Coronavirus Lockdown

ঠিক নেই ঠিকানার

বাসস্থান নিয়ে সমস্যায় অনেক শিল্পী। পাশে ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরা। সম্প্রতি একটি পোস্ট করে রুদ্রনীল ঘোষ এই দুর্দিনে মানুষকে মানুষের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০০:১৬
Share:

ধ্রুব-ঈশানী-জিতু-দেবাদৃতা

কলকাতার বাইরে থেকে অনেক মানুষ কাজ করতে আসেন শহরে। ইন্ডাস্ট্রিতেও এমন শিল্পীর সংখ্যা কম নয়। কলকাতায় ভাড়া নিয়ে বা ফ্ল্যাট কিনে কাজও চালিয়ে গিয়েছেন। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে অনেকেই বাড়ি চলে গিয়েছেন। ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের তিয়াশা রায় এখন আছেন তাঁর গোবরডাঙার বাড়িতে। ‘নকশিকাঁথা’ ধারাবাহিকের সুমন দে-ও ফিরে গিয়েছেন তাঁর পরিবারের কাছে শিলিগুড়িতে। কিন্তু অনেকেই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। ভাড়াবাড়িতেই থেকে গিয়েছেন কাজ শুরুর অপেক্ষায়। বাড়িভাড়া দিতে হচ্ছে, এ দিকে হাতে টাকা নেই।

Advertisement

সম্প্রতি একটি পোস্ট করে রুদ্রনীল ঘোষ এই দুর্দিনে মানুষকে মানুষের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন। বাড়িওয়ালাদেরও অনুরোধ করেছেন এই সময়ে ভাড়া দিতে না পারলেও যেন ভাড়াটেদের তুলে দেওয়া না হয়। রুদ্রনীলের কথায়, ‘‘আমরা হেসেখেলে সকলকে এন্টারটেন করি বলে মানুষ ভাবে আমাদের অভাব নেই। কিন্তু গত দু’মাস ধরে আমাদের হাতে কাজ নেই, মানে টাকাও নেই। ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু কয়েকজন অভিনেতা, অভিনেত্রী নন। তার বাইরেও টেকনিশিয়ানস, মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার ড্রেসার থেকে শুরু করে অনেক মানুষ আছেন। যাঁদের অনেকেই আজ প্রায় নিঃস্ব। আমারই এক পরিচিত ভাড়া দিতে পারছে না বলে বাড়িওয়ালা থাকতে দিচ্ছে না। আমি কিছু টাকা পাঠাতে সে বলছে ‘এত পাঠালেন কেন?’ কিন্তু আমি তো জানি, ওর কাছে খাওয়ার টাকাও নেই।’’

একই কথা বলে ভিডিয়ো করেছেন জিতু কামাল। তা নিয়ে চর্চাও হয়েছে, তিনি এক অভিনেতার কপি ভিডিয়ো করেছেন বলে। কিন্তু জিতু স্পষ্ট বললেন, ‘‘আমি বলছি তো কপি ভিডিয়ো করেছি। মানুষের জন্য করেছি। এই সময়ে যাঁদের ফ্ল্যাটের চড়া ইনস্টলমেন্ট দিতে হচ্ছে, তাঁদের কথাও ভাবুন। তিন মাস ইএমআই না দিয়েও তো লাভ নেই। তাতে তো সুদ আরও বেড়ে পরে বেশি টাকা দিতে হবে। ক’দিন আগে আমারই টাকা হোল্ড করে দিয়েছিল একটি ব্যাঙ্ক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দুর্গতদের পাশে তরুণ তুর্কিরা

