ঠান্ডা, তবু বাড়ছে নাটকের দর্শক

ঠান্ডা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ততই যেন বাড়ছে দর্শক সংখ্যাও। আর তা দেখে শান্তিপুরের ‘জাতীয় নাট্য মেলার’ আয়োজকদের মুখের হাসিও ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। বাড়ছে উসাহ। ১৭ ডিসেম্বর থেকে শান্তিপুরের পাবলিক লাইব্রেরির মাঠ ও প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয়েছে রঙ্গপীঠের ১১ তম নাট্যমেলা। চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই নাট্য মেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৬টি নাটক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

ঠান্ডা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ততই যেন বাড়ছে দর্শক সংখ্যাও। আর তা দেখে শান্তিপুরের ‘জাতীয় নাট্য মেলার’ আয়োজকদের মুখের হাসিও ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। বাড়ছে উসাহ। ১৭ ডিসেম্বর থেকে শান্তিপুরের পাবলিক লাইব্রেরির মাঠ ও প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয়েছে রঙ্গপীঠের ১১ তম নাট্যমেলা। চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই নাট্য মেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৬টি নাটক। তার মধ্যে যেমন রয়েছে এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক নাটকের দল, তেমনই থাকছে দেশের অন্য রাজ্যের একাধিক ভাষার নাটকও। তবে এই নাট্যমেলার অন্যতম আকর্ষণ হল বাংলাদেশ, পাকিস্থান ও নেপালের একাধিক দলের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাটক। আর সেই সব নাটক দেখতে শুধু জেলার মানুষই ভিড় করছেন তাই নয়, দর্শক আসনে ভিড় জমাচ্ছেন অন্য জেলার মানুষও। ফলে এই ক’দিনে শান্তিপুর যেন প্রকৃত অর্থেই নাটকের শহরে পরিণত হয়েছে। শীতের আমেজ নিয়ে গোটা শহরটাই যেন মেতে উঠেছে এর আন্তর্জাতিক নাট্যযজ্ঞে।

