ছবি : সংগৃহীত।
যাঁরা বয়স্ক, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন, ইসবগুল তাঁদেরই ‘জরুরি ওষুধ’ বলে জনমানসে পরিচিত। কিন্তু যদি জানতে পারেন, ইসবগুল আপনারও স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পারে, মায় ওজনও কমাতে পারে, তা হলে?
সস্তা এবং সহজলভ্য ইসবগুলের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে ৭১-৭৮ গ্রাম পর্যন্ত ফাইবার। ওজন কমানোর জন্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের খোঁজ করে থাকেন স্বাস্থ্য সচেতনেরা। আটা-ময়দা-ভাতের বদলে ডালিয়া, ওটস, কিনোয়া, জোয়ার, বাজরা, রাগি, শ্যামাচালের ভাত খান। অথচ ইসবগুল একাই ফাইবারে এই সব ক’টিকে টেক্কা দিতে পারে।
তা ছাড়াও এতে রয়েছে নানা রকম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং খনিজ। প্রতি ১০০ গ্রাম ইসবগুলে যে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হল—
প্রোটিন: ২-৫ গ্রাম
ফ্যাট: ০.৬ গ্রাম
ক্যালশিয়াম: ২০০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম: ২৬০-৮০০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম: ৮০-৩০০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম: ৫০ মিলিগ্রাম
আয়রন: ৪ মিলিগ্রাম
জ়িঙ্ক: ১.৫ মিলিগ্রাম
এমস প্রশিক্ষিত আমেরিকা নিবাসী গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সৌরভ শেঠি জানাচ্ছেন, ইসবগুল তার উপরোক্ত পুষ্টিগুণের জন্য নানা রোগ দূরে রাখতে সক্ষম। শুধু বয়স্কেরা নন, কমবয়সিরাও যদি এই পথ্য নিয়মিত খেতে পারেন, তবে তা স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করবে।
কী কী উপকারে লাগতে পারে ইসবগুল?
১। নিয়মিত ইসবগুল খেলে তা পাকস্থলিতে একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, যা অম্বল থেকে হওয়া বুকজ্বালা এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা দূরে রাখতে পারে।
২। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ইসবগুলে থাকা জলে দ্রবণীয় ফাইবার বাইল অ্যাসিডকে একত্রিত করে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। এই বাইল অ্যাসিডই ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বা এলডিএলের জন্য দায়ী। ফলে ইসবগুল খেলে কোলেস্টেরল দূরে থাকে। যা হার্টের নানা সমস্যার কারণ। ফলে ইসবগুল খেলে হার্টও ভাল থাকে।
৩।ডায়াবিটিসের সমস্যা ঘরে ঘরে। সমস্যা এতটাই যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ডায়াবিটিসের ব্যাপারে সতর্ক করছেন দেশবাসীকে। সেই ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে ইসবগুল। কারণ, এটি রক্তে শর্করা মেশার প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দেয়। যা সুগার স্পাইক অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হতে দেয় না।
৪। ইসবগুল খেলে তা পেট ভরিয়ে রাখে দীর্ঘ ক্ষণ। অকারণ ভাজাভুজি বা মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। ফলে বেশি খেয়ে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে না।
৫। শরীর থেকে যাবতীয় দূষিত পদার্থ বার করে দিয়ে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে ইসবগুল। সৌরভ বলছেন, ‘‘এতে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। আর অন্ত্র ভাল থাকলে ভাল থাকে লিভার। ভাল থাকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। নিয়ন্ত্রণে থাকে প্রদাহও। ফলে দূরে থাকে জ্বর-জ্বালা-সর্দি-কাশি এবং নানা ধরনের রোগ।”
কী ভাবে খাবেন ইসবগুল
প্রাপ্তবয়স্কেরা এক গ্লাস জলে ১-২ টেবিল চামচ ইসবগুল গুলে নিয়ে দিনে এক বার বা দু’বার খেতে পারেন। তবে প্রথম খাওয়া শুরু করলে কিছু দিন অল্প পরিমাণে খান। দিনে এক বার এক চামচ ইসবগুল খেয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়িয়ে নিন।