Meditation Tips

একটানা একমনে বসে ধ্যান যেন অসম্ভব! নতুনদের জন্য ৫টি সহজ কৌশল শেখালেন যোগ প্রশিক্ষক

ধ্যান শিখতে হলে দরকার ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তোলা। যোগ প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য জানাচ্ছেন, কয়েকটি সহজ কৌশল মেনে চললেই মনকে শান্ত রাখা সম্ভব, ধ্যান আর কঠিন বলে মনে হবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ১৪:৩৮
Share:

ধ্যান করার সহজ নিয়ম। ছবি: সংগৃহীত।

নিস্তব্ধ হয়ে এক মনে বসে থাকা। নড়াচড়া নয়। মন যাবে না অন্য কোনও দিকে। এমন ভাবেই ধ্যান করতে হবে। শুনতে সহজ, কিন্তু বাস্তবায়ন সকলের পক্ষে সহজ নয়। বিশেষ করে নতুনদের কাছে তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মন এদিক-ওদিক চলে যায়। আসলে ধ্যান শিখতে হলে দরকার ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তোলা। যোগ প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য জানাচ্ছেন, কয়েকটি সহজ কৌশল মেনে চললেই মনকে শান্ত রাখা সম্ভব, ধ্যান আর কঠিন বলে মনে হবে না।

Advertisement

বসার ভঙ্গি- যোগ প্রশিক্ষক বলছেন, ‘‘ধ্যান করতে হবে বলে দিলেই প্রশিক্ষকদের কাজ মিটে যায় না। যিনি ধ্যান করা শুরু করছেন, তাঁর কী কী অসুখ বা সমস্যা রয়েছে, সে সব জেনে তাঁকে ভঙ্গি বলে দিতে হবে। অনেকের আর্থ্রাইটিস থাকে, অনেকের আবার চোট-আঘাত থাকতে পারে, কারও আবার স্নায়ুর সমস্যা থাকে। তাই আমার পরামর্শ, যিনি যেমন ভঙ্গিতে স্বচ্ছন্দ, তিনি সে ভাবেই বসে ধ্যান করুন।’’ চেয়ারে বা মেঝেতে বসে, সব রকম ভাবেই ধ্যান করা সম্ভব। কিন্তু শিরদাঁড়া থাকবে সোজা, কাঁধ শিথিল করে দিতে হবে।

সময়ের দৈর্ঘ্য- অনুপ আচার্যের পরামর্শ, শুরুতেই দীর্ঘ সময় বসে থাকার দরকার নেই। প্রতি দিন ১০-২০ মিনিট নীরবে বসে থাকুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে পারেন। কে কত ক্ষণ কোন ভঙ্গিতে বসে থাকতে পারছেন, সেটাই আসল। তবে ঘড়ি ধরে করলে ধ্যান করাই বৃথা। বার বার সময় দেখা, বা ঘড়ির অ্যালার্ম বেজে ওঠা, ইত্যাদি মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। তাতে যত ক্ষণই বসে থাকুন, উপকার মিলবে না।

Advertisement

মনোযোগ- প্রশিক্ষক বলছেন, ‘‘ধ্যান করা মানেই ঈশ্বরের ভজন শুনতে হবে, এমন ধারণা প্রচলিত হলেও কার্যকরী না-ও হতে পারে। কেউ পাহাড়ে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারেন, সেটাও ধ্যানের আওতায় পড়ে। মনকে চিন্তাশূন্য করার জন্য কষ্ট করার দরকার নেই। তবে চেষ্টা করতে হবে, চোখ বুজে নিজের নিঃশ্বাস নেওয়া আর ছেড়ে দেওয়ার পুরো চক্রটির দিকে মন দিতে। নয়তো সংখ্যা গুনতে হবে। তা ছাড়া চোখ খুলে রেখেও করা যায়। ঘরের সমস্ত আলো বন্ধ করে একটি মোমবাতি বা প্রদীপের শিখার দিকে যত ক্ষণ সম্ভব একটানা তাকিয়ে থাকতে হবে। চোখ জ্বালা শুরু হলে জল পড়বে, আর তাতে চোখের ভিতরের দূষিত পদার্থও বেরিয়ে যেতে পারে শরীর থেকে। ফলে দু’দিক থেকেই উপকৃত হবেন।’’ এখানে বিন্দু ত্রাটক এবং জ্যোতি ত্রাটকের বিষয়ে জেনে নিলে সুবিধা হবে বলে জানালেন প্রশিক্ষক। বিন্দু ত্রাটক হল, যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে চোখ স্থির করে তাকাতে হয়, যা মনকে কেন্দ্রীভূত করতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অন্য দিকে জ্যোতি ত্রাটক হল, যেখানে একটি মোমবাতির শিখার উপর চোখ স্থির রেখে তাকানো। দু’টির মধ্যে যে কোনও একটি অভ্যাস করলেই হবে।

নিয়মিত চর্চা- এক দিনে ধ্যান আয়ত্তে আসে না। প্রতি দিন অল্প সময় দিলেই ধীরে ধীরে মন শান্ত হবে, মনোযোগও বাড়বে। কিন্তু এক দিনও বাদ দিলে চলবে না। সকালে উঠেও অনুশীলন করতে পারেন, অথবা রাতে খাওয়ার পর খানিক ক্ষণ হেঁটেচলে নিয়ে ধ্যান করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে, জায়গাটি যেন নিরিবিলি হয়। নয়তো মনঃসংযোগ করা কঠিন হতে পারে।

মন্ত্রোচ্চারণ- প্রশিক্ষক অনুপের পরামর্শ, ইয়ারফোন ব্যবহার করে গান না শুনে বরং বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ করে ধ্যান করা উচিত। অনেকেই ‘ওঁ’ ধ্বনি তুলে ধ্যান করেন। কিন্তু অনুপ বলছেন, ‘‘ওঁ ধ্বনির সঙ্গে হিন্দুধর্মের যোগ রয়েছে। কিন্তু ধ্যান তো সকল ধর্মের মানুষের জন্যই তৈরি হয়েছে। তাই শুধু একটি ধর্মের মন্ত্র উচ্চারণ না করে বরং বিশেষ করে একটি শব্দ ব্যবহার করা উচিত, যাতে সকল ধর্মের মানুষই নিজেদের ধ্যানের সঙ্গে একাত্ম করতে পারবেন। আর সেটি হল ‘অউম’। ইংরেজি হরফে ‘ও’ এবং ‘এম’-এর বদলে তিনটি হরফ উচ্চারণ করুন, ‘এ’, ‘ইউ’ এবং ‘এম’। যত ক্ষণ ধরে রাখা যায়, তত ক্ষণই অনুশীলন করুন।’’

ধ্যান মানেই কড়া নিয়ম নয়, বরং নিজের সঙ্গে একটু সময় কাটানোর উপায়। নিয়মিত অনুশীলনে এটি আপনার দিনচর্যার স্বাভাবিক অংশ হয়ে উঠবে, মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যা উপকারী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement