সুগার কমাতে ওষুধের পাশাপাশি খান একটি ফল, কখন ও কী ভাবে খাবেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
খাবারে চিনির মাত্রা কমালেই রক্তে চিনির পরিমাণ কমবে, সব সময়ে এমনই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যে ভাবে ডায়াবিটিসের প্রকোপ বাড়ছে ক্রমশ, তাতে রক্তে চিনির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে বইকি! ইনসুলিন নির্ভর হলে সে আশঙ্কা আরও বাড়ে৷ টাইপ ২ ডায়াবিটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে এর প্রভাব পড়ে চোখ ও কিডনিতে। সুগার বশে থাকলে রোগ ঠেকিয়ে রাখা যায় বহু দিন৷ তার জটিলতাও কম থাকে৷ গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন বা এইচবিএ১সি সাত–এর নীচে রাখতে পারলে খুব ভাল৷ আর সে জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতেই হবে। তবে এর পাশাপাশি সহায়ক কিছু টোটকাও রয়েছে, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উপকারে আসতে পারে। তেমনই একটি উপায় হল আমলকি।
আমলকি খেলেই যে সুগার কমে যাবে, তা নয়। এটি ওষুধ বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের বিকল্পও নয়। আমলকি এক ধরনের সহায়ক পথ্য, যা সুগার বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজে আসতে পারে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, আমলকি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট (পলিফেনল, ট্যানিন), ফাইবার ও ক্রোমিয়াম থাকে। আগেকার দিনে সকালে খালি পেটে কাঁচা আমলকি চিবিয়ে খেতেন অনেকে। তখন তো আর এত রকম ওষুধ ছিল না। আমলকির রস অনেক রকম অসুখবিসুখ থেকে সুরক্ষা দিত। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতেই শুধু নয়, হার্ট ভাল রাখতে, ত্বক-চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায়, অ্যালার্জিজনিত রোগ থেকে রেহাই পেতেও আমলকির ভূমিকা রয়েছে।
আমলকি কী ভাবে খেলে উপকার হবে?
সকালে খালি পেটে কাঁচা আমলকি খেলে উপকার হবে। সেই সময়ে এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও ক্রোমিয়াম শরীরে ভাল ভাবে শোষিত হবে ও ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।
কাঁচা আমলকির রস বার করে খেলে তা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তবে কেনা আমলকির রস বা প্রক্রিয়াজাত নয়, কাঁচা আমলকি পিষে রস বার করে খেতে হবে। তার সঙ্গে আরও কয়েকটি উপকরণ মিশিয়ে নিলে ভাল।
কী ভাবে আমলকির রস বানাবেন?
১-২টি তাজা আমলকি বীজ ছাড়িয়ে ভাল ভাবে পিষে রস বের করুন। আধ গ্লাস পরিমাণ ঈষদুষ্ণ জল নিয়ে তাতে রস মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে মেশান এক চিমটে হলুদগুঁড়ো, এক চিমটে দারচিনির গুঁড়ো। সকালে খালি পেটে এই রস খেলে রক্তে শর্করা বাড়তে পারবে না।
আমলকি ও মেথির মিশ্রণ
১ চামচ আমলকির গুঁড়ো, ১ চামচ মেথি বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। বাড়িতেই আমলকি শুকিয়ে তা পিষে গুঁড়ো করে নেবেন। একই ভাবে মেথির গুঁড়ো বানিয়ে নিতে হবে। এর পর এক গ্লাস জলে আমলকি ও মেথির গুঁড়ো ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালে খালি পেটে এই জল পান করলে সুগার তো কমবেই, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলও কমতে শুরু করবে।
আমলকির চা
শুকনো আমলকির টুকরো বা তাজা আমলকি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। দু’কাপ জলে এই আমলকির টুকরোগুলো দিয়ে ফোটান। এতে সামান্য পরিমাণে দারচিনির গুঁড়ো মেশান। ফুটে গেলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। সকালে চায়ের বদলে এই পানীয় পান করলে নানা রকম অসুখবিসুখের ঝুঁকি কমবে।
কাঁচা আমলকির চাটনি
৩-৪টি তাজা আমলকির বীজ ছাড়িয়ে নিন। ছোট এক টুকরো আদা, আধ কাপ ধনেপাতা, সামান্য বিটনুন ও অল্প জল দিয়ে আমলকি বেটে নিন। তেল বা চিনি ব্যবহার করা যাবে না। দুপুরের খাওয়ার পাতে ১ থেকে ২ চামচ করে খেতে পারেন। এতেও উপকার হবে। খাওয়ার পরে রক্তে শর্করা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারবে না।