মোবাইল দেখার ভঙ্গিতেই স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি। ছবি: সংগৃহীত।
সারা দিন ফোনের দিকে চোখ, নয়তো ল্যাপটপ-কম্পিউটারে কাজ। শহুরে জীবনের অধিকাংশ জুড়ে এখন এমন ছবিই চোখে পড়ে। সেই সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময়ে যে বিশেষ ভঙ্গিতে আপনি বসে থাকেন বা দাঁড়িয়ে থাকেন, তা থেকেই মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অবসাদ গ্রাস করতে পারে। মাথা ঝুঁকিয়ে, কুঁজো হয়ে, ঘাড় নামিয়ে বসে থাকার এই ভঙ্গিই আসলে দায়ী। মোবাইল হাতে ধরে রেখে যে ভাবে ফোন দেখা হয়, সেই ভঙ্গিই মস্তিষ্ক ও মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। মেজাজ খারাপ হওয়া, শক্তি হ্রাস পাওয়া, উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়া বা আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার সঙ্গে নাকি সম্পর্ক রয়েছে এমন ভঙ্গির। তবে এই দুয়ের সম্পর্কে পারস্পরিক কার্যকারণসূত্র রয়েছে। মাথা ঝুঁকিয়ে বসার ভঙ্গি থেকে বাড়ে উদ্বেগ, আবার মানসিক সমস্যার কারণেও এই ভাবে বসার প্রবণতা বাড়ে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়।
দেহের অবস্থা, ভঙ্গি সরাসরি মানুষের চিন্তাধারা ও অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত। চিকিৎসকদের মতে, এমন ভাবে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে থাকলে শ্বাসপ্রক্রিয়া ও রক্ত সঞ্চালন ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফুসফুস পুরোপুরি সম্প্রসারিত হতে পারে না বলে অক্সিজেনের অভাব ঘটতে পারে। যা ক্লান্তি, বা অবসাদের সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া দেহে হরমোনের সামঞ্জস্যও প্রভাবিত হতে পারে। ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাত্র ২–৩ মিনিট এমন ভাবে বসে থাকলেই নাকি মেজাজ, শক্তি ও অনুভূতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই এই ভঙ্গিতে প্রায় প্রতি দিন, দীর্ঘ সময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে মাংসপেশি, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্র ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
কুঁকড়ে থাকার মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সমস্যা প্রকাশ পায়। ছবি: সংগৃহীত।
মনোবিদ জানাচ্ছেন, এমন ভঙ্গিতে বসে থাকলে দেহ মস্তিষ্ককে সঙ্কেত পাঠায় যে, মন ভাল নেই। এই প্রতিক্রিয়া কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে ক্লান্তি, মনোযোগ হ্রাস এবং উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা সামগ্রিক সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে শরীরে ও মনে অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। যার প্রভাবে এমন ভাবে বসে থাকার প্রবণতা আরও বাড়ে। এমনই এক চক্র গড়ে ওঠে এ ক্ষেত্রে। যাঁরা ইতিমধ্যেই উদ্বেগ বা মুড ডিজ়অর্ডারে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই চক্র বেশি দেখা যায়। অন্য দিকে, ঘাড় সোজা করে, পিঠ টানটান করে বসে থাকলে মানসিক জোর বাড়ে, মনে আনন্দ সৃষ্টি হতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসও তৈরি হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘দু’টিই দু’টিকে প্রভাবিত করে। কেউ যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ‘স্লাউচিং’ (মাথা ঝুঁকিয়ে বসার এই ভঙ্গির নাম) অবস্থায় বসে থাকলে বোঝা যেতে পারে, সামগ্রিক ভাবে মানসিক সমস্যা রয়েছে। কুঁকড়ে থাকার মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সমস্যা প্রকাশ পায় এমনিতেই। কারণ ভ্রুণে থাকা শিশু কিন্তু স্বস্তি, আশ্রয় খোঁজার জন্যই ও ভাবে কুঁকড়ে থাকে। তাই সাধারণত যদি কেউ অস্বস্তিতে থাকেন, তিনি ও রকম ভঙ্গির মধ্যে নিরাপত্তা খুঁজবেন।’’
কেবল মাত্র বসার ভঙ্গির কারণে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অবসাদের সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা নয়। কিন্তু যাঁদের মধ্যে আগে থেকেই এই সমস্ত মানসিক রোগের প্রকোপ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এমন ভঙ্গিতে বসে থাকলে দেহ মস্তিষ্ককে সঙ্কেত পাঠায় যে, মন ভাল নেই। ছবি: সংগৃহীত।
তাই বলা হচ্ছে, চোখ ও ফোন একই স্তরে থাকলে সুবিধা। খেয়াল রাখতে হবে, যেন মোবাইল বা ল্যাপটপ স্ক্রিন চোখের সারিতে থাকে। মাথা নীচে বা উপরে ঝুঁকে না থাকে। কাজের জন্য যদি এ ভাবে বেশি ক্ষণ বসে থাকতে হয়, তা হলে প্রতি ২০–৩০ মিনিট পর ব্যায়াম করা উচিত। অনেক ক্ষণ এক ভাবে বসে থাকার পর সচেতন হয়ে নিজেই ভঙ্গি সংশোধন করে ফেলা উচিত। পাশাপাশি, স্ট্রেচিং জাতীয় ব্যায়াম করলে উপকার মিলতে পারে।