলকাতা ফিরে সব দেখে শুনে পড়ে তার পরেই মন্তব্য করতে চাই আমি।

আরও পড়ুন: আইনি মোড় নিল টুইট-যুদ্ধ, অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর তথাগতর

সোহিনী সরকার- কিছু বলতে চাই না আমি। কিছু একটা বললেই, তাতে মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লাগবে। তার পর মামলা রুজু করে দেবে। মানুষের ভাবাবেগটা বড্ড ঠুনকো হয়ে গিয়েছে আজ কাল। কথায় কথায় ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। আর একটা বিষয়, সবাই দেশের জন্য ‌খুব ভাবছেন। দেশের মানুষের মঙ্গল করার উদ্দেশ্য সকলের। আর তাই জন্য হয় বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন, নয়তো তৃণমূলের খাতায় নাম লে‌খাচ্ছেন। আমরাই এক মাত্র, যাঁরা দেশ নিয়ে এক বিন্দুও ভাবি না। এ সব কথা শুনে শুনে আমি বিধ্বস্ত। সারা ভারত জুড়েই মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে। কেউ প্রকাশ করছেন, কেউ করছেন না। যাঁরা করছেন, তাঁদের নাম উঠছে পুলিশের খাতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন