রক্তে শর্করা বশে রাখতে কি ঘরোয়া টোটকাই ভাল? ছবি: সংগৃহীত।
কেউ বলেন, সকালে উঠে মেথি ভেজানো জল খেলেই সুগার বাড়বে না। কারও নিদান করলার রস খাও। কেউ বলছেন, সমস্যার সমাধান করবে ভিটামিন সি-তে ভরপুর আমলকির রস। রক্তে শর্করা বশে রাখতে রকমারি টোটকার প্রচলন বহু দিন ধরেই। সুগারের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ভেষজ জিনিসে ভরসা রাখেন। সমাজমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা বিস্তর।
কিন্তু লোকে যা জানেন এবং মানেন, তা কি ঠিক? কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, ‘‘পুরোটা ঠিক না হলেও, কিছুটা ঠিক তো বটেই। যেমন মেথি ভেজানো জল যে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে একাধিক গবেষণাতে তা প্রমাণিত।’’
ডায়াবিটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। কারও শরীরে ইনসুলিন হরমোন ঠিকমতো নিঃসৃত হওয়া সত্ত্বেও ঠিক ভাবে কাজ না করলে সমস্যা হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে তৈরি হয় ইনসুলিন, যা শর্করাজাতীয় খাবার থেকে শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে। শরীরে যদি সেই হরমোন ঠিক ভাবে কাজ না করে, তা হলেই শুরু হয় সমস্যা। আবার কারও শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদনই কম হয়। তার ফলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
মেথি জল খেতে বলেন অনেকেই। আসলে মেথিতে থাকে সলিউবল ফাইবার। ফাইবার শরীরে ছাঁকনির কাজ করে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে দ্রুত শরীরে শর্করা নিঃসৃত হতে দেয় না। মেথি ভেজানো জল খাওয়ার খানিক পরে কেউ প্রাতরাশ সারলে, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। মেথিতে রয়েছে থায়ামিন, ফোলিক অ্যাসিড, রাইবোফল্যাভিন, নিয়াসিনের মতো উপকারী উপাদান। এগুলি ছাড়াও পটাশিয়াম, জ়িঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ়, সেলেনিয়াম মেলে এতে। ২০১৫ সালে ‘পাবমেড’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণালব্ধ তথ্য বলছে, টাইপ ২ ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে মেথির ভূমিকা রয়েছে।
করলার রস, তা কতটা উপকারী? অভিজ্ঞান জানাচ্ছেন, করলা-সহ যে সব শাকসব্জিতে ফাইবার রয়েছে তা ডায়াবেটিকদের জন্য ভাল। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত গতিতে বাড়তে দেয় না। সেই কারণে, ডায়াবিটিসের রোগীদের খাবারের সঙ্গে ফাইবারও জুড়তে বলা হয়।
করলায় মেলে পলিপেপটাইড পি এবং চ্যারেনটিন নামে একটি যৌগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সকালে উঠে খালি পেটে জলের সঙ্গে করলার রস মিশিয়ে খেলে শুধুমাত্র শর্করা বশে থাকবে না, পাশাপাশি ভাল থাকবে কিডনি আর লিভারও।
কেউ পরামর্শ দেন আমলকির রস খাওয়ার। ভিটামিন সি-তে ভরপুর ফলটি। রয়েছে একাধিক ভিটামিন এবং খনিজ। কেউ কেউ যেমন আমলকির রস খান, কেউ আবার দিনের শুরুতে আমলকি চিবিয়ে খান। এতে কি সুগার কমে? চিকিৎসকের মত, আমলকি সরাসরি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম না হলেও, তা ডায়াবিটিক রোগীদের জন্য ভাল। ডায়াবিটিস হলে ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টি—অক্সিড্যান্টের কাজ করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। ফলে ডায়াবিটিস থেকে বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়ার যে প্রবণতা থাকে, তা কিছুটা হলেও রুখে দেয়।
ঘরোয়া টোটকা নিয়ে অভিজ্ঞানের মত, মেথির জল, করলার রস, আমলকি— কোনওটাই তো শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। রক্তে শর্করা বশে রাখতে হলে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন— এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে। প্রয়োজন হয় ওষুধ খাওয়ারও। তবে এগুলি ক্ষতিকর নয় বলে, কেউ খেলে অসুবিধা হওয়ার কথা