Advertisement

শান্তিপুর শহরে একটু বড় আকারের নাট্য উৎসব করার মতো পরিকাঠামোর খুবই অভাব। শহরের কেন্দ্রে পাবলিক লাইব্রেরির একটি মাত্র প্রেক্ষাগৃহ আছে। মঞ্চ থেকে শুরু করে সেই প্রেক্ষাগৃহের আকার সবটাই অপেক্ষাকৃত ছোটই শুধু নয় পরিকাঠানোও তেমন উন্নত নয়। ফলে এই শহরের নাট্যপ্রেমী মানুষরা দীর্ঘ দিন ধরে একটি উন্নত মানের প্রেক্ষাগৃহের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি। সেই সীমিত সামর্থের মধ্যেই এত বড় একটি নাট্য উৎসবের আয়োজন করা যে কঠিন কাজ, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন আয়োজক থেকে শুরু করে শহরের সাধারণ মানুষও। আর সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে এবার রঙ্গপীঠ পাবলিক লাইব্রেরির মাঠেই নিজেদের মতো করে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে নিয়েছে। সেই মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে শম্ভু মিত্র শতবর্ষ মঞ্চ। আর ভিতরে প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে নির্মলেন্দু লাহিড়ী মঞ্চ। এ ছাড়াও ওই মাঠেই একটি মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চে দু’টি নাটকের পাশাপাশি পরিবেশিত হয়ছে ঝুমুর গান, ময়ূরপঙ্খী গান, রামায়ণ গান ও টুসু ভাদু। ১৭ ডিসেম্বর শম্ভু মিত্র মঞ্চে কলকাতার বহুরূপী নাট্য সংস্থার ‘তোমারে স্মরণ করি রূপকার’ ও মুম্বই-এর জগমীরা নাট্য দলের ‘স্ত্রীর পত্র’ নাটকের মধ্য দিয়ে এই নাট্য উৎসবের সূচনা হয়। এর পরে ১৮ ডিসেম্বর সিকিমের দৃশ্যম নাট্যদলের ‘পাগলা ঘোড়া’ ও বেহালা ব্রাত্যজনের বিচিত্রানুষ্ঠান, ১৯ ডিসেম্বর কালিয়াগঞ্জের অনন্য থিয়েটারের ‘বেওয়ারিশ’ ও ওডিশার উৎসব নাট্য সংস্থার ‘ফাগুন পাতা’, ২০ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির কলাকুশলী নাট্যদলের ‘বরিশালের যোগেন মন্ডল’ ও অসমের গুয়াহাটির পূর্বরঙ্গ নাট্যদলের ‘মৃগয়া’ এবং পর দিন অর্থাৎ ২১ ডিসেন্বর ওই একই নাট্য দলের ‘বীরাঙ্গনা’ লখনউয়ের রঙ্গমন্ডলীর ‘বলকান ওমেন’ নাটকগুলি মঞ্চস্থ হয়েছে। এছাড়াও ২২ ডিসেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুর থিয়েটার ভিলেজ নাট্যদলের ‘এ নাইট উইথ মাও’ ও ওডিশার দ্য লূ পদমপুর নাট্যদলের ‘গরাবান্দা’ ২৩ ডিসেম্বর কলকাতার সেন্টার স্টেজের ‘প্রস্তাব’ ও প্রাচ্য নাট্যদলের ‘ক্যালিগুলা’, ২৪ ডিসেম্বর হিমাচল সি আর এপ রেপার্টরি নাট্যদলের ‘সখারাম বাইন্ডার’, দিল্লির ট্রেজার আর্ট অ্যাসোসিয়েশনের ‘বাঢ়া’ ও বাংলাদেশের ঢাকার প্রাঙ্গণে মোর নাট্যদলের ‘ঈর্ষা’, ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের ষড়ভুজের ‘ডাকঘর’ ও পাকিস্তানের লাহোরের ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিয়েটার কোম্পানির ‘কামরা নম্বার নাইন’, ২৬ ডিসেম্বর রঘুনাথগঞ্জের নাট্যম বলাকার ‘কাল বা পরশু’ ও বহরমপুরের ঋত্বিক নাট্যদলের ‘ডাকঘর’ এবং ২৭ ডিসেম্বর কোচবিহারে কম্পাস নাট্যদলের ‘চোপ আদালত চলছে’ ও বহরমপুরের উজান নাট্যদলের ‘জাম্বো ও একটি চিত্রনাট্য’ নাটকগুলি অনুষ্ঠানে রয়েছে। তবে অর্জুম খ্যাপা, গোলাম ফকির ও বুলার ‘পীর ফকির মুর্শিদ গান’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসবের শেষ হবে। রঙ্গপীঠের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “বড় আকারের নাট্য উৎসবের আয়োজন করার মতো পরিকাঠামো নেই। প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চটাই খুব ছোট। সেই কারণে আমরা এবার মাঠেই একটি অস্থায়ী মঞ্চ করে নিয়েছি। তা না হলে এত বড় বড় দলের নাটক মঞ্চস্থ করা সম্ভব হত না। আগামী দিনে আমাদের আরও বড় আকারের নাট্য উৎসব করার পরিকল্পনা আছে।” তিনি বলেন, “তবে আমাদের এই সীমিত সামর্থের মধ্যেও একটা ভালো লাগা কাজ করছে যে, দর্শকআসনে কিন্তু নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ভিড় বাড়ছে।’’ পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “পরিকাঠামোর তোয়াক্কা না করে তারা যে ভাবে বিদেশের নাট্যদলগুলিকে নিয়ে এসে নাট্য উৎসব করল তাতে শহর নতুন নাটক দেখতে পেল।”


নাট্যসংস্থা ‘নকশা’-র উদ্যোগে গোবরডাঙায় হয়ে গেল দ্বিতীয় জাতীয় নাট্য মেলা। ২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু এই উত্‌সব বৃহস্পতিবার ইন্দো-ইতালিয় প্রযোজনা দিয়ে শেষ হয়। সে দেশের অভিনেতাদের সঙ্গে আমেরিকান, জার্মান, ভারতীয় অভিনেতারাও ছিলেন। মেলায় ১২টি দলের নাটক মঞ্চস্থ হয়। মঞ্চশিল্পী খালেদ চৌধুরীকে স্মরণ করা হয় উত্‌সব। তাঁর জীবনের উপরে তথ্যচিত্র এবং প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা ছিল।
সঙ্গে, শেষ দিনের প্রয়োজনার একটি দৃশ্য।—নিজস্ব চিত্র।

Advertisement


রামপুরহাট রক্তকরবী পুরমঞ্চে মর্নিংস্টারের নৃত্যানুষ্ঠান। ছবি: অনির্বাণ সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন