যেন সোনিকা সিংহ চৌহানের সপক্ষে কথা বলা মানেই বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গে ‘খুনি’ তকমা জুড়ে দেওয়া। আর বিক্রমের বর্তমান মানসিক পরিস্থিতিকে সহানুভূতির চোখে দেখার অর্থই সোনিকার ন্যায়বিচারের বিরোধিতা করা! জীবন আর মৃত্যুর এ বড় নিষ্ঠুর লড়াই!
বিক্রম কি তবে বেঁচে গিয়ে অপরাধ করল? আর সোনিকার অকালমৃত্যু কেবল ন্যায় খুঁজে বেরোল? সেই গভীর রাতে ঠিক কী হয়েছিল, তার পুরোটা এখনও জানে না টলিপাড়া।
‘‘জুনিয়র হিসেবে বিক্রমকে ভাইয়ের মতো দেখি। ‘খোঁজ’-এর ট্রেলারে ওর কাজ দেখে ফোন করেছিলাম। এই দুর্ঘটনাটা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে বলতে চাই: যারা দামি গাড়ি চড়ে, তারা কেন ড্রাইভার রাখে না? মাইকেল শুমাখারও তো অ্যাক্সিডেন্টেই কোমায় চলে গিয়েছিলেন! অন্য দিকে মনে হয়, সোনিকার ন্যায়বিচারও হওয়া দরকার। আজ ২০১৭-তে সোনিকার ব্যক্তিগত পছন্দ নিয়ে ওর চরিত্র বিশ্লেষণ করছে লোকে। আর যে মানুষটা রইল, সেও যন্ত্রণায় আছে!’’ বললেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়।
যন্ত্রণা দুই পক্ষেরই। সন্তান হারানোর কোনও সান্ত্বনা হয় না! মৃত্যুর কাছে সব কথাই বাড়তি মনে করেন ‘ইচ্ছেনদী’-র লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। বিক্রমের প্রথম কাজ তাঁর হাত ধরেই। লীনা বললেন,‘‘কাজের সূত্রেই বিক্রমকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। কখনও উচ্ছৃঙ্খল দেখিনি। আমি তো ওর গাড়িতেও চড়েছি। উঠলেই বলত আগে বেল্ট পরো, তার পর স্টার্ট করব। সে দিন রাতে ছিলাম না। তাই কোথায় ভুল ছিল বলতে পারব না। তবে অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। রাতের ডাকটাই যেন এখন নিশির ডাক হয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা আরও সাবধান হোক।’’ গুজব ছিল, বিক্রমের দুর্ঘটনার কারণেই ‘ইচ্ছেনদী’ বন্ধ হচ্ছে। লীনা সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, অন্য ধারাবাহিকের মতো গল্প ফুরোলে তবেই ‘ইচ্ছেনদী’ বন্ধ হবে।
বিক্রম
আরও পড়ুন:বন্ধই হয়ে যাচ্ছে বিক্রমের ধারাবাহিক ‘ইচ্ছেনদী’
সোনিকার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না রেচেল হোয়াইট। সোনিকার কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে যাচ্ছিল তাঁর। বললেন,‘‘আসলে দুই পরিবারের চরম ক্ষতি হল। দুর্ঘটনার পরের দিন সকালে ওর মার কাছে যখন যাই, আন্টি কাঁদতে-কাঁদতে বলেছিলেন, বিক্রম অ্যাক্সিডেন্টের পর যদি একটা ফোন করে ‘সরি’ বলত… পার্টিতে সকলে ড্রিংক করে। কিন্তু উকিল বিক্রমকে মিথ্যে কেন বলতে বলল? এখন কারও পক্ষ নিয়ে কথা বলার সময় নয়। আমাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত!’’ অত রাতে বিক্রমের সঙ্গে গাড়িতে কেন ছিল সোনিকা? ‘‘নিশ্চয়ই দু’জনে খুব বন্ধু ছিল। দু’জনেই জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলল! বিক্রমকে বরাবর ভাল ছেলে বলেই জানি। মারাত্মক মদের নেশা ছিল এমনটাও না। বরং খুব কফি খেত। দু’জনের কি ঝগড়া হয়েছিল? তাই অত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিল?’’ প্রশ্ন তুললেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। এই ঘটনার পর থেকে রাতে তাঁর ঘুম নেই!
অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও ঘোলাটে। তদন্ত চলছে। মুম্বই থেকে বললেন প্রিয়া পাল, ‘‘মুম্বইয়ে সব্বাই রাতের পার্টির পর দেখেছি ট্যাক্সি বা অটোতে ফেরে। তাদের সকলেরই যদিও দামি গাড়ি আছে। ওই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেই শুনেছিলাম, ড্রিংক করে ড্রাইভ করলেই পুলিশ ধরবে। মজা করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেরও নিস্তার নেই।’’ অনেক দিনের বন্ধু বিক্রমকে খুনি মনে করেন না প্রিয়া, কিন্তু ড্রিংক করে গাড়ি চালানোর শাস্তি তিনিও চান।
‘‘আসলে ফেক ইন্ডাস্ট্রি এটা। সকলে বিক্রমের দোষ দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ও যেন মরে গেলেই ভাল হতো! আমার ২৯ বছরের অভিনয় জীবনে বিক্রমের মতো ভদ্র কাউকে দেখিনি। তবে ও অন্যায় করেছে। শাস্তিও পাবে। কিন্তু আমরাও ভুলে যাচ্ছি অ্যাক্সিডেন্ট একবারই হয়। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এত সোচ্চার, তারা নাইট ক্লাবে কি লেবুজল খায়?’’ বিক্রমের ইচ্ছেনদী-র ‘মা’ লাবণী সরকারের গলা ধরে এল।
বহুবার বেজে গেল ফোন। তার পর এক ভেজা চাপা গলা, ‘‘আমি কিছু বলব না। এখন বলা যায় না। বুঝতে পারেন না কেন?’’ কিছুক্ষণ সব চুপ! তার পর, ‘‘শুনুন। সোনিকা একা! ওর কথা ভাববেন।’’ ফোন বন্ধ হয়ে গেল! ফোনের ওপারে সাহেব ভট্টাচার্য।