সুস্থ থাকতে চিনি বাদ দিতে চান? তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় না রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ছবি:ফ্রিপিক।
সমাজমাধ্যম জুড়েই এখন স্বাস্থ্য নিয়ে চর্চা। তাতেই কার্যত ‘খলনায়ক’ হয়ে উঠেছে চিনি। ওজন বৃদ্ধি থেকে ক্লান্তি, চিনির অপকারিতা নিয়ে প্রচার কম নয়। সে সব তথ্য যে ভুল, তা নয়। চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, কেউই অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি খাওয়া সমর্থন করেন না। তা ছাড়া মেদ গলাতে গেলে বা ডায়াবিটিস থাকলে যথাসম্ভব চিনি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনিও কি স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দিতে চান? তার আগে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা ভাল।
শরীর-মনে প্রভাব: চিনি নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে পরিচিত ডোপামিন নামে হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে সুখানুভূতি হয়। চিনি জাতীয় খাবার একেবারেই ছেড়ে দিলে বা হঠাৎ করে বন্ধ করলে মন এবং শরীরে তার প্রভাব পড়তে পারে। পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়িকা অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘একদিনে হঠাৎ করে চিনি জাতীয় খাবার বন্ধ করে দিলে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সে কারণেই পরামর্শ দেওয়া হয় ধীরে ধীরে মিষ্টি খাওয়ার মাত্রা কমানোর।’’
প্রাকৃতিক মিষ্টি: চিনি জাতীয় খাবার মানেই পুরোটাই খারাপ, অত্যন্ত ক্ষতিকর, এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়, জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ। শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কাজের জন্য শর্করার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন রকম ফল, সব্জিতেও কিছুটা প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। তা কিন্তু ক্ষতিকর নয়। ডায়াবিটিস থাকলে বেশি মিষ্টি জাতীয় ফলে নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে, তবে এই ফল বা সব্জিগুলিও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা চিনি বা চিনি যুক্ত পানীয় একেবারেই শরীরের জন্য ভাল নয়। এটি শুধুমাত্র শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে। অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার ত্বকের অকালবার্ধক্যের কারণ হতে পারে। চিনির অণু কোলাজেন নামক প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় অনেক সময়। একে বলে 'গ্লাইকেশন'। এর ফলে মুখে বলিরেখা পড়তে পারে, ত্বক কুঁচকে যেতে পারে।
অনেক খাবারে লুকনো চিনি থাকে: প্যাকেটজাত অনেক খাবারে সরাসরি চিনির উল্লেখ না থাকলেও অনেক উপাদানে চিনি থাকে। যেমন সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ জাতীয় সিরাপ, মলটোডেক্সট্রিনে (ভুট্টা, চাল, আলু থেকে প্রাপ্ত সাদা গুঁড়ো) শর্করা থাকে। ‘কম ফ্যাটযুক্ত’, ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে চিহ্নিত প্যাকেটজাত খাবারেও লুকনো শর্করা থাকে।
স্বাদ: চা থেকে শরবত কিংবা দই— যে সমস্ত খাবার চিনি দিয়ে খেতে অভ্যস্ত, সেগুলি থেকে চিনি বাদ দিলে খাবারের স্বাদ বদল হবে। কারও কারও মুখে সাধারণ ফলও বেশি মিষ্টি বলে মনে হতে পারে।
চিনি বাদ দিলে: শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে দিলে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যেই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে পেটের স্বাস্থ্য ভাল হবে। মেদ গলবে দ্রুত। হজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে পারে এতে।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া দৈনন্দিন খাবার থেকে শর্করা বা চিনি জাতীয় খাবার একেবারে বাদ দেওয়া ঠিক নয়। কৃত্রিম চিনি যত কম খাওয়া যায়, ভাল। তবে শরীরে শর্করারও কিছু প্রয়োজনীয়তা থাকে।