Menstruation Cycle

মাসে দু’বার ঋতুস্রাব, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কি স্বাভাবিক? কেন হচ্ছে? কোনও রোগ বাসা বাঁধেনি তো?

দু’টি ঋতুচক্রের মাঝের ব্যবধান সাধারণত ২৮ থেকে ৩৮ দিনের হয়। যদি ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যায়, তা হলে মাসে দু’বার বা একবারেই টানা ৭ দিন ধরে চলতে পারে। এর নেপথ্যে অনেক কারণ রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ১২:৫৬
Share:

প্রতি মাসে দু’বার করে ঋতুস্রাব হচ্ছে? এর কারণ কী, কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? ফাইল চিত্র।

একই মাসে দু’বার ঋতুস্রাব হচ্ছে? অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যাও হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এমন সমস্যায় ভুগছেন অনেক মেয়েই। সাধারণত গর্ভনিরোধক বড়ি বেশি খেলে, এমন হতে দেখা যায়। তবে তা ছাড়াও মাসে দু’বার ঋতুস্রাব, তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা, ঋতুকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। প্রতি মাসেই এমন চলতে থাকলে, তখন সতর্ক হতে হবে। কী থেকে এমন হচ্ছে, কেনই বা হচ্ছে, তা জেনে রাখা ভাল।

Advertisement

দু’টি ঋতুচক্রের মাঝের ব্যবধান সাধারণত ২৮ থেকে ৩৮ দিনের হয়। যদি ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যায়, তা হলে মাসে দু’বার বা একবারেই টানা ৭ দিন ধরে চলতে পারে। এর নেপথ্যে অনেক কারণ রয়েছে।

মাসে দু’বার ঋতুস্রাবের কারণ কী?

Advertisement

হরমোনের গোলমাল

প্রত্যেক মেয়েই জন্মানোর সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম (এগ) নিয়ে জন্মায়। সেই সংখ্যাটা সাধারণত ১০ লক্ষের কাছাকাছি। ঋতুস্রাব শুরুর সময়টায় গিয়ে এই সংখ্যাটা কিছুটা কমে যায়। যদি ১৪ বছর বয়স থেকে ঋতুস্রাব শুরু হয়, তা হলে ১৪ থেকে ৫০ বছর বয়স অবধি প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু ফ্যালোপিয়ান নালিতে চলে আসে। সেটি সেখানেই নিষিক্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। ডিম্বাণু জরায়ুতে এসে যে জায়গায় থিতু হয়, সেখানে একটি স্তর তৈরি হয় যার নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। মহিলাদের শরীরের দুই হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এই ডিম্বাণু তৈরি ও নির্গমনের প্রক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরটির ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন হরমোন। এ বার যদি ডিম্বাণুটি নিষিক্ত না হয়, তবে প্রোজেস্টরনের মাত্রা কমতে থাকে। তখন এই হরমোনটি এন্ডোমেট্রিয়ামের স্তর ভেঙে দেয়, এবং এই স্তরটিই ঋতুস্রাবের আকারে বেরিয়ে আসে। এখন যদি ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের গোলমাল দেখা দেয়, তা হলে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে।

পেরিমেনোপজ় কি এগিয়ে আসছে?

পেরিমেনোপজ় বা রজোনিবৃত্তির সময় এগিয়ে এলে মাসে দু’বার বা তার বেশি ঋতুস্রাব হতে পারে। ভারতীয় মহিলাদের ৪৫ থেকে ৫৫ বছর অবধি বয়সকালে মেনোপজ় বা রজোনিবৃত্তি হতে দেখা যায়। কিন্তু এখন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে অনিয়মের কারণে হরমোনের তারতম্য হচ্ছে খুব বেশি। তাই সময়ের আগেই রজোনিবৃত্তির পর্ব এগিয়ে আসছে অনেকের। ৩৮-৪০ বছর বয়সেও রজোনিবৃত্তির আগের পর্ব অর্থাৎ পেরিমেনোপজ়ের লক্ষণ দেখা দিয়েছে এমন মহিলার সংখ্যাও কম নয়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম

দ্বিতীয় কারণ হতে পারে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)। এ ক্ষেত্রেও হরমোনের গোলমালই কারণ। প্রতি মাসের অনিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ু থেকে বেরিয়ে যেতে না পেরে তা যদি জমা হতে থাকে, তা হলে একসময়ে সিস্টের আকার নেয়। এই সিস্ট জমতে জমতেই পিসিওএসের লক্ষণ দেখা দেয়। তখন ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যায়। যদি প্রতি মাসেই ঋতুস্রাব দু’বার করে হয়, সেই সঙ্গে পেটে যন্ত্রণা, বমি ভাব, ওজন আচমকা কমে যাওয়া, শরীরে অবাঞ্ছিত রোমের আধিক্য দেখা দেয়, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।

থাইরয়েডের সমস্যা নয় তো?

হাইপোথাইরয়েডিজ়মের কারণেও ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যায়। থাইরয়েডের সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া জরুরি।

ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড

জরায়ুতে অনেক সময়ে ফাইব্রয়েড বা পলিপ তৈরি হয়। সেগুলি যে সব সময় ক্যানসার কোষের কারণে হয় তা নয়। এগুলিকে বলা হয় ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড। এমন হলেও ঋতুস্রাব বারে বারে হতে পারে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়।

পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ় (পিআইডি)

ঋতুস্রাব না হলেও যখন-তখন রক্তপাত হতে পারে। একে অনেকে ঋতুস্রাব বলে ভুল করেন। পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ় আসলে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেট ডিজ়িজ়’। অসংযত যৌন জীবনের কারণে এই রোগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা হওয়া জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement