২০০৯। বিখ্যাত বক্সার মাইক টাইসনের চার বছরের মেয়েকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় আরিজোনার বাড়িতে।
বাড়িতে জিমের ট্রেডমিলের পাওয়ার কেবলে ঘাড় মটকে হয়েছিল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। হোম জিম না থাকলেও বাড়ি বাড়ি ট্রেডমিলের আনাগোনা আর নতুন কিছু নয়।
রাতারাতি ফিটনেস বাড়ানোর লোভে অনেকেই দুমদাম ট্রেডমিল করছেন। তাতে হিতে বিপরীত হচ্ছে না তো?
ট্রেডমিলে না?
সকালে কাগজ খুললেই সারি সারি বিজ্ঞাপন। আপনি ভাবতে বসলেন কোনটা কেনা ভাল। মোটোরাইজড না ম্যানুয়াল ট্রেডমিল।
বেশির ভাগই কৌতূহলবশত ট্রেডমিল চড়ে হাঁটা বা দৌড় শুরু করে দেন। চটজলদি ফিগার কারেকশনের লোভে অনেকে আবার শুরু থেকেই জোরে ছুটতে থাকেন বা হাঁটা শুরু করে দেন। এতে দু’ধরনের বিপদ আসতে পারে।
এক, স্ট্রেচিং না করার জন্য পেশিতে চোট লাগতে পারে। দুই, হঠাত্ করে হার্টরেট বেড়ে গিয়ে নিশ্বাসের সমস্যা হতে পারে বা মাথা ঘুরতে পারে।
ওয়ার্ম আপ সেশন না করে ট্রেডমিল করাটা তাই খুব বিপজ্জনক। কারণ একটাই। ওয়ার্ম আপ করলে হার্টরেট ধীরে ধীরে বাড়ে এবং শরীর বেশি ধকল নিতে প্রস্তুত থাকে।
হাঁটাহাঁটি কী শান্তি!
ট্রেডমিল অন করে একেকজন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ওয়ার্কআউট করে যাচ্ছেন। টানা হাঁটা বা জগিং করে মনে কী শান্তি! কত ক্যালোরি ঝরে গেল। কিন্তু জানেন, কতটা বিপদ হতে পারে?
একটানা হাঁটলে, জগিং করলে হাঁটু-গোড়ালিতে ওভারইউজ ইনজ্যুরি আসতে পারে।
ট্রেডমিলের প্ল্যাটফর্মটাও বেশ শক্ত। তাই নাগাড়ে হাঁটলে বা দৌড়লে হাঁটু-গোড়ালিকে ইমপ্যাক্ট ফোর্সও সহ্য করতে হয় বেশি।
ফল?
আর্থ্রাইটিস হল বলে।
এ ছাড়া গোড়ালির কাফ মাসল টাইট হয়ে ব্যথাও হতে পারে।
কমদামী জুতো ব্যবহার করলে তো সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। কারণ সেই সব জুতোর সোল বায়ো-মেকানিক্যালি ভাল হয় না।
তাই আপনি হয়তো ভাবলেন ট্রেডমিল করে ওজন কমাবেন। অথচ দেখা গেল হাঁটু আর গোড়ালিতে সাঙ্ঘাতিক চোট পেয়ে গেলেন।
এনার্জি না পেশি ক্ষয়?
ট্রেডমিলে তাই টানা ওয়ার্কআউট করে ক্যালোরি তো অত ঝরলই না। বরং পেশির ক্ষয় হল ভাল রকম। টানা হাঁটা বা জগিংয়ে শরীর থেকে কার্ব্রোহাইড্রেট আর ফ্যাট খরচ হয় এনার্জি হিসেবে। কিন্তু যখন এনার্জির ভাঁড়ারে টান পড়ে, তখন শরীরের পেশিই এনার্জি জোগায়।
শরীরের পেশি ক্ষয় তাই কখনওই ভাল নয়। পেশি কমলে বিপাকের হার কমে। আর বিপাকের হার কমা মানে ক্যালোরি খরচের হার কমে যাওয়া।
জেনে বুঝে ইনক্লাইন ট্রেনিং
মোটোরাইজড ট্রেডমিলে অনেকে ইনক্লাইন করে হাঁটেন বা দৌড়ন। সে ইনক্লাইন বেড়ে হয় ৮, ৯, ১০। ঠিক পাহাড়-চড়ার মতো ব্যাপার।
তাই কোর পেশির পর্যাপ্ত জোর না বাড়িয়ে ইনক্লাইন ট্রেনিং করলে মেরুদণ্ডে খুব চাপ পড়ে। ইনক্লাইন রানিং করতে তাই পেটের গভীরের পেশিকে শক্তিশালী করতেই হবে। নইলে কোমরের ব্যথা অবধারিত।
ট্রেডমিল চালু থাকা অবস্থায় বেল্ট-টাও চলতেই থাকে। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে দেখা গিয়েছে ট্রেডমিল করতে করতে ফোন রিসিভ করতে গিয়ে বা টেক্সট মেসেজ করতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন অনেকে।
এ দিক থেকে দেখলেও ট্রেডমিলের বিপদ কম নয়।
হার্টরেট জোনে ট্রেনিং করুন
যাঁরা ট্রেডমিলে হাঁটবেন ঠিক করেই নিয়েছেন তাঁরা হার্টরেট জোনে ট্রেনিং করুন। হিসেবটা এ রকম। ধরুন আপনার বয়স ৪০। কাজেই ২২০-৪০=১৮০ হল আপনার ম্যাক্সিমাম
হার্ট রেট।
বিশেষজ্ঞদের মতে যাঁরা ট্রেনড নন, তাঁদের শুরু করা উচিত ম্যাক্সিমাম হার্টরেটের ৬৫-৭০ শতাংশের মধ্যে। মানে প্রতি মিনিটে ১২৬ বিটস। খুব কম মানুষই কিন্তু এ ব্যাপারে সচেতন।
শুরুতেই ৮০-৯০ শতাংশ হারে ট্রেনিং করলে হৃদযন্ত্র অত চাপ না-ও নিতে পারে। ট্রেডমিলে দৌড়তে দৌড়তে হার্ট অ্যাটাকে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের হার্টের কিছু সমস্যা থাকে যা হয়তো ধরাই পড়েনি। অযাচিত বিপদ এড়াতে ট্রেডমিলে ট্রেনিং করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে তাই পরামর্শ করে নিন।
ট্রেডমিলের বিকল্প
• রাস্তায়, মাঠে বা পার্কে হাঁটুন
• তার আগে করে নিন ওয়ার্ম আপ সেশন। কয়েকটা স্ট্রেচিং-ও। বিশেষ করে থাই, হ্যামস্ট্রিং, হিপ আর কাফ মাসলের
• ২ মিনিট জোরে আর ১ মিনিট আস্তে ২৫ মিনিট হাঁটুন। আপনার বয়স অনুযায়ী হাঁটা বা দৌড়ের গতি ঠিক করুন
• ইন্ট্যারভ্যাল পদ্ধতিতে এই ওয়ার্কআউট হাঁটু, গোড়ালিতে ওভারইউজ ইনজ্যুরি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ক্যালোরি ঝরে বেশি। বিপাকের হার বাড়ে
• অল্প সময়ের এই ওয়ার্কআউটে পেশি ক্ষয়ের সম্ভাবনাও নেই