জুনিয়র আর্টিস্ট ছাড়াও রয়েছেন মেকআপ আর্টিস্ট ও হেয়ার ড্রেসার। তাঁদের হাতেও কাজ নেই গত দু’মাস। ‘কনক কাঁকন’ ধারাবাহিকের হেয়ারড্রেসার সুমি বললেন, ‘‘কাজ নেই, তাই টাকাও নেই। আমি ভাড়া থাকি। আমপানে বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে। দেওয়াল বেরিয়ে এসেছে। তা-ও বাড়িওয়ালা উঠে যেতে বলছেন। ভাড়া দিতে পারছি না যে! বরের পা ভেঙে আগে থেকেই কর্মহীন। আমার রোজগারেই সংসার চলে। এখন তো এটুকু আশাও নেই যে লকডাউন উঠলে আগের কাজের জায়গায় ফিরতে পারব। শো-টাও বন্ধ করে দিল।’’

নতুন বাড়ি খুঁজছেন পুরনো দিনের অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়। আশি বছর বয়স। উত্তর কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি একাই থাকি। এখানে ৮০০০ টাকা ভাড়া। আর দিতে পারব না মনে হয়। ক্যানসারে আক্রান্ত, ফলে অনেক ওষুধ চলে। তার উপরে দু’মাস বসে আছি। লকডাউনের আগেও ‘বাঘবন্দী খেলা’য় ঠাকুমার চরিত্রে অভিনয় করছিলাম। এর পরে কাজে আদৌ ফিরতে পারব কি না ভরসা পাচ্ছি না। তাই কম ভাড়ার ফ্ল্যাট বা বাড়ি পেলে চলে যাব।’’

লোনের বোঝাও কম নয়। ‘নকশি কাঁথা’ ধারাবাহিকের সুমন দে-র যেমন গাড়ির লোন চলছে। অন্য দিকে ‘আলো ছায়া’ ধারাবাহিকের আলো চরিত্রের অভিনেত্রী দেবাদৃতা বসুর পরিবারও নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে। তারও লোন চলছিল। আপাতত মাসকয়েক সেই লোন হোল্ডে রাখা আছে। তবু তাঁদের মাথার উপরে ছাদ আছে। কিন্তু ‘জাহানারা’খ্যাত শ্বেতা মিশ্র ফিরতে পারেননি তাঁর বহরমপুরের বাড়িতে। একাই আটকে পড়েছেন কলকাতায়। একে কাজ নেই, তার উপরে বাড়িভাড়ার বিড়ম্বনা। অন্য দিকে ‘চিরদিনই আমি যে তোমার’-এর রাইমার চরিত্রের অভিনেত্রী ঈশানী সেনগুপ্তও পাটুলিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। ঈশানী বললেন, ‘‘দু’মাস ধরে কাজ নেই। তার উপরে সিরিয়াল বন্ধ হয়ে গেল। ভাড়া দেব কোথা থেকে? একটাই বাঁচোয়া, বাড়িওয়ালা টাকা চাননি। কিন্তু টাকাটা তো দিতে হবে। তার জন্য কাজে ফেরাও দরকার।’’

ঈশানীরা তাঁদের এই সমস্যার কথা জানিয়ে লাইভও করেছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘নেতাজি’র অভিনেতা ধ্রুব সরকার। ধ্রুবর কথায়, ‘‘আমার ব্যক্তিগত সমস্যা না হলেও সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার পরিচিত এক শিল্পী আছেন। উনি অনেক ধারাবাহিকেই পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। নতুন ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। কিন্তু স্বামী অসুস্থ, তাঁর ওষুধেই সব টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফ্ল্যাটের ইএমআই দিতে পারছেন না। যখন শুনলাম স্রেফ আলুসিদ্ধ ভাতে ভাত খেয়ে ওঁরা দিন কাটাচ্ছেন, আমি থাকতে পারিনি। কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করলাম। ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের কথা ভাবার জন্য আবেদন করছি।’’

এখনও শুটিং শুরু হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে কাজ শুরু হলে কোপ পড়বে ম্যানপাওয়ারেও। অনিশ্চয়তার দিনে বেঁচে থাকার প্রাথমিক তিনটি জিনিস অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানে টান পড়তে শুরু করেছে এখনই।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন তুললেন নওয়াজ়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement