Drone Technology for Blood Delivery

৮ মিনিটে ৩৬ কিমি পথ, হাসপাতালে দ্রুত রক্ত পৌঁছে দেবে ড্রোন, নতুন প্রযুক্তি আনছে আইসিএমআর

রক্তের ব্যাগ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে সেগুলিকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে আর গাড়ি বা ভ্যানের উপর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধানে নতুন এক উপায় খুঁজে বার করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১৪:৩৬
Share:

প্রত্যন্ত এলাকায় কম সময়ে রক্ত পৌঁছে দিয়ে মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাবে ড্রোন। ফাইল চিত্র।

হাসপাতালের শয্যায় রক্তের অভাবে ধুঁকছেন রোগী। হাসপাতাল বলছে, তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত নেই তাদের কাছে। কোথায় মিলবে, তা-ও বলতে পারছে না তারা। দিশাহারার মতো ছোটাছুটি করছেন আত্মীয়পরিজন। যদিও বা কোনও ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পাওয়া গেল, তা হাসপাতালে বয়ে নিয়ে আসার পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে অনেক জায়গায়। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যখন সেই রক্ত হাসপাতালে পৌঁছবে, তত ক্ষণে তা রোগীকে দেওয়ার আর উপযোগী থাকবে না। রক্তের ব্যাগ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে সেগুলিকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে আর গাড়ি বা ভ্যানের উপর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধানে নতুন এক উপায় খুঁজে বার করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। সেটি হল ড্রোন।

Advertisement

ড্রোন ওষুধ বয়ে নিয়ে যায় না, অস্ত্রশস্ত্রও বইতে পারে, বিপর্যয়ের সময়ে দুর্গম জায়গায় খাবার পৌঁছে দিতেও এর ব্যবহার হয়। এ বার রক্ত পৌঁছে দিতেও ড্রোনের সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আইসিএমআর। ‘ড্রোন বেস্ড ব্লাড ডেলিভারি’ নামে নতুন এক প্রকল্পও শুরু হতে চলেছে। কত কম সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রক্ত পৌঁছে দেওয়া যাবে গন্তব্যে, তার পরীক্ষা চলছে।

আকাশপথে রক্ত পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা অনেক। এমনটাই দাবি আইসিএমআরের। প্রথমত, রক্ত ও তার উপাদানগুলি যেমন প্লেটলেট, কনসেন্ট্রেটেড আরবিসি (গাঢ় লোহিত রক্তকণিকা) এবং প্লাজ়মা— সবই বয়ে নিয়ে যেতে পারবে ড্রোন। রক্তের ব্যাগ নিলেই হল না, সেখানে তাপমাত্রা এমন রাখতে হবে, যাতে রক্তের উপাদানগুলি ভেঙে না যায়। অনেক সময়েই দেখা যায়, তাপমাত্রার হেরফেরের কারণে রক্তের লোহিত কণিকাগুলি ভাঙতে শুরু করে। যত ক্ষণে গাড়ি হাসপাতালে পৌঁছবে, তত ক্ষণে তাতে হিমোলাইসিস হয়ে যাবে, অর্থাৎ, রক্তের উপাদানগুলি এমন ভাবে ভেঙেচুরে যাবে যে সেই রক্ত রোগীর শরীরে গেলে, সংক্রমণ হতে বাধ্য।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, পরিবহনের সময় অনেক কমে যাবে। আইসিএমআর তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছে, রাস্তায় যানজট ও অন্যান্য অসুবিধা পেরিয়ে ৩৬ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিয়ে যেখানে গাড়ি বা ভ্যানে প্রায় ৫৫ মিনিট লেগে যাবে, সেখানে ড্রোন মাত্র ৮ মিনিটেই পৌঁছে যাবে। মুমূর্ষু রোগীকে বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।

তৃতীয়ত, দুর্গম বা প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে যানবাহন পৌঁছনোর সমস্যা আছে, সেখানে বায়ুপথে রক্ত পৌঁছে দেওয়া অনেক সহজ ও কার্যকরী। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি অবস্থায়, যখন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন ড্রোনই একমাত্র ভরসা হতে পারে।

এই প্রযুক্তি শুরু হলে প্রাথমিক ভাবে খরচ বেশি হতে পারে ঠিকই, তবে দীর্ঘ মেয়াদে ড্রোনের ব্যবহারে রক্ত ও তার উপাদান পৌঁছে দেওয়ার খরচ অনেক কমে যাবে বলেই জানিয়েছে আইসিএমআর। কোনও দুর্ঘটনায় সঙ্কটাপন্ন রোগী বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময়ে জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন হলে, সহজে ও কম সময়ে রক্ত পৌঁছে দিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ড্রোনই আগামী দিনে ভরসার হাত হয়ে উঠতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement