সপ্তাহশেষে অনিয়ম, সপ্তাহ শুরুর দিন থেকে নিয়মে ফিরবেন কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত।
সপ্তাহভর এক রকম। কিন্তু ছুটির দিনে নিজেকে একটু বাড়তি প্রশ্রয় না দিলে চলে? সপ্তাহ শেষে তাই পান, ভোজন, রাত জাগা— এ সব হয়েই যায়। কিন্তু সপ্তাহে এক বা দু’দিন সেই অনিয়ম শরীর সহ্য করলেও, প্রতি দিন এমনটা হলে কিন্তু স্বাস্থ্য জবাব দেবেই। সে কারণে সপ্তাহের শুরুর দিন থেকেই দরকার শরীরের যত্ন।
নিয়ম না মানলে কী হবে?
দু’দিনের অনিয়ম সপ্তাহভর চললে পেটের গোলমাল, পেট ফাঁপা, ক্লান্তি, অবসাদের মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক মতো জল না খেলে বা অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে, শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ঠিকমতো ঘুম না হলে, দৈনন্দিন কাজকর্মেও আলস্য দেখা দেবে। শরীর অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনের প্রভাব পড়বে মন এবং মেজাজেও।
সোমবার থেকে শুরুটা কী ভাবে করবেন?
জল খাওয়া: জোর দেওয়া দরকার জল পানে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দিনে আড়াই থেকে ৩ লিটার জল খাওয়া প্রয়োজন। শারীরবৃত্তীয় এবং বিপাক ক্রিয়ার ফলে শরীরে যে দূষিত পদার্থ তৈরি হয়, তা বার করে দিতে সাহায্য করে জল। লেবু-মধুর জল, মেথি ভেজানো জল অথবা চিয়া ভেজানো জল শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করবে। শরীরের প্রয়োজন বুঝে যে কোনও একটি দিয়ে দিন শুরু করা যেতে পারে।
প্রাতরাশও জরুরি, দরকার সঠিক পুষ্টি
প্রাতরাশে থাক প্রোটিন, ফাইবার,ভিটামিন-খনিজের মিলমিশ। ছবি: সংগৃহীত।
দিনভর কাজকর্মের প্রয়োজনীয় শক্তি আসে খাবার থেকেই। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা বলেন, সকালের জলখাবারটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সারাটা দিন হাজারো ঝক্কি সামলাতে হলে শরীর সুস্থ রাখতেই হবে। ঠিক সে কারণেই দিনের শুরুর খাবারে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পরিমাণ মতো রাখতে হবে। একেই বলা হয় ‘ব্যালান্সড ডায়েট’। সোমবারেই সারা সপ্তাহের প্রাতরাশের মেনু ঠিক করে রাখতে পারেন।
দিনের শুরুটা ওট্স, মুগ বা বেসনের চিলা দিয়ে শুরু করতে পারেন। মুগ বা বেসনে মেলে প্রোটিন। চিলার ভিতরে ছানা, পালং, গাজর, মাশরুমের পুর দিতে পারেন। এতে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে। সঙ্গে রাখতে পারেন স্যুপ।
· সপ্তাহের এক দিন চিলা খেলে অন্য দিন দক্ষিণ ভারতীয় কোনও পদ রাখতে পারেন পাতে। ইডলি, উপমা যে কোনও খাবারই রাখা যায়। ইডলি যেহেতু চাল,ডাল মজিয়ে তৈরি, তাই এতে প্রোবায়োটিক মেলে। পেটের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। ইডলির সঙ্গে সম্বর খেলে তাতেই মিলবে প্রোটিন এবং ভিটামিন।
· প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত ভাল খাবার। এতে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। তবে সাদা ময়দার পাউরুটি নয়, ডিম খাওয়া যেতে পারে মাল্টিগ্রেন ব্রেডের সঙ্গে। বিভিন্ন সব্জি দিয়ে স্যান্ডউইচও বানিয়ে নেওয়া যায়। সঙ্গে ডিম সেদ্ধ বা পোচ, স্যুপ রাখতে পারেন জলখাবারে।
· সব্জি দিয়ে তৈরি ডালিয়ার উপমা বা খিচুড়িও হতে পারে প্রাতরাশের মেনু। আমিষ খাবার পছন্দ হলে এর সঙ্গে ডিম সেদ্ধ বা ডালিয়ার খিচুড়ির রান্নার সময় মুরগির মাংসও যোগ করতে পারেন। এতে স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
· তাড়াহুড়োয় খাওয়া সারতে হলে স্মুদি ভাল। ওট্স এবং বিভিন্ন রকম বাদাম, খেজুর, কলা অথবা আপেল এবং দুধ দিয়ে তৈরি করতে পারেন স্মুদি। এটি চট করে খাওয়া যায়, আবার পুষ্টিকরও। পাতে রাখা দরকার, স্বল্প পরিমাণে বাদাম এবং বীজ। ফলও ভিটামিন এবং খনিজের চাহিদা পূরণ করে।
· রাগির রুটি, কিনোয়া, সিরিয়ালস যেমন খেতে পারেন, তেমনই পুরনো পন্থা মেনে আটার রুটি, বিভিন্ন সব্জি দিয়ে তরকারি, ডালও থাকতে পারে খাবার তালিকায়।
কোন বিষয়গুলি এড়িয়ে যাবেন?
ভাজাভুজি, তেল-মশলাদার খাবার।
চিনিযুক্ত সিরিয়াল।
কার্বনযুক্ত ঠান্ডা পানীয়, বাজারচলতি ফলের রস।
সকালে উঠে একটু হাঁটাহাটি বা শরীরচর্চা করলে, দিনভর অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা এড়াতে পারলে এবং ঘড়ি ধরে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমোলেই শরীর ছন্দে ফিরবে।