কেগেল ব্যায়ামেই ফিরবে সম্পর্কের উষ্ণতা। ছবি: শাটারস্টক।
বাড়ির কাজ, সংসারের দায়-দায়িত্ব, অফিসের চাপ সামলে মহিলাদের পক্ষে নিজের জন্য সময় বার করা বেশ কঠিন। নিজের প্রতি অবহেলার কারণেই ৪০-এর পর থেকে মহিলাদের শরীরে নানা রকম অসুখ বাসা বাঁধতে শুরু করে। ক্লান্তি, পেশির জোর কমে যাওয়া, গাঁটের যন্ত্রণা নানা রকম সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন তাঁরা। ফিটনেস প্রশিক্ষক লুক কাউন্টিনো ইনস্টাগ্রামের একটি ভিডিয়োতে বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মহিলার দিনে অন্তত এক বার সময় বার করে কেগেল ব্যায়াম করা উচিত।’’
মহিলাদের জন্য কেগেল ব্যায়াম এত জরুরি কেন?
শ্রোণিদেশের পেশির বিভিন্ন ব্যায়াম একত্রে 'কেগেল এক্সারসাইজ়' নামে পরিচিত। হাত-পা ও শরীরের অন্যান্য অংশের পেশির মতোই পেলভিক মাসলের শক্তিও যাতে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অটুট থাকে, মূত্রথলির কর্মক্ষমতা বজায় থাকে, তার জন্য প্রত্যেক মহিলার এই ধরনের ব্যায়াম করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, সেই সব মহিলাদের জন্য এই ব্যায়াম আবশ্যিক। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেটের সমস্যায় কেগেল এক্সারসাইজ়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফিটনেস প্রশিক্ষক রাজা দাস রোজের শরীরচর্চার রুটিনের শেষে অন্তত ৭-৮ সেট করে কেগেল ব্যায়াম আবশ্যিক ভাবে করার পরামর্শ দিলেন। সন্তানধারণের পরে মহিলাদের অ্যাবডমিনাল অরগ্যানগুলি দুর্বল হয়ে নীচের দিকে ঝুলে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। অস্ত্রোপচারের পরে নির্দিষ্ট সময় বিশ্রাম নিয়ে শারীরচর্চার রুটিনে ফেরার পরে তাঁদের পেলভিক টিল্ট বা ব্রিজ এক্সারসাইজ় করতে হবে নিয়মিত।
শুধু তা-ই নয়, প্রসবের পর অনেক মহিলাই প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না, তাঁদের মূত্রথলির কার্যকারিতা কমে যায়। সেই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতেও কিন্তু এই কেগেল ব্যায়াম নিয়ম করে অভ্যাস করতে হবে। প্রশিক্ষক লু বলেন, ‘‘প্রসবের পর অনেক মহিলারই যোনি অঞ্চলের পেশিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে, যার প্রভাব পড়ে তাঁদের যৌনজীবনেও। নিয়ম করে কেগেল ব্যায়াম করলে এই সমস্যাও দূর হয়। এ ছাড়া কোমর, নিতম্বের জোর বাড়ানো ও সেখানকার পেশি শক্ত করা এবং টোন-আপ করার ক্ষেত্রে খুবই কাজে দেয় এই ধরনের ব্যায়াম। মাঝবয়সি মহিলাদের তলপেট ঝুলে যাওয়ার সমস্যা রোধ, ঊরুর পেশিও টোন্ড হয় এতে।’’
কী ভাবে করবেন?
মাটিতে চিত হয়ে সোজা ভাবে শুয়ে পড়ুন। দুই পা ফাঁক করে রাখুন, হাত দু’টি শরীরের দু’পাশে সোজা করে রাখুন। এ বার শরীরের নিম্নভাগ (বুকের নীচ থেকে নিতম্ব পর্যন্ত) উপরের দিকে উঠিয়ে দিন। এ বার ১৬ গুনতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। হয়ে গেলে ধীরে ধীরে শরীর নীচে নামিয়ে দিন। প্রত্যেক দিন ৭-৮ সেট করলেই যথেষ্ট।
কেগেল ব্যায়াম। ছবি: শাটারস্টক
এ ছাড়া কেগেলের সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম কোনও জায়গায় বসে বা শুয়ে দম ধরে রাখা ও ছাড়ার মাধ্যমেই করা যায়। প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করার মতো করে পেলভিক মাসলগুলি শক্ত করে ধরে রাখতে হবে ও ছেড়ে দিতে হবে। মূত্রথলি খালি রয়েছে, অবশ্যই এমন সময়ে এটি করতে হবে।
কেগেল ব্যায়াম করার আগে দক্ষ ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যাঁদের ওজন অত্যধিক বেশি, তাঁরা ওজন না কমিয়ে এই ব্যায়াম করবেন না। এতে কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোমরে কোনও চোট বা আঘাত থাকলেও এই ব্যায়াম করা উচিত নয়।