বাড়ির পোষ্যের আঁচড় লাগলেও কি টিকা নিতে হবে? ছবি: ফ্রিপিক।
রাস্তার কুকুর বা বিড়াল যদি আঁচড়ে দেয়, তা হলেও কি জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে? এই প্রশ্ন অনেকেরই। কুকুর বা বিড়াল কামড়ে দিলে এবং কামড়ানোর জায়গায় গভীর ক্ষত হয়ে রক্তপাত হতে থাকলে, তখন অ্যান্টি-র্যাবিস টিকা নিতেই হয়। কিন্তু হালকা আঁচড়ের ক্ষেত্রেও কি তা প্রযোজ্য? আর যদি বাড়ির পোষ্য হয়, তা হলে কী করতে হবে?
বাড়ির পোষ্য যদি জলাতঙ্কের রোগের জীবাণু বহন করে, তা হলে হালকা আঁচড় বা কামড়, যে কোনও ক্ষেত্রেই টিকা নেওয়া জরুরি। কারণ, জলাতঙ্কের জন্য দায়ী র্যাবিস ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে। দেহকোষের মধ্যে বিভাজিত হয়ে বংশবিস্তার করতে পারে। এই ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকে একের পর এক নষ্ট করতে থাকে। বাড়ির পোষ্যদের সাধারণত টিকা দেওয়াই থাকে, তাই সে ক্ষেত্রে বিপদ কম। তবে যদি শরীরে আগে থেকে কোনও ক্ষত থাকে আর সেখানেই আঁচড় বা কামড়ের ক্ষত হয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
রাস্তার কুকুর বা বিড়ালের ক্ষেত্রে যাদের টিকা দেওয়া থাকে না, তাদের সামান্য আঁচড় লাগলেও টিকা নিয়ে রাখা ভাল। এমনটাই জানিয়েছেন পশুরোগ চিকিৎসক চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী। তাঁর মতে, যে কোনও ধরনের আঁচড় বা কামড়ের ক্ষেত্রে আগে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করে নিতে হবে। ক্ষতের জায়গা ১০-১৫ মিনিট ধরে সাবান জল বা আয়োডিন দ্রবণে ধুতে হবে। ক্ষতের জায়গায় কখনওই ব্যান্ডেজ বাঁধবেন না। ভাল করে পরিষ্কার করে নিয়ে অতি দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। হালকা আঁচড়ে রক্ত না বেরোলেও যদি ত্বক চিরে যায়, তা হলেও টিকা নিয়ে রাখা জরুরি। কারণ সেই প্রাণীটি শরীরে ভাইরাস বহন করছে কি না, তা জানা নেই। তাই প্রতিষেধক নিয়ে রাখাই ভাল।
রাস্তার কুকুর বা বিড়ালকে অনেকেই আদর করেন, খেতেও দেন। এমন যদি হয় যে, কুকুর বা বিড়াল চেটে দিল এবং সেই জায়গায় আগে থেকেই কোনও ক্ষত ছিল আপনার, তা হলেও কিন্তু টিকা নিতে হবে। কারণ, লালার মাধ্যমে জীবাণু সেই ক্ষতস্থান দিয়ে শরীরে ঢুকে রক্তে মিশতে পারে। এতে জলাতঙ্কের আশঙ্কা না থাকলেও, অন্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।
অ্যান্টি-র্যাবিস টিকা যদি নেন, তা হলে নিয়ম মেনেই নিতে হবে, সে আঁচড় বা কামড় গভীর না হলেও। জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার দু'টি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে— ১) ‘পোস্ট-এক্সপোজ়ার প্রোফাইল্যাক্সিস’, অর্থাৎ, কামড়ানোর বা আঁচড়ানোর পর টিকা নেওয়া, এবং ২) ‘প্রি-এক্সপোজ়ার প্রোফাইল্যাক্সিস’, অর্থাৎ আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে টিকা নিয়ে রাখা। ‘পোস্ট-এক্সপোজ়ার প্রোফাইল্যাক্সিস’-এর ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন‘ (এআরভি) নিতে হবে। পাঁচটি ডোজ়ে নিতে হবে এই টিকা। একটি ডোজ় সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে। অন্যগুলি ৩, ৫, ৭ ও ১৪ দিনের ব্যবধানে নিতে হবে। পঞ্চম ডোজ়টি নিতে হবে ২৮ দিন পরে। তবে শুধু অ্যান্টি-র্যাবিস টিকা নিলেই হবে না, সঙ্গে র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন টিকাও নিয়ে নিতে হবে। আর খেয়াল করে টিকার ডোজ় সম্পূর্ণ করতেই হবে। মাঝপথে ছেড়ে দিলে রোগের ঝুঁকি বাড়বে।