ছবি : সংগৃহীত।
শালপাতায় মোড়া একরাশ সবুজ রসালো তারা! তাতে মশলা মাখানো। স্বাদ টক ঝাল মিষ্টি! তাতেই লুকিয়ে এ যুগের রোগের ওষুধ!
আম, জাম, আপেল, পেয়ারা, কলা, লেবুর মত ‘কুলিন’ ফল নয়। নাম কামরাঙা। আর কিছু দিন পরেই অফিসপাড়ায়, স্কুল-কলেজেচত্বরে দেখা মিলবে এই ফলের। তারার মতো আকৃতির এই ফল দেখতে যতটা সুন্দর, খেতেও ততটাই স্বাদু। পুষ্টিবিদেরা অবশ্য বলছেন, কামরাঙা পুষ্টিগুণেও টক্কর দিতে পারে অনেক ফলকে। সেই হিসাবে একে সুপারফুড বললেও অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু নামী দামি গুণী খাবারের ভিড়ে তার ‘সুপারফুড’ তকমা জোটেনি।
পুষ্টিবিদ শিখা শর্মা ইনস্টাগ্রামের একটি পোস্টে সবিস্তার জানিয়েছেন এই তথাকথিত অনামী ফলের গুণাগুণ। তিনি বলছেন, কামরাঙায় রয়েছে আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বহু রোগের সমাধান।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
কামরাঙায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরকে দূষণমুক্ত করে সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পারে।
২. হজমশক্তি বৃদ্ধি
কামরাঙায় থাকা এনজ়াইম এবং ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এটি হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূরে রাখে।
৩. হৃদ্রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপে
কামরাঙায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য কামরাঙা উপকারী। এ ছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। দু'টি বিষয়ই হার্ট ভাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে
যদি ওজন কমানোর পরিকল্পনা থাকে, আর খাদ্যতালিকায় কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার রাখতে চান, তবে কামরাঙা রাখতে পারেন। প্রথমত, কামরাঙায় থাকা ফাইবার এবং জল দীর্ঘ ক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। দ্বিতীয়ত, এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বিপাকের হার বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে জরুরি।
৫. উজ্জ্বল ত্বক
কামরাঙায় রয়েছে ত্বকের বয়স ধরে রাখার ক্ষমতা। এর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে। একই সঙ্গে বলিরেখা কমাতেও এটি সহায়ক। নিয়মিত এই ফল খেলে ত্বকে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য আসে। রাস্তাঘাটের ধুলো, দূষণ এবং রোদের অতিবেগনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতেও পারে এই ফলে থাকা উপাদান।
৬. ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে
কামরাঙা ডায়াবিটিসের রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। কারণ এটি স্বাদে মিষ্টি হলেও এর গ্লাইসেমিক সূচক কম। ফলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা সহজে বাড়তে দেয় না। এতে ডায়াবিটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭. প্রাকৃতিক লিভার পরিষ্কার
কামরাঙা লিভারের জন্যও উপকারী। কারণ, এর শরীরকে দূষিত পদার্থ থেকে মুক্ত করার ক্ষমতা আছে। বাইরের তেল-মশলাযুক্ত খাবার থেকে শরীরে যে দূষিত পদার্থ জমে, এটি তার থেকেও লিভারকে মুক্ত করে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে যদি লিভার বা কিডনির অসুস্থতা থাকে, তবে খাওয়ার আগে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
৮. হাইড্রেশনে সাহায্য করে
কামরাঙায় ৯০% জল থাকায় এটি শরীরে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা যোগায়। বিশেষ করে শরীরচর্চার পরে এটি খাওয়া উপকারী। আয়ুর্বেদে শরীর ঠাণ্ডা রাখতেও এই ফলের উপযোগিতার উল্লেখ আছে।
৯. প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান
কামরাঙায় রয়েছে নানা ধরনের জরুরি পুষ্টিগুণ। এতে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়ায়াম, আয়রন এবং ভরপুর পটাশিয়াম। সম্ভবত এই জন্যই এই ফলকে সুপারফুড বলছেন চিকিৎসক। তিনি এ-ও বলছেন যে হাড় এবং পেশির স্বাস্থ্যের জন্য এই প্রতিটি পুষ্টিগুণ অত্যন্ত উপকারী।