ভেপিং কী, কতটা বিপজ্জনক? ফাইল চিত্র।
সিগারেট ছেড়ে এখন ‘ভেপিং’-এর নেশিয়া আসক্ত শহরাঞ্চল। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাইয়ের ছবিটা ভয় ধরানোর মতোই। সিগারেট ছেড়ে ই-সিগারেটের নেশা বাড়ছে কমবয়সিদের। অনেকেরই ধারণা, তামাক নেই যেহেতু, তাই ভেপিং অনেক বেশি নিরাপদ। আর এই ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকেই বিপদ আরও বাড়ছে। ভেপিং-এর খারাপ দিক নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই সচেতন করছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। সমীক্ষায় তারা জানিয়েছে, ধূমপানের নেশা থেকে মুক্তির জন্যই ই সিগারেটকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কমবয়সিরা এবং আসক্তও হয়ে পড়ছেন। এর থেকে নানা জটিল রোগও ছড়াতে শুরু করেছে।
কী এই ‘ভেপিং’, কেন বিপজ্জনক?
সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ‘ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম’ (এন্ডস) বা ‘ইলেকট্রনিক সিগারেট’ ব্যবহার করেন অনেকে। ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত যন্ত্রগুলির মধ্যে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। সেখানে বিশেষ রকম তরল ভরা থাকে, যাকে বলে ই-লিক্যুইড। এই তরলকে গরম করে বাষ্পীভূত করে তৈরি হয় অ্যারোসল। একে জলীয় বাষ্প বলে মনে হলেও তার মধ্যে মিশে যাকে নানা রকম রাসায়নিক। এই বাষ্প মুখ দিয়ে টানলে সেই সব রাসায়নিক শরীরে ঢুকে নানা জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠবে। ঝুঁকি বাড়বে ক্যানসারেরও।
আমেরিকার ‘জন্স হপকিনস মেডিসিন’ ও দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে , ই-সিগারেটে যে রাসায়নিকগুলি থাকে, সেগুলি তামাকের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। ই-লিক্যুইডে থাকে প্রোপিলিন গ্লাইকল, ফ্লেভারিং কেমিক্যাল (মেন্থল, ক্যান্ডি), ডায়াসিটাইল, অ্যাসিটোন, অ্যাসিটালডিহাইড,বেঞ্জিন, ফরম্যালডিহাইডের মতো রাসায়নিক, যা শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা হয়। এগুলি ফুসফুসে গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে। এই সব রাসায়নিকের কারণে কোষের ক্ষতি হয়, ডিএনএ-র মিউটেশন (রাসায়নিক বদল) হতে পারে। তা ছাড়া ই-সিগারেটে থাকে ‘ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড’, যেমন অ্য়াক্রোলিন যা আগাছা দূর করার জন্য কাজে লাগানো হয়। এমন রাসায়নিক শরীরের জন্য বিষ। ভিটামিন-ই অ্যাসিটেটের মতো যৌগও থাকে ই-সিগারেটে, যা গাঁজা থেকে পাওয়া যায়। এই রাসায়নিক হার্টের জন্য ক্ষতিকর। ফলে দিনের পর দিন ই-সিগারেটে টান দিলে নানা রকম অটোইমিউন রোগ, স্নায়বিক রোগ, ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ই-সিগেরেটে তামাক পুড়ছে না বলে, এতে ক্ষতি নেই বলেই মনে করছেন কমবয়সিরা। তবে এর নিজস্ব রাসায়নিক পদার্থগুলি ক্যানসার হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আইসিএমআরের সমীক্ষা বলছে, ই-সিগারেটের কারণেই কমবয়সিদের মধ্যে ব্রঙ্কিয়োলাইটিস, ‘পপকর্ন লাং'-এর মতো রোগ বাড়ছে। ই-লিক্যুইডে থাকা ডায়াসিটাইল যৌগটি ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। এর থেকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সারা শরীরে কাঁপুনি, জ্বর, বমি ভাব ও প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দেয়। ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় যে নিকোটিন মিশে থাকে, তা চারপাশের মানুষজনের জন্যও ক্ষতিকর। এর থেকে ফুসফুসে